ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের অতীত-বর্তমান : পর্ব-১

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের অতীত-বর্তমান : পর্ব-১

(সম্প্রতি ভারতে মাওবাদী বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ২৬ সদস্য নিহত হয়েছেন। মাঝেমধ্যে এ ধরনের হামলায় প্রাণ দিতে হচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের। যাদের কারণে এ রক্তপাত, প্রাণহানি ও সংঘাত হচ্ছে, সেই মাওবাদী আন্দোলনের অতীত-বর্তমান নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হলো। আলজাজিরা অবলম্বনে ভাষান্তর করেছেন রাসেল পারভেজ।)

ভারতে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয় ১৯২০-এর দশকে। তখন এ আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল ভারতবর্ষ থেকে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ উপনিবেশের উৎখাত।

সব ধরনের মত-পথের রাজনৈতিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালে ভারত ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। স্বাধীন হয় ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু স্বাধীনতার পর ব্রিটিশবিরোধী সেই মাওবাদী আন্দোলনের আবার গোড়াপত্তন হয় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ। তখন থেকে হামলা­-পাল্টাহামলা ও অভিযানে প্রাণ নেওয়া-দেওয়ার বীভৎসতায় মেতে আছে সেদেশের সরকার ও মাওবাদীরা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রাম নকশালবাড়িতে ১৯৬৭ সালে প্রথম সরকারবিরোধী সশস্ত্র উত্থান হয়। এক কৃষককে তার নিজের জমি চাষ করতে না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সশস্ত্র উত্থানের শুরু হয়। টানা ৭২ দিনের সহিংসতা ও সংঘর্ষ শেষে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সেই উত্থান দমনে সক্ষম হয়।

১৯৬৭ সালের ওই ঘটনা-ই অন্য বিদ্রোহীদের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন স্থানে হামলা-হাঙ্গামা ও বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। তখন ভারত সরকার এ মুভমেন্টকে ‘বামপন্থি উগ্রতাবাদ’ হিসেবে অভিহিত করে। তবে নকলাশবাড়ি গ্রামের সেই উত্থানের সঙ্গে মিল রেখে এ মুভমেন্ট ‘নকশালবাদী’ আন্দোলন হিসেবে জনগণের কাছে বেশি পরিচিত পায়। সেখান থেকেই মূলত নকশালবাদ শব্দটির উৎপত্তি এবং সেই থেকে মাওবাদীদের নকাশবাদীও বলা হয়। তবে ১৯৭২ সাল নাগাদ ভারত সরকার এই আন্দোলন কঠোর হাতে দমনে সাময়িকভাবে সফল হয়।

এরপর ১৯৯০-এর দশকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণের অংশ হিসেবে ভারত সরকার খনিগুলো বেসরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে থাকায় পরের প্রায় দুই দশক সশস্ত্র আন্দোলন অনেকটা কোনঠাঁসা হয়ে পড়ে এবং গ্রামাঞ্চলে গা ঢাকা দেয় নকশালবাদীরা।

মাওবাদী আন্দোলনের প্রধান গোষ্ঠীগুলো ও তাদের কাজ

এ ধারার আন্দোলনের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে ‘দি পিপল’স ওয়ার গ্রুপ’ (পিডব্লিউজি)- এর কথা। আরেকটি হলো ‘মাওইস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার’ (এমসিসি)। এমসিসি বিহারে আর পিওয়াইজ অন্ধপ্রদেশে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করে।

১৯৯২ সালে ‘কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট-জনশক্তি’ নামে মাওবাদী আদর্শের একটি দলের গোড়া পত্তন হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম আছে। এ দলে ২৫০ থেকে ৩০০ ক্যাডার আছে, যারা দলের জন্য সক্রিয় হয়ে কাজ করেন।

বর্তমানে যে মাওবাদী বিদ্রোহ দেখা যাচ্ছে ভারতে, এ ধারা শুরু হয় ২০০৪ সালে। ওই বছর পিডব্লিউজি ও এমসিসি একত্র হয়ে গঠিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী) অথবা সিপিআই (মাওবাদী) নামে একটি নতুন দলের। এই দলটি ভারতে নিষিদ্ধ।

সিপিআই (মাওবাদী) গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে গঠিত হয় ‘তৃতীয় প্রস্তুতি কমিটি’ নামে আরেকটি দল। ঝাড়খণ্ড ভিত্তিক এই সংগঠনের প্রায় ৫০০ সক্রিয় ক্যাডার রয়েছে। উল্লেখ্য, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য।

সিপিআই (মাওবাদী) জনযুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে চায়। চীনের বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের আদর্শে এই দলের বিদ্রোহী যোদ্ধাদের কৌশল অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে থাকে।

এই দলের ভাষ্যমতে, ‘দীর্ঘ লড়াইয়ের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বেনিয়া আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের উৎখাত করে ভারতে নতুন গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানোই এ দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য... ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই তাদের শেষ লক্ষ্য।’

(দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব পড়ুন রোববার)

লেখক : সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ এপ্রিল ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়