ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লোভনীয় পাঁপড় ভাজা

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লোভনীয় পাঁপড় ভাজা

খায়রুল বাশার আশিক : ছোটবেলায় ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালার থেকে পাঁপড় ভাজা খেয়েছেন? কুড়কুড়ে শব্দের পাঁপড় খাবার সেই দৃশ্য কি মনে আছে? মনে আছে- শেষ কবে খেয়েছেন পাঁপড় ভাজা? পুরাতন ভাঙা প্লাস্টিক দ্রব্য, পুরাতন লৌহজাত পণ্য বা দুই-এক টাকার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা ভাই দিতো একটুখানি পাঁপড় ভাজা। যারা খেয়েছেন তারা হয়তো ভুলতে পারেননি। কারণ যতটা মজা ছিল পাঁপড় খেতে ততটাই মজা ছিল সেই শৈশবের দুরন্তপনায়।

বর্তমানে ফেরিওয়ালাদের কাছে পাঁপড় ভাজা খুব একটা থাকেনা। তারপরও পথেঘাটে যারা পাঁপড় ভাজা বিক্রি করে থাকেন, তাদের একজন বরিশাল সদরের ত্রিশ গোডাউন এলাকার রাসেল। ত্রিশ গোডাউন এলাকার নদীর ধারে নিয়মিত পাঁপড় ভাজা বিক্রি করে থাকেন রাসেল। খেলেই মনে হবে- রাসেল এর পাঁপড় ভাজা, ফিরিয়ে দিলো সেই শৈশব বেলা।

বরিশালের পাঁপড় বিক্রেতা রাসেলের পাঁপড় ভাজা খেয়ে যে কেউ হারিয়ে যাবে সেই বাল্যবেলার দুরন্তপনার কল্পনায়। ফেরিওয়ালার হাতে থাকা টুংটাং ঘণ্টার শব্দ কানে গেলেই পাপড়ের লোভে দৌড় দিয়ে যেতে হতো সেই পাঁপড় ওয়ালার কাছে। পাঁপড় ওয়ালা আসবে বলে, দুই-এক টাকা বা ভাঙাচোড়া প্লাস্টিক অথবা ফেলে দেয়া লোহার দ্রব্যগুলো জমিয়েও রাখা হতো আগে থেকেই। শৈশব স্মৃতিকে মনে করেই অনেকে পাঁপড় কিনে খাচ্ছে রাসেলের এই পাঁপড়ের দোকান থেকে।

পাঁপড় একধরনের পাতলা, কুড়মুড়ে, থালাকৃতির মজাদার খাবার। মাষকলাই ডাল থেকে তৈরি করা হয় পাঁপড়। মসুর, ছোলা, চাল, আলু থেকে তৈরি আটা দিয়ে পাপড় তৈরি করা যায়। কাঁচা পাঁপড়, পাতলা রুটির মতো গোল আকৃতি করে প্রথমে রোদে শুকিয়ে রাখা হয়। রোদে শুকানো এই পাঁপড় প্রয়োজন অনুযায়ী গরম তেলে ভাজলেই খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তেলে ভেজে, বিট লবণ বা সস লাগিয়েও খাওয়া যায় এই পাঁপড় ভাজা। যারা কখনো খায়নি তারা এর স্বাদ বুঝবেনা এটাই স্বাভাবিক। তবে গরম পাঁপড় ভাজার মজাই আলাদা। আবদ্ধ পাত্রে আটকে রেখেও পাঁপড় দীর্ঘক্ষণ মচমচে রাখা যায়।



আগে শহরে বা গ্রামে ঘুরে ঘুরে যেভাবে পাঁপড় বিক্রি হতো এখন আর তেমন হয় না। যুগের সঙ্গে সঙ্গে পাঁপড় হয়েছে আধুনিক ও দামি। গত এক দশক আগেও এক টাকার যে পাঁপড় পাওয়া যেত তা এখন ৫ থেকে ১০ টাকা। পাঁপড় বিক্রেতা রাসেল কখনোই ফেরি করে পাঁপড় বিক্রি করেনি, তিনি দোকান পেতে নির্ধারিত এই স্থানেই গত দুই বছর ধরে বিক্রি করছেন পাঁপড় ভাজা। বরিশালে রাসেলের এই পাঁপড় দোকানে বর্তমানে প্রতি পিস পাঁপড় ভাজা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে।

রাসেল জানালেন, বরিশালে পাঁপড় তৈরি হয়না। রোদে শুকানো পাঁপড় নিয়ে আসা হয় দিনাজপুর থেকে। তবে পাঁপড় আনতে এখন আর দিনাজপুর যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালেই, পাঁপড় সেই দিনাজপুর থেকে বরিশালে পাঠিয়ে দেয়। দিনাজপুর থেকে আমদানিকৃত পাঁপড় তেলে ভেজে বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন রাসেল। রাসেলের দোকানে ১০ টাকা করে অন্তত ৩০০ পিস পাঁপড় বিক্রি হয় প্রতিদিন।

প্রতিদিন গড়ে ৩০০০ টাকা বিক্রি হলেও তাতে লাভ হয় অন্তত ২০০০ টাকা। স্বামী স্ত্রী দু’জন মিলেই চালায় তাদের পাঁপড় ভাজার ব্যবসাটি। তারা এই ব্যবসা করে তাদের পরিবার ও জীবিকা চালায়। সকালে অন্য কাজে ব্যস্ত থেকে শুধু বিকেল বেলায় চলে তাদের পাঁপড় বিক্রির এই কাজ।

এত কাজের মাঝে এই খাবারটি বিক্রির চিন্তা কিভাবে এল? এমন প্রশ্নের উত্তরে রাসেল জানালেন, ব্যবসা শুরুর চিন্তা যখন মাথায় আসলো তখন ঠিক করলাম এমন কিছু করবো যা সচরাচর পাওয়া যায়না বরিশালে। সেই চিন্তা থেকেই পাঁপড় নিয়ে এলাম ঢাকা থেকে। পরে খুঁজতে খুঁজতে দিনাজপুরে পাঁপড়ের সহজলভ্যতার কথা জানতে পারি। নদীর পাশে ঘুরতে আসা অনেকের কাছের পাঁপড় এখন বেশ পছন্দের।



নদীর পাশে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আল আমিন ফরাজি ও মনজুরুল ইসলাম পাঁপড় খাচ্ছিলেন মনের সুখে। আল আমিন ফরাজি জানালেন, ছোটবেলায় পাঁপড় ভাজা খেতাম। দেখতেই লোভনীয় আর খেতেও সুস্বাদু। তাই এখানে আসলেই মনের টানে এখনো পাঁপড় খাই।

পড়ুন : 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়