ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভালবেসে মানুষের পাশে থাকার স্বপ্ন দেখি : তালুকদার খালেক

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ৯ মে ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
ভালবেসে মানুষের পাশে থাকার স্বপ্ন দেখি : তালুকদার খালেক

চার বছরের জন্য খুলনার নগর পিতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক। দেখতে দেখতে আবারও মেয়র নির্বাচন দোরগোড়ায়। আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থী তিনি। নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে খোলামেলা কথা হয় তাঁর। সঙ্গে ছিলেন মিলটন আহমেদ। পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো-

 

প্রশ্নঃ সাভারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল এই  কয়েকদিন আগে । এখনো উদ্ধার কাজ চলছে। লাশের সংখ্যা বাড়ছে। এ ঘটনাটিকে কীভাবে দেখছেন আপনি ?

উত্তরঃ আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা এটি। আবার এটাও বলবো যে, ওটা একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড। এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে যা শুনেছি যা টেলিভিশনে দেখছি, তাতে আমি মনে করি এটা হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।  মৃত এবং আহতদের উদ্ধারদৃশ্য দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি । আমি ভেবে পাইনা গার্মেন্টস মালিকদের মানসিকতা এত নিষ্ঠুর হয় কীভাবে?  তারা কীভাবে এত লোভী হতে পারে। স্বল্প বেতনের এসব মানুষদের জোর করে ভবনে ঢুকিয়ে কাজে বাধ্য করানো বড় অপরাধ। ভবন মালিকসহ গার্মেন্টস মালিকদের যথোপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত ।

প্রশ্নঃ সাভার বিপর্যয় বাদ দিলে হরতাল এখন আলোচিত ইস্যু। একটানা অনেকদিন হরতালে দেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। হরতাল সংস্কৃতি নিয়ে আপনার অভিমত কি ?

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক দেশে কথা বলার অধিকার সবারই আছে। রাজনৈতিক দল অবশ্যই হরতাল ডাকতে পারে। কিন্তু কিছু বলার থাকলে আগে সংসদে আসতে হবে। যা বলার ওখানে গিয়ে বলার সুযোগ রয়েছে। তা- না করে দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা। তাতে সমস্যার সমাধান হবে মনে  করি না। আমি একটা ব্যাপার বুঝিনা- যখন কেউ বিরোধী দল হয় তখনই তারা এমনই করে। তারা কেউই সংসদে যেতে চান না। সংসদে যদি ফয়সালা না হয় তখন অন্য বিষয় সামনে আসতে পারে। কিন্তু সেটা যদি হরতালও হয়, তবে তাও জনগণের চাহিদায় হতে হবে। দেশের কল্যাণে হরতাল হতেই পারে। বিএনপি যেটা করছে তা দেশবাসীর কাম্য নয়। দেশকে তারা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ এই হরতাল চায়না। সর্বস্তরের মানুষ আজ বিরক্ত তাদের কর্মকাণ্ডে।

প্রশ্নঃ বিরোধী দলগুলো বলছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনভাবেই  নির্বাচনে যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে তাদের আন্দোলন ক্রমেই হিংস্র হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন ?

উত্তরঃ আমরাও চাই অবাধ সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। আমরাও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। ওই সময় বিএনপি চেষ্টা করেছিল সব জায়গায় নিজেদের লোকবল সেট করে নিজেদের মত করে নির্বাচন করতে। কিন্তু আমরা সেটা করতে দেইনি। আপনি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভাবুন, সেই সরকার দুই বছর সময় নিয়েছিল নির্বাচন দিতে। ওই দুই বছরে সেই সরকার বিদেশের কাছে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে  ধ্বংস করেছিল। সেই সময়টাতে যা হয়েছে দেশে, তা এ দেশের জনগন দেখেছে। আমরা সেই ঘটনার পুণরাবৃত্তি কোনভাবেই চাই না।

প্রশ্নঃ আমরা দেখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২ মে হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, সরকারের আহবানে প্রধান বিরোধী দলের এই সাড়া আপনি কীভাবে দেখছেন?

উত্তরঃ এটা তিনি মানবিক দিক থেকেই করেছেন। সাভার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই একটা অন্যরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এখনো। বেগম খালেদা জিয়া তার কাজটি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এজন্য তাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

প্রশ্নঃ  অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেগম জিয়ার হরতাল তুলে নেয়ার এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এক প্রকার সম্মান দেখানো ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন হিসেবেও দেখছেন।  

উত্তরঃ হতে পারে। আর যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব এটা খুবই ভাল, দেশের জন্য মঙ্গল।

প্রশ্নঃ আপনি খুলনার মেয়র। খুলনার উন্নয়নে মেয়র হিসেবে আপনার ভুমিকা কতটুকু বলে মনে করেন?

