ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বড়দিনের পেছনের গল্প

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বড়দিনের পেছনের গল্প

প্রতীকী ছবি

মোখলেছুর রহমান : আজ ২৫ ডিসেম্বর, খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালিত হয় বড়দিন বা ক্রিসমাস হিসেবে। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা দিনটিকে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে পালন করে থাকেন।

কিন্তু কবে সৃত্রপাত হলো এই বড়দিনের? কেনইবা ২৫ ডিসেম্বরই এই দিনটি পালন করা হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ক্রিসমাস মানেই অনেক অনেক উপহার এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক বেশি আনন্দ কিন্তু এর প্রাচীনতম গল্পও রয়েছে।

অনেকেই দিনটির প্রথাগত কাহিনি নিয়ে এসেছেন, এর মধ্যে আপনি একটি জানেন যে, ক্রিসমাসের দিনে যিশু একটি গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, মেষপালক এবং তিনজন জ্ঞানী মানুষ তাকে পরিদর্শনের আগে। ক্রিসমাস বলতে সারা বিশ্বে এই দৃশ্যগুলোই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ওইদিন কি ঘটেছিল? ক্রিসমাসের এই প্রচলিত কাহিনিটি কি আদৌ সত্য?

বিশেষজ্ঞরা, এমনকি গসপেল অব মেথু এবং বাইবেলের মধ্যে লুক কিন্তু ভিন্ন গল্পের দিকেই ইঙ্গিত করে।

এই গল্পের উৎপত্তি কোথায়?

ক্রিসমাসের অনেক গল্পই বাইবেলের মধ্যে রয়েছে। গসপেল অব মেথুতে তিন জ্ঞানী ব্যক্তি এবং বেথলেহেম তারকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, অন্যদিকে গসপেল অব লুকে ‍শিশু যিশুকে গোয়ালঘরে মেষপালকদের পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছে, কারণ সেসময় সকল সরাইখানা পূর্ণ ছিল।

আমরা সকলেই এই কাহিনি জানি যে, একদিন এক স্বর্গদূতের কাছ থেকে মেরি জানতে পারেন, মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে তার গর্ভে আসছেন ঈশ্বরের পুত্র। এর অল্প কিছুদিন পরেই একটি আদমশুমারির ঘোষণা দেয়া হয়। রাজা হেরোদ চাচ্ছিলেন প্রত্যেকেই তাদের নিজ গ্রাম পরিভ্রমণ করুক যেন গণনা করতে সুবিধা হয়। যোসেফ তার বাগদত্তা মেরিকে নিয়ে তখন বেথেলহেমে রওনা দেন। যখন তারা শহরে পৌঁছায় তখন তাদের থাকার মতো কোনো খালি জায়গা ছিল না। এক গৃহপালক মেরির প্রতি মমতা অনুভব করেন এবং মরিয়মকে সন্তান জন্ম দেয়ার মতো একটি গোয়ালঘরের ব্যবস্থা করে দেন।

এই গল্পের ঐতিহ্যবাহী চিত্রটি হল মেষপালক, গরু, গাধা এবং তিনজন জ্ঞানী পুরুষ ঘিরে থাকা শিশু যিশু। কিন্তু পোপ বেনেডিক্ট ষষ্ঠ দাবি করেন যে, এই ছবিতে সামান্যই সত্য আছে। তার মতে, অন্ততপক্ষে প্রাণীগুলো সেখানে ছিল না। গরু এবং গাধার উপস্থিতির বিষয়টি আসে শুরুর দিকের খ্রিস্টানদের মন্তব্য থেকে যে, এমনকি পশুরাও ঈশ্বরের পুত্রকে স্বীকার করে নিয়েছিল।

কখন তারকা দেখা গিয়েছিল?

ম্যাথুতে বলা হয়েছে, জ্ঞানী লোকরা একটি উজ্জ্বল আলো দেখেছিল এবং সেটিকে অনুসরণ করেই যিশুকে খুঁজে পেয়েছিল। একটি তত্ত্বমতে, সেটি ছিল একটি নোভা বা একটি সাদা বামন তারকার বিস্ফোরণ, যা পঞ্চম খ্রিষ্টপূর্বে চীনা জ্যোতিষীদের দ্বারা আবিষ্কার করা হয়েছিল।

অন্য আরেকটি তত্ত্বমতে, সেটি ছিল বৃহস্পতি গ্রহ, যা তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বে সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী মে মাস পর্যন্ত পশ্চিম আকাশে যেতে দেখা গিয়েছিল।

লস অ্যাঞ্জেলসের গ্রিফিথ অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন মোসলের তত্ত্বমতে, তারকারটি ছিল আসলে বৃহস্পতি গ্রহ এবং শুক্র গ্রহ গ্রহণকারী। এটি দ্বিতীয় খ্রিষ্ট পূর্বের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, পারস্যে থেকে দেখা গিয়েছিল যে, জেরুসালেমের দিক থেকে দুইটি গ্রহ একক চিত্তাকর্ষক বস্তুর মধ্যে মিলিত হচ্ছে।

তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি কারা ছিলেন?

