ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন নষ্ট করেছে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন নষ্ট করেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনটি তৈরি করা হয়েছে দুর্নীতি কমানোর জন্য, রাজনৈতিক হয়রানির জন্য নয়। রাজনৈতিক কারণে এ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার এই আইনটিকে নষ্ট করে গিয়েছে। তারা এই আইনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। অবৈধ সরকার যা করেছে, তার সবই অবৈধ। তাদের দায়ের করা সব মামলাও অবৈধ।’

মঙ্গলবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

ওয়ান ইলেভেনের স্মৃতিচারণ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ওই সময় আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। মধ্য রাতে চোখ বেঁধে আমাকে ওপরে নেওয়া হলো। সেনা কর্মকর্তা তাদের সেনাপতিকে রাষ্ট্রপতি বানাতে চায়। তারা আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছিল যে, কীভাবে তা করা যায়। তখন আমি বললাম যে, আপনারা (সেনা কর্মকর্তা) পারবেন না। তাহলে মার্শাল ল জারি করতে করতে হবে। তখন দুই নেত্রীকে কী করবেন? তখন তারা বলেছিল, দুই নেত্রীকে মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে বাতিল করে দিয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেব। এজন্যই বিষয়টি এ মামলায় এতো গুরুত্বপূর্ণ।

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে খালেদা জিয়া বকশীবাজারস্থ ওই বিশেষ জজ আদালতে উপস্থিত হন। এরপর বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠার পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন করে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

যুক্তিতর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হ্যারেস করা হয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে শুরু করে এদিকে আমরাও অনেকে জেল খেটেছি। এর সবই হলো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে নিঃশেষ করার জন্য, নিশ্চিহ্ন করার জন্য সরকারি দলের একটি পরিকল্পনা। তারই অংশ হিসেবে এই (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) মামলাটি আপনার (বিচারক) সামনে বিচারের জন্য এসেছে। এই মিথ্যা মামলায় আমার নেত্রীর (খালেদা জিয়া) কোনো ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না। বরং জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে। সি ইজ গোয়িং টু বি দ্য নেক্সট প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ (তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন)।

তিনি আরো বলেন, এই মামলাটা প্রথম দিনেই খারিজ করে দেওয়া উচিত ছিল। এখন পর্যন্ত যে এই মামলা চলছে এটাই আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। যে তিনটি কারণে মামলাটি খারিজ হওয়া উচিত ছিল তা হলো- প্রথমত, সরকারের উদ্দেশ্য এবং কাগজপত্র জালিয়াতি করে তারা মামলাটি দাঁড় করিয়েছে। তারা যেসব কাগজপত্র সৃজন করেছেন, তা সেকেন্ডারি এভিডেন্স হিসেবে আইনত গ্রহণ করা যায় না। কারণ, সেকেন্ডারি এভিডেন্স হিসেবে গ্রহণ করতে হলে পাঁচটি রিকুইজিশন লাগবে, যা এখানে নেই। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে যে মামলাটি করা হয়েছে, তা এ আইনে হতে পারে না। তা এই আইনের আওতায় পড়ে না। তৃতীয়ত, দুদক আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শুনানির জন্য লিখিতভাবে তার অভিযোগ জানাতে হবে। সেই অভিযোগ তিনি যেন খণ্ডন করতে পারেন সে সময় অভিযুক্তকে দিতে হবে। এসববের কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। এটা কি দুদকের রামরাজত্ব যে তারা যা ইচ্ছা করবে তাই করবে? এছাড়া কোনো সাক্ষীই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেননি। আইনের দৃষ্টিতে এই মামলাটি টেকে না। মামলাটি নিছক হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। এই তিন যুক্তিতে তিনি খালেদা জিয়ার খালাস চান।

প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, যেসব মিথ্যা ডকুমেন্টের ভিত্তিতে এ মামলা দাঁড় করানো হয়েছে, আর যারা এসব কাগজপত্র সৃজনের সঙ্গে জড়িত, তাদের (তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয় সাক্ষী) বিষয়ে আমরা একটা আবেদন (শাস্তিমূলক ব্যবস্থার) করেছি। আশা করছি, আপনি তা বিবেচনায় নিবেন এবং আইন অনুযায়ী তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

খালেদা জিয়ার এ আইনজীবী বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে দেশের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তারই কিছুটা প্রতিফলন ষোড়শ সংশধনীর রায়ে আমরা দেখতে পেয়েছি।

সেই রায়েই কিছু অংশ আদালতকে পড়ে শোনান তিনি।

তিনি বলেন, আজ এমন অবস্থা বিচার ব্যবস্থার- সম্পূর্ণ দেহ পানির নিচে, শুধু নাক উচু করে বেঁচে আছে।

আদালতের কাছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে, একজন আসামির মৌলিক অধিকার হলো পাবলিক ট্রায়াল। এখানে কোনো পাবলিক ট্রায়াল হচ্ছে না, এটা হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়াল। এটা সংবিধানসম্মত হচ্ছে না, এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। এখানে (আদালতে) কাউকে আসতে দেওয়া হয় না। এখানে পাবলিকের তো সুযোগ নেই, আইনজীবীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। একটি আদালতের যে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত, এখানে তা নেই। বিডিআর বিদ্রোহ মামলার জন্য এ অস্থায়ী আদালত তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে সাধারণ মামলা নিয়ে আসা দূরভিসন্দিমূলক। সরকার যে ১৪টি মামলা এখানে পাঠিয়েছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিরতির আগে তিনি তার যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষ করেন।

মওদুদ আহমদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে খালেদা জিয়ার পক্ষে দুই মামলায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক অসুবিধার কারণে তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি চান আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। একই সঙ্গে তিনি খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন প্রার্থনা করেন।

সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এর আগে খালেদা জিয়া স্থায়ী জামিনে ছিলেন। পরে জামিন বাতিল হওয়ায় অস্থায়ী জামিন মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। যেহেতু তার পালানোর কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই তার স্থলে স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করা হোক।

ওই সময় স্থায়ী জামিন এবং ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই এ মামলার সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। ওই আদেশ তারাই এনেছেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি এবং স্থায়ী জামিনের আবেদন আদালত নামঞ্জুর করেন।

এরপর দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে বিরতি দেন আদালত। দুপুর ২টার দিকে ফের আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে হাজতি আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ। যুক্তিতর্কে তিনি মামলার সকল আসামির ওপর আনা অভিযোগ আদালতকে পড়ে শোনান। তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হলে আদালত বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে মুলতবি ঘোষণা করেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার মামলা দুটি শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়