ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভূমি কর্মকর্তাদের এ কেমন ভূমিকা!

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভূমি কর্মকর্তাদের এ কেমন ভূমিকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রথম দফায় ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় টাকা না পেয়ে নিরীহ এক গৃহস্থের ব্যক্তিমালিকানা সম্পত্তির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামে বেদখলিয় সরকারি প্রধান সড়ক ও পাঁচটি রাস্তা/খাল উদ্ধার না করে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহলের ইশারায় গত ১২ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন আহমেদ এসবের প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যাত্রাপুর এলাকাধীন আরএস নকশা মোতাবেক গ্রামটিতে কমপক্ষে পাঁচটি খাল গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে ইছামতী নদীতে গিয়ে মিশেছে। ১৫ থেকে ২৫ ফুট প্রশস্ত খালগুলো শুকনো পড়ে থাকায় সরকার সেগুলো ভরাট করে সড়ক তৈরির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কারণে শুধু দুটি খালের কিয়দাংশ ভরাট করা সম্ভব হয়। বাকি সব জমি ঘরবাড়ি তুলে বেদখল রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যাত্রাপুর হাই স্কুল মাঠ থেকে লেবু মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত ২৫ ফুট প্রশস্ত প্রধান সড়কটি অর্ধেকের বেশি দখল হয়ে গেছে। আর এই অবৈধ দখলের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন এলাকার চিহ্নিত বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বলে পরিচিত মহর আলী এবং তার সহযোগী স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ ও যাত্রাপুর স্কুলের নৈশপ্রহরী ওমর ফারুক ফালু। এই চক্রটির হামলা-মামলা ও হয়রানির ভয়ে এলাকার নিরীহ লোকজন প্রাণভয়ে সন্ত্রস্ত থাকেন বলে জানা গেছে। তারা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অন্যের জমিতে পাকা স্থাপনাও নির্মাণ করছেন বলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে। নাশকতা মামলার আসামি মহর আলী সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে তারা জানান। উপরোক্ত চক্রটির সঙ্গে যোগসাজশে হরিরামপুর উপজেলার সার্ভেয়ার আইয়ুব আলী, রমজান আলী ও বয়ড়া ইউনিয়নের নায়েব মো. আইয়ূব কোনো নোটিশ না দিয়ে লোকজনের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালান।

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় আরেক ভুক্তভোগী সাবেক বিডিআর সদস্য রফিক দেওয়ানের সঙ্গে। উচ্চ আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞার কপি সাংবাদিকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার মহর আলীর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। অন্য লোকের জমি দখল করাই তার কাজ। এই দেখেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমার জমিতে সে বিল্ডিং বানাইতেছে। থানা-পুলিশের মুখও তারা টাকা দিয়া বন্ধ কইরা রাখছে।

স্থানীয় সুশীল সমাজের অভিযোগ, গ্রামের প্রধান সড়কে এত বেদখল থাকতে কেন গলির মধ্যে থাকা দু-একটি বাড়িকে বিনা নোটিশে টার্গেট করা হলো এবং ওই বাড়ির পরে নদী পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের কেন উচ্ছেদ করা হলো না।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, দিনেদুপুরে আমার বাড়ির আশপাশ তছনছ কইরা গেল ওরা। আমি নাকি অবৈধভাবে জায়গা দখল করছি। ওই লোকগুলাই আমারে ভয় দেখায়া কয়েক দিন আগে চাইর হাজার টাকা নিয়া গেছে। তাদের দাবিমতো এক লাখ টাকা দিতে না পারায় তারা আমার এই সর্বনাশ করল। অথচ যাগো কথায় তারা আইছে, তারাই গ্রামের মেইন রোডের সরকারি জমি দখল কইরা রাখছে।

আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, গ্রামের প্রধান সড়কসহ পাঁচটি রাস্তা/খাল উদ্ধার না করে শুধু আমাদের ব্যক্তিমালিকানার জায়গার ওপর কেন হামলা করা হলো? তারা ভয় দেখিয়ে টাকাও নিল, আবার ভাঙচুরও করল। এসবের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্যই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম ও পুলিশ সুপার রিফাত আহমেদ শামীম। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা জানান।

এসব বিষয়ে হরিরামপুর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘুষ নেওয়া ও চাওয়ার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি তারা (সালাউদ্দিন) সরকারি রাস্তা দখল করেছেন। তার ভিত্তিতে আমরা গিয়ে পরিমাপ করে নতুন সীমানা দিয়েছি।’

উচ্ছেদের কোনো নোটিশ আগে দেওয়া হয়েছে কি না, কিংবা উচ্ছেদ সংক্রান্ত নির্দেশের কপি ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিলেন কি না— এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তুষার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাত্রাপুর এলাকায় পাঁচ-ছয়টি সরকারি রাস্তা/খাল রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কতটুকু বেদখলে রয়েছে তা আমার জানা নাই।’ তবে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৮/এএস/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