ম্যাথু এর মতে, তারা পূর্ব দিক থেকে এসেছিলেন। তিনি তাদেরকে ‘মাগি’ (জ্ঞানী ব্যক্তি) বলে অভিহিত করেন, যা হল একটি শব্দ যা জোরেস্টেরিয়ানিজমের যাজকত্বের বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি একেশ্বরবাদী পারস্য ধর্ম যা নক্ষত্রগুলোর মধ্যে নির্দেশনা খোঁজে। ধারণা করা হয়, তারা তিনজন ছিলেন এবং অনেক পরে তাদেরকে রাজা হিসেবে নিশ্চিত করা হয়। যখন চিহ্নিত করা হয় যে, তারা ছিলেন বালতেজার, মেলকিওর এবং ক্যাসপার- যথাক্রমে আরব, পারস্য এবং ভারতের রাজা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা কাহিনিতে যুক্ত হয়েছে বোঝানোর জন্য যে, খ্রিস্টধর্মালম্বীরা ঈশ্বরের সৃষ্ট সকল মানুষের দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে একটি অস্টম শতাব্দীতে লেখা হয়েছে, যা মাগির ঘটনাগুলোর নিজস্ব সংস্করণ বলে দাবি করা হয়। এক ডজনেরও বেশি ধর্মীয় পরিভ্রমণের কাহিনি রয়েছে।

তারা কি সঙ্গে সঙ্গে পরিদর্শন করেছিল?

না। বাইবেলে উল্লেখ আছে, যখন তারা সেখানে পৌঁছায়, তখন তিনি (যিশু) ছিলেন একজন ‘পরিণত শিশু’। অনেকের মতে, ততদিনে সম্ভব অন্তত একটি বছর কেটে গিয়েছিল। এজন্যই খ্রিস্টানরা যিশুর জন্ম উৎসব দিনটিকে ছাড়াও জানুয়ারির ৬ তারিখকে আলাদাভাবে ‘এপিফানি’ দিবস অর্থাৎ জ্ঞানী ব্যক্তির আগমন দিন হিসেবে উদযাপন করে থাকে।

যিশু আসলে কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

গসপাল অব লুকে, স্থানটিকে গোয়ালঘর হিসেবে বর্ননা করা হয়েছে, কারণ বেথেলেহেমের যে ‘সরাইখানায়’ তারা যেখানে অবস্থান করছিল সেখানে থাকার মতো কোনো স্থান ছিল না।। কিন্তু ‘সরাইখানা’ শব্দটি বিভ্রান্তিকর, প্রকৃতপক্ষে এটি ‘অতিরক্ত রুম’ এর গ্রিক শব্দ।

যখন আপনি মনে করেন যে, বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতেই প্রাণী ছিল, কোনো আলাদা ভবনে না, তখন এটা অসম্ভাব্য যে, যিশু গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

যিশু সম্ভবত তাদেরকে আশ্রয় দেয়া ওই দরিদ্র বাড়ির বাসকারীর প্রধান কক্ষেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

কখন যিশু খ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

এটি ২০১৭ বছর আগের ঘটনা নয় বা ২৫ ডিসেম্বরেও জন্মগ্রহণ করেননি। ম্যাথুর মতে, রাজা হেরোদ এর রাজত্বের চূড়ান্ত বছরে যিশু জন্মগ্রহণ করেন। রাজা হেরোদ চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বে মারা যান। যিশু সম্ভবত তার দুই বছর আগেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি পঞ্চম বা ষষ্ট খ্রিস্টপূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

২৫ ডিসেম্বরকে কেন বড়দিন হিসেবে নির্বাচিত করা হয়?

রোমান ক্যাথলিক চার্চ চতুর্থ শতাব্দীতে তারিখটি বেছে নিয়েছিল। কারণ এটি ইতিমধ্যেই একটি পৌত্তলিক উৎসব দিন ছিল। যিশুর জন্মের প্রকৃত তারিখ জানার জন্য আমাদেরকে বেথেলহেমের তারকা কখন আবির্ভূত হয়েছিল তা জানতে হবে।

তথ্যসূত্র: ডেইলি মিরর



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়