ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ব্লু হোয়েল : গেম নয়, নীরবঘাতক!

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্লু হোয়েল : গেম নয়, নীরবঘাতক!

মাকসুদুর রহমান : অলস সময় পার কিংবা মানসিক প্রশান্তির জন্য মোবাইল-কম্পিউটারে কিশোর-কিশোরীরা নানা ধরনের গেম খেলে থাকে। কিন্তু এই বিনোদনে বাদ সেধেছে ব্লু হোয়েল গেম। আতঙ্কের নতুন নাম হয়ে দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে এক ছাত্রীর আত্মহত্যার পর এ গেমের সংশ্লিষ্টতায় তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা। গেমে আসক্তদের রক্ষা করতে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ওই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ব্লু হোয়েল গেম খেলার কারণে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। তখন থেকেই ব্লু হোয়েল গেম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকেও এ ব্যাপারে ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তুলে ধরা হয় এর ভয়াবহতা। এরপরই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দারা কাজ শুরু করেছে বলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার প্রধান মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।

শুক্রবার তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আসলে এটি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপার। এজন্য গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। ওই গেম কী, এর কুফল- এসব নানা বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই ছাত্রীর আত্মহত্যার পেছনে গেমটি কীভাবে প্রভাব ফেলেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

রাইজিংবিডির প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘এই গেমে আসক্ত হয়ে কেউ মারা গেছে এমন সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তারপরও গেম খেলার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’

তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্লু হোয়েল এমন একটি অনলাইন গেম, যা ইন্টারেনেটে প্রকাশ্য কোনো ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ স্টোরে থাকে না। কারও কাছ থেকে পাওয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানা (লিংক) থেকে গেমটি নামিয়ে (ডাউনলোড) নিয়ে খেলতে হয়। তবে বাংলাদেশে কোনো নেটওয়ার্কে এখনো ব্লু হোয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শিক্ষক রাসেল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন,  ‘কারিগরিভাবে এই গেম বন্ধ করার কিছু নেই। সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। একই সঙ্গে এ গেম যেন কিশোর-কিশোরীরা খেলতে না পারে সেজন্য  অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে গেম খেলা খেলা বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। আর যারা এই গেমে আসক্ত তারা হাত কেটে তিমি মাছের আকৃতি করে। এরপরই সে গেমটি খেলার অনুমতি পায়।

শুক্রবার ইন্টারনেট সেবাদাতা সংগঠন সভাপতি মো. আমিনুল হাকিম বলেন, ‘বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপ স্টোরে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। একই সঙ্গে সহজেই কেউ যেন এ গেমে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারেও সাধ্যমতো চেষ্টা চলছে।’

বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম বলেছেন,  ‘বিটিআরসি থেকে ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কিত কোনো  বার্তা প্রকাশ বা প্রচার করা হয়নি। বিটিআরসির নাম ব্যবহার করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। আর ব্লু হোয়েল আসলেই কীভাবে প্রবেশ করছে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি।’

উল্লেখ্য, ২১ বছর বয়সী রুশ ছাত্র ফিলিপ বুদেইকিন ২০১৩ সালে প্রথম ব্লু হোয়েল গেমটি তৈরি করেন। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল মনোবিজ্ঞান। এই গেম ২০১৬ সাল থেকে ছড়াতে থাকে। তবে এমন মরণঘাতী গেম এই প্রথম নয়; এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্রেনজার মেন নামের একটি উইন্ডোজভিত্তিক গেম তৈরি করা হয়েছিল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ অক্টোবর ২০১৭/মাকসুদ/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়