উত্তরঃ ১৯৭৭ সাল থেকে আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি এলাকায়। যে লোক জনপ্রতিনিধি, সে বিরোধী দলীয় হোক বা সরকার দলীয় হোক উন্নয়নের কাজ করবেই। বিষয়টা হল- দেশের প্রতি ভালবাসা আর উন্নয়নের ইচ্ছা থাকলে উন্নয়ন থেমে থাকে না। আমি রামপাল এবং মংলায়  তিনবার এমপি ছিলাম। আমাকে সরকার যে গাড়িটা দিয়েছিল তাতে করে আমি ১৬ টি ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে দেখেছি। গত ৫ বছরে আমি বলব প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে আমার এলাকায়। আপনি যে কাউকেই জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন, যেসব রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী ছিল আগে সেগুলো চলাচলের উপযোগী করেছি, তারপর পিচ করেছি। খুলনায় এখন কোন রাস্তাই নাজেহাল অবস্থায় নেই। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এসব রাস্তার কাজ দেখেছি। কাজের জন্য যা দরকার অর্থাৎ সিমেন্ট, বালি, খোয়া, রডের গুণগতমান যাচাই করেছি। মহেস্বর পাশা নামে একটি এলাকা আছে সেখানে আমি ৫০০ লোককে টাকা দিয়েছি। এটা ছিল আমার দারিদ্র্য বিমোচনের একটি ইতিবাচক কর্মসূচি।  

প্রশ্নঃ  এলাকার উন্নয়নে কতটা সরকারি সহায়তা পেয়েছেন?

উত্তরঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে টাকা দিয়েছেন তার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা আমি রাস্তার কাজে ব্যবহার করছি । খুলনার বড় বড় রাস্তা যেমন খান জাহান আলি সড়ক, স্যার ইকবাল সড়ক, প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক এবং বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বাড়ীর সামনের মহাসড়কের কাজ এর টেণ্ডার করেছি। এও বলে দিয়েছি, কাজে যেন দেরি না করে। কারন সামনেই বর্ষা। তখন কাজের অনেক বড় ক্ষতি হবে। কাজের গুণগত মান আমি নিজে খতিয়ে দেখি। মানুষ তো এগুলো দেখছেন।

আপনি দেখেন, খুলনা স্টেডিয়ামকে ৫৭ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। গত ৫ বছরে খুলনার খেলাধুলার দিকে তাকান। এইযে আপনার পাশেই বসে আছে স্পোর্টস রিপোর্টার রুবেল সাহেব (আব্দুল্লাহ আল মামুন রুবেল, স্পোর্টস রিপোর্টার, সময়ের খবর, খুলনার আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা) উনাকে জিজ্ঞাসা করুন, খেলাধুলার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের কোন খেলার আয়োজন হতোই না। গত বছর এখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল এসেছিল। এই বছরের শুরুতে বিপিএল এর মত আসর হয়েছে। আগামীতেও হবে আরও আন্তর্জাতিকমানের খেলার আসর।

প্রশ্নঃ খুলনার শিক্ষাখাতের উন্নয়ন কেমন হয়েছে বলে মনে করেন?

উত্তরঃ শিক্ষাঙ্গনের কথা যদি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সরকার ৮৬ কোটি টাকা দিয়েছে। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এমন আরও আছে অনেক কিছু, বলে শেষ করা যাবে না। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে আমার সরকারের এবং মেয়র হিসেবে আমার সাফল্য কতোটা তার বিচারের ভার খুলনাবাসীর। আমি শুধু বলব আমি এলাকার রক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে ভাল থাকা, সবাইকে ভাল রাখার।

প্রশ্নঃ হেফাজতে ইসলামীর কার্যক্রম নিয়ে আপনার অভিমত কি?

উত্তরঃ আমি তাদের কার্যকলাপ মোটেও পছন্দ করিনা। আমাদের নবী করিম (সাঃ) কে নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করেছে তাদের বিচারের আগে নিজেদের লেখা বইগুলির সংশোধন করুক তারা। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য এটা তাদের একটা কৌশল। জনগন এখন অনেক সচেতন, এসব করে কোন লাভ হবেনা।

প্রশ্নঃ আগামী ১৫ জুন মেয়র নির্বাচন। এবারও আপনি প্রার্থী । নির্বাচনে আপনার প্রস্তুতি কতটুকু ?

উত্তরঃ  প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়া আমি মনেও করি আমার প্রস্তুতি ভাল। জনগন আমার পাশে আছে। আমি খুলনার বাইরে না থাকলে পুরোটা সময় আমি কাজ নিয়ে থাকি। আমি নিজে ঘুরে কাজ পরিদর্শন করি। ইঞ্জিনিয়ার, সাব ইঞ্জিনিয়ার থাকার পরেও আমি কাজ সুপারভাইজ করি। এটা আমার রুটিন। আমি গতকালও ১০০০ জন গরীব লোককে টাকা দিয়েছি। এই টাকা তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বাবদ দেয়া হয়েছে ।

গতকাল এই যে খুলনার জোড়াগেট প্রেমকানন নামে একটা জায়গা আছে ওখানে গিয়েছি। গিয়ে দেখলাম ওখানের রাস্তাটা ভাল না-তাই আমি গিয়ে বলে এসেছি ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে।

আমার বিশ্বাস আমার কর্ম আর সততাই আমাকে নির্বাচিত করতে যথেষ্ট। মানুষকে ভালবেসে রাজনিতী করছি, মানুষকে ভালবেসেই আজীবন তাদের পাশে থাকার স্বপ্ন দেখি আমি।

 

রাইজিংবিডি/৯ মে/এলএ/কেএস/এএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়