ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী

জ্যোতি বসু

শাহ মতিন টিপু : জ্যোতি বসু ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ২৪ বছর জ্যোতিবসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বারবার নির্বাচনে তার দল বিজয়ী হয়েছিল। এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব। ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রীত্ব করার পর তিনি ঐ দায়িত্বটি তুলে দেন তারই দলের কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যর হাতে।

২০০১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যপদ ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভার সঙ্গে বসুর ৫৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। বিধানসভায় বসুর শেষ বার্তা ছিল ‘প্রশংসা বিষবৎ, নিন্দা অমৃতসমান’। 

কমিউনিস্ট নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি ৯৫ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।

বাংলাদেশের প্রতি জ্যোতি বসুর দুর্বলতা ছিল সবসময়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন বিষয়ে আলোচনা করতে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন।, যদিও তিনি কেন্দ্রীয় সরকারে ছিলেন না। তখনি লক্ষ্য করা গেছে যে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা করার ব্যাপারে তার ছিল আন্তরিক প্রচেষ্টা। সম্ভবতঃ নাড়ির টানে তার এই বিশেষ দুর্বলতা ছিল।

ভারতীয় রাজনীতির এই কিংবদন্তীর শৈশব কেটেছে বাংলাদেশে। তার পৈতৃক ভিটা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদীতে। এখানে তাকে স্মরণে রেখে বাংলাদেশ সরকার গড়ে তুলেছে জ্যোতি বসু মেমোরিয়াল লাইব্রেরি।

২০১০ সালে জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তার স্মৃতি ধরে রাখতে সে সময় বারদীতে একটি গ্রন্থাগার করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরে গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজ শুরু করে। ভবনের প্রথম তলায় পাঠাগার কক্ষ, মহাফেজখানা ও শৌচাগার। দ্বিতীয় তলায় করা হয়েছে জাদুঘর ও সেমিনার হল। ২০১৩ সালের ১৪ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যোতি বসু স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘরের আনুষ্ঠনিক উদ্বোধন করেন।

বাল্যকালে জ্যোতি বসু অনেক দিন এ গ্রামে কাটিয়েছেন। ১৯৮৭ সালের ৩০ জানুয়ারি এবং সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি পৈতৃক বাড়িতে আসেন। এক শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। ডাকনাম ছিল গনা। পিতা নিশিকান্ত ছিলেন এক প্রথিতযশা ডাক্তার এবং মা হেমলতা ছিলেন এক গৃহবধূ।

তিনি লেখাপড়া করেছেন কলকাতার অভিজাত স্কুল ও কলেজে। ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স নিয়ে বিএ পাশ করেছেন প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে। কোলকাতার পড়াশোনা শেষে তিনি লন্ডন যান ব্যরিস্টারি পড়তে। ব্যরিস্টার হয়ে তিনি দেশে ফিরে এলেন, কিন্তু ব্যরিস্টারি করলেন না।  হলেন কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষনিক কর্মী। কমরেড মোজাফফর আহমদ তাকে কমিউনিস্ট হিসাবে কাজ করার পথ দেখালেন।

একবার জ্যোতি বসুর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার কথা উঠেছিল। ভারতের লোকসভায় সিপিআই (এম) এর সদস্যসংখ্যা ছিল বেশ নগণ্য। তারপরও অধিকাংশ দল তাকেই প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। এটা খুব সাধারণ ব্যাপার নয়। অর্থাৎ সর্বভারতীয় পর্যায়েও তিনি ছিলেন জনগণের আস্থাভাজন নেতা। তার পার্টি সিপিআই (এম) এই প্রস্তাবে রাজী হয়নি। তিনি পার্টি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে এমন লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন।

২০০৫ সালের ২৩ জুলাই বাথরুমে পড়ে গিয়ে আহত হন বর্ষীয়ান এই নেতা। ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি  বার্ধক্যের কারণে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি চান। কিন্তু তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়। ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর আবার বাড়িতে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান তিনি। ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে ও মাথায় আঘাত পান বসু। ১২ নভেম্বর আবার বাড়িতে পড়ে গিয়ে আহত হন। ২০০৯ সালের ১৩ মে বাথরুমে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ে আঘাত পান বসু। জুন মাসে নির্বাচনী সাফল্যের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ১২ জুলাই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন।  সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। সতের দিনের দীর্ঘ অসুস্থতার পর ১৭ জানুয়ারি জ্যোতি বসুর জীবনাবসান হয়। মরণেও পরেও তিনি মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন। তার দেহের সৎকার হয়নি। তিনি তার চোখ দান করে গেছেন। মরদেহ দিয়ে গেছেন মেডিক্যাল কলেজের গবেষণায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়