ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মঙ্গলে থাকা অপরচুনিটি রোবটযানকে মৃত ঘোষণা

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মঙ্গলে থাকা অপরচুনিটি রোবটযানকে মৃত ঘোষণা

আহমেদ শরীফ : পৃথিবী থেকে ৫৪.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে থাকা গ্রহ মঙ্গলে প্রায় ১৫ বছর ধরে ঘুরে বেড়ানো রোবটযান ‘অপরচুনিটি রোভার’কে অবশেষে ‘মৃত’ (সম্পূর্ণ বিকল) বলে ঘোষণা করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সৌরশক্তি চালিত ওই রোবটযানটি মঙ্গলের এক বালু ঝড়ের কারণে প্রায় আট মাস আগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

১৫ বছরের দীর্ঘ অভিযানে রোবটযানটি মঙ্গল সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে বিজ্ঞানীদের। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র পাঠানো মঙ্গল গ্রহ নিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘকাল গবেষণা চালানো রোভার অর্থাৎ ‘অপরচুনিটি’র অভিযান অবশেষে শেষ হলো।

৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে নির্মিত এই রোবটযানটি সর্বশেষ গত বছরের ১০ জুন সাড়া দিয়েছিল। এরপর তার সাড়া পেতে এক হাজারের বেশি কমান্ড পাঠানো হয়। প্রায় ১৫ বছর ধরে লাল গ্রহ মঙ্গলের মাটিতে ঘুরে বেড়িয়ে অভিযান চালিয়েছে রোবটযানটি। মঙ্গলে বালু ঝড়ের কারণে আকাশ বালুতে ছেয়ে যাওয়ায় সৌরশক্তি চালিত রোবটযানটি গত বছরের জুনে বিকল হয়ে যায়। চলতি মাসের ১২ ও ১৩  তারিখে অনেকবার রোবটযানটিকে কমান্ড দিয়েও এর সাড়া পায়নি বিজ্ঞানীরা। সর্বশেষ আমেরিকান গায়িকা বিলি কমান্ডের গান ‘আই উইল বি সিয়িং ইউ’ গানটি পাঠানো হয় রোবটযানটিকে জাগিয়ে তুলতে। সে গানেরও সাড়া দেয়নি রোবটযানটি।

ওই বালুঝড়ে গ্রহটির চার ভাগের এক ভাগ বালুতে ছেয়ে যায়। গ্রহের অপর একটি অংশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পারমাণবিক শক্তি চালিত রোবটযান ‘কিউরিসিটি রোভার’। ওই বালু ঝড়ের বিষয়টি জানা যায় ‘কিউরিসিটি রোভার’ এর মাধ্যমেই।

নাসা’র ইঞ্জিনিয়াররা ধারণা করছেন, বালু ঝড়ে ‘অপরচুনিটি’র অভ্যন্তরীণ যন্ত্র হয়তো বিকল হয়ে পড়েছে। এর ফলে তার স্লিপ সাইকেল নষ্ট হয়ে অন্ধকারে শক্তি সঞ্চয় করার ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। ‘অপরচুনিটি’ রোবটযানটি ২০০৩ সালে পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়, সেটি মঙ্গল পৃষ্ঠে নামে ২০০৪ সালে। এরপর থেকে রোবটযানটি মঙ্গলপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়িয়েছে ৪৫ কিলোমিটারেরও বেশি পথ।

 


                                                নাসা’র কন্ট্রোল রুম

রোবটযানটি পৃথিবীর সময় অনুযায়ী প্রায় ৯০ দিন টিকে থাকার ক্ষমতা সহ তৈরি করা হয়েছিল। তবে সেটি বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়ে টিকে ছিল প্রায় ১৫ বছর। একই সময়ে পাঠানো আরেকটি রোবটযান ‘স্পিরিট’ ২০০৯ সালে বালুতে আটকে যায়। এরপর সেটি ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয় ২০১১ সালে।

নাসা’র প্রজেক্ট ম্যানেজার জন ক্যালাস বলেছেন, ‘ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে- আপনার ভালোবাসার কোনো মানুষ হারিয়ে গেছে। সে কোনো এক সময় আবার ফিরে আসবে, সে ভালো আছে, ওই আশায় বুক বেঁধে আছেন আপনি। তবে ওই অপেক্ষায় কাটানো প্রতিটা দিন খুব অসহনীয়। এক সময় মনে হয়েছে আর না, এবার নতুন করে অন্য কিছু ভাবতে হবে।’

দীর্ঘ অভিযানে ‘অপরচুনিটি’ ২ লাখ ১৭ হাজার ছবি পাঠিয়েছে। মঙ্গলের ৫২টি পাথরের উপরিভাগ নিয়ে গবেষণা করেছে। মঙ্গলের এনডেভার ক্রেটারে এক সময় পানি থাকার জোরালো প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।

এদিকে ‘অপরচুনিটি’কে মৃত ঘোষণা করার প্রায় একই সময়ে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের মাটির নিচে আগ্নেয়গিরি থাকার সম্ভাবনা আছে বলে নতুন তথ্য জানিয়েছেন। গত জুলাই মাসে বিজ্ঞানীরা জানান, গ্রহটিতে ২০ কিলোমিটার চওড়া বিশাল জমাট বাঁধা পানি সহ একটি লেক আছে বলে করছেন। এবার তারা বলছেন ওই লেকের নিচে একটি আগ্নেয়গিরি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ, ডেইলি মেইল



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়