ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বৈচিত্র্য নিয়ে আসুক জামদানি

শাহনেওয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ২০ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৈচিত্র্য নিয়ে আসুক জামদানি

জামদানি বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস্ অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) জামদানিকে জিআই নিবন্ধন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে সর্বপ্রথম জিআই পণ্যের মর্যাদা পেল জামদানি। এটা অবশ্যই আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন।

 

জামদানি শিল্প বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা আমাদের ঐতিহ্য ও অহংকার। বুনন শৈলীর কারণেই জামদানি হয়ে উঠেছে অনন্য। এ শাড়ির কারিগর বা তাঁতিরা একটা বিশেষত্ব বহন করেন। সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকায় তৈরি হয় জামদানি। এই শাড়ি বোনার কৌশল ও শিক্ষা এখানকার তাতিরা বংশ পরম্পরায় পেয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের আর কোথাও জামদানির তাতি পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জামদানি শাড়ি বুননের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। জামদানির বর্ষীয়ান কারিগররা বলে থাকেন, পৃথিবীর আর কোথাও তাঁতিদের পক্ষে এই কাপড় বোনা সম্ভব নয়। কেননা, এর যা বুনন কৌশল তা যদি তারা শিখেও যান তবুও সফল হতে পারবেন না এই কারণে যে, জামদানি কারিগরের মানসের প্রকাশ তারা ঘটাতে সক্ষম হবেন না। এটা বুননশিল্পের সম্পূর্ণ আলাদা একটা মাধ্যম যেখানে এর কারিগর কেবল তাঁতিই নন, একজন শিল্পী।

 

সুতরাং যে কোন বিবেচনায় জামদানি বাংলাদেশের সম্পদ, বাংলাদেশের ঐতিহ্য। কোনো পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে একটি দেশের বিশেষ এলাকার মাটি ও পানি এবং সেই এলাকার জনগোষ্ঠীর বিশেষ অংশের নিজস্ব শৈল্পিক উপস্থাপনা যদি মুখ্য হয়, তাহলে সেই পণ্যকে সেই দেশের ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো পণ্যটি ওই এলাকা ছাড়া আর কোথাও তৈরি করা সম্ভব নয়।

 

অনেক দেরিতে হলেও জামদানি বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে- এটা খুশীর কথা। এই কাপড় শুধুই বাংলাদেশের, একেবারে নিজস্ব। জামদানি বুনন অসাধারণ একটি শিল্প। কারিগরের মেধা, সৃজনশীলতা, আন্তরিকতা, ধৈর্য ও শ্রমই হচ্ছে জামদানি শিল্পের আসল পুঁজি। দিন বদলের সাথে সাথে এর কারিগরের সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু জামদানিকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে। আর এর জন্য নিতে হবে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা। যাতে জামদানি নিজের চেহারায় নিয়ে আসে আরো বৈচিত্র্য, বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সক্ষম হয় বিশ্ববাসীর কাছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়