ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ আবশ্যক’

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ আবশ্যক’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

রোববার রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে স্থানীয় পুঁজিবাজার অবকাঠামো অর্থায়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান গ্যারান্টকো যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা যেকোনো ধরনের অর্থায়নের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। কিন্তু এটা আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হইনি যে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক যথোপযুক্ত উৎস নয়। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অতীতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেগুলো সফল্য নিয়ে আসতে পারেনি।

পুঁজিবাজারে শক্তিশালী ও কার্যকর বন্ড মার্কেট চালুর ওপর গুরুত্ব দিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, এর মাধ্যমে অবকাঠামো খাতের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, এই কনফারেন্সে থেকে পাওয়া সুপারিশমালা একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা রাখি। পুঁজিবাজারের সূচকের উঠা-নামা স্বাভাবিক একটি ধর্ম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারকে সচেতন থাকতে হবে। আর গতিশীল বন্ড মার্কেট বিকাশের জন্য আমাদের পুঁজিবাজারকে অবশ্যই কার্যকর রাখতে হবে। বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। আমাদের বেসরকারি খাতকে এ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সবার কাছে উদাহরণ। এ দেশ এখন দ্রুততম সময়ে বিকাশমান অর্থনীতির পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্যতম। এই ধারা বজায় রেখে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। উন্নতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে বাংলাদেশের আধুনিক সময়ের ইকোনমিক পাওয়ারহাউজে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা আছে। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।

ডিসিসিআইর সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের বিষয়গুলো অনেকটাই বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এডিপি) তথা সরকারি খাতের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্যে যেতে হলে প্রয়োজন অবকাঠামোর সময়োপযোগী উন্নয়ন। এ কারণেই বেসরকারি খাতকে অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে যথার্থভাবে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

ওসামা তাসীর বলেন, ঢাকা চেম্বার মনে করে, ২০৩০ সালের মধ্যে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য এ খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় বাজেটের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বেসরকারিখাতকে অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য ব্যাংক খাত যথোপযুক্ত উৎস নয়। বরং পুঁজিবাজার, বন্ড মার্কেট, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড এবং পেনশন ফান্ডের মতো বিবিধ উৎস এ ক্ষেত্রে মুখ্য চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এবং সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করা প্রয়োজন যাতে করে সকলের সমন্বয়ে অবকাঠামো খাতের অর্থায়ন সহজে করা যায়। এ বিষয়ে এই আন্তর্জাতিক সেমিনারটি থেকে অভিনব এবং সময়োপযোগী চিন্তা এবং পথ নির্দেশিত হবে।

প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু বেইনব্রিজ বলেন, পরিণত এবং উন্নত বাজারে পুঁজিবাজার, বিশেষ করে বন্ড মার্কেট বিষয়টি অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়নের অন্যতম উৎস। গ্যারান্টকো বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের বিষয়ে নজির স্থাপনকারী গবেষণা ও কাজের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের জন্য একে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পারবে।

গ্যারান্টকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লাসিথা পেরেরা সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যেকোনো দেশের জন্য একটি টেকসই এবং যথাযথ অবকাঠামো থেকে উপকৃত হওয়ার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেই অবকাঠামোর জন্য অর্থায়নটিও যেন যথাযথ হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গত কয়েক দশকে অগ্রগামী পুঁজিবাজারগুলোর উন্নয়নের জন্য সহায়তার কাজে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ও পরিসরের উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীরর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে অবকাঠামোর অর্থায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এই বন্ড স্টাডির মাধ্যমে এক উন্নয়নের যাত্রায় প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হলো। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিনিয়োগকারী এবং স্পন্সরগণ গ্যারান্টকোর সাথে যৌথভাবে কাজের মাধ্যমে এই দেশের পুঁজিবাজারের প্রকৃত সক্ষমতা বুঝতে এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য যথার্থতা নিরুপণ করবেন বলে আশা রাখা যায়।

সম্মেলনে উন্মোচিত বাংলাদেশ বন্ড মার্কেট-বিষয়ক রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রয়োজন। পানি, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, নদীবন্দর, বিমানবন্দর, রেল ও সড়কপথের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এ অর্থ প্রয়োজন। যদিও বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে এই প্রয়োজনীয় অর্থের মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবস্থা করা যাবে। বাকি ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফ্যাসিলিটির (টিএএফ) অর্থায়নে সম্পাদিত বন্ড স্টাডি অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য বন্ড মার্কেটের করণীয় বিষয়গুলো তুলে আনবে। একই সাথে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য এই গবেষণা যথাযথ দিকনির্দেশনা তুলে ধরবে।

সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, ডিসিসিআইর সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী ও ইমরান আহমেদ, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, প্রাক্তন সভাপতিবৃন্দ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৯/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়