ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র তীরের মানুষ

সেলিম আব্বাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৭ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র তীরের মানুষ

জামালপুর সংবাদদাতা: ভাঙছে জামালপুর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র। শহরের হরিপুর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার জুড়েই এই ভয়াবহ ভাঙনে ব্রহ্মপুত্র’র গহ্বরে বিলীণ ১৫টি বসতবাড়িসহ অসংখ্য গাছপালা।

স্থানীয়রা জানান, ব্রহ্মপুত্র’র এই ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ভাঙন আতঙ্কে নদের তীরের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

স্তানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র হওয়ার কারণ। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দাবি, এখনই ড্রেজার বন্ধ করে ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

সরেজমিনে হরিপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র তীরে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ঘুর্ণিস্রোতে এক কিলোমিটার জুড়েই ভাঙন এখন তীব্র। গত কয়েকদিনে হাশেম আলী, আজিজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, মোফাজ্জল, মোন্তাজ আলী ও রহিজল মিয়াসহ ১৫ জন তাদের বসতবাড়ি হারিয়েছেন। অনেকেই অন্যের বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। ভাঙন আতঙ্কে গাছপালা কেটে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তারা।

ভাঙনের শিকার হরিপুর গ্রামের রেনু বেগম (৬৫) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, তার স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। ভিক্ষা করে কোনমতে জীবন চালান। দুইদিন আগে তাদের একমাত্র ছাপড়া ঘরটি হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে গাছের নিচে অসুস্থ্ স্বামীসহ ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত কাটাইতেছি। এখন কি করমু ? চোখেমুখে অন্ধকার দেখতেছি।’

এই গ্রামের রিকশাচালক রহেজ আলী (৫০) বলেন, ‘আশা সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়ে দুই শতাংশ জমি কিনে টিনের দু’চালা ঘর তুলেছিলাম। জমিসহ ঘরটি চলে গেছে। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন জমি কিনে ঘর বানামো কিভাবে, লোন পরিশোধ করমু কি দিয়ে- এ নিয়ে চিন্তায় আছি। সরকার আমগো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না নিলে খোলা আকাশের নিচেই দিন কাটাইতে হবো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীদের কয়েকজন জানান, লিটনসহ প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ছনকান্দা থেকে হরিপুর পর্যন্ত নদের পাড়ে ২০/২৫টি ড্রেজার বসিয়ে ইচ্ছেমতো বালু উত্তোলন করেই চলেছে। আর পানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা।

স্থানীয় কাউন্সিলর ফজলুল হক জানান, যেভাবে নদী ভাঙছে, দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে যেকোন মুহূর্তে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কটিও বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘নদীর গতি প্রবাহ ডান দিকে মোড় নিয়েছে। শুস্ক মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতনমহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’

জামালপুর বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হবিবুর রহমান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ড্রেজারে প্রভাব পড়েনি, প্রকৃতিকভাবে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।’

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেন, ‘একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ করলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।’

সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।




রাইজিংবিডি/জামালপুর/১৭ জুলাই ২০১৮/সেলিম আব্বাস/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়