ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মহান মে দিবস আজ

তানজিনা আফরিন ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মহান মে দিবস আজ

ডেস্ক রিপোর্ট : আজ পয়লা মে, মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের দিন আজ। মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায় খেটে খাওয়া সব শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন পয়লা মে।

এই দিনে শ্রমজীবী, দিনমজুর মানুষ ন্যায্য শ্রমমূল্য আর আট ঘণ্টা কাজের সময়ের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। আদায় করে নিয়েছিলেন শ্রমিকের অধিকার।

১৮৮৬ সালের পয়লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করে শ্রমিকরা। এতে প্রায় ৩ লাখ মেহনতি মানুষ অংশ নেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। হে মার্কেটের সামনেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১০ জন শ্রমিক। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় গ্রেপ্তারকৃত আরো ছয় শ্রমিককে। কারাগারের বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহননও করেন।

শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগ ও রক্তস্নাত ঘটনার মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় হয়। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই সেদিন মালিকরা স্বীকার করে নিয়েছিলেন, শ্রমিকরাও মানুষ। তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম ও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে।

১৯৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগো ট্র্যাজেডির পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিবসটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের সব দেশেই আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ; এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি ও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। মহান মে দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহান মে দিবসের সঙ্গে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার, স্বার্থ ও কল্যাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সকলে এগিয়ে আসবেন, মহান মে দিবসে এ প্রত্যাশা করি।’

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মে দিবস পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, দিবসটি উপলক্ষে ‘আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

তিনি বলেন, ‘মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবময় দিন। কর্ম ঘন্টা নির্ধারণসহ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হে মার্কেটে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিক সংগঠনের যে বিজয় সূচিত হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে বিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। এ জন্য উৎপাদনশীলতা ও শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করণসহ সুস্থ শিল্পসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জন্য শোষণমুক্ত, মর্যাদাসম্পন্ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় শ্রম আইন সংশোধন, যুগোপযোগি শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। এ ছাড়া তাদের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়ন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে শ্রমিক-মালিকের বিদ্যমান আন্তরিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একথা অনস্বীকার্য যে, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে শিল্পোদ্যোক্তা, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্তভাবে কাম্য। সকল পক্ষের ইতিবাচক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রম ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মে দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বলেছেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তার সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এসকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী সমাজ পেতে শুরু করেছে। আমরা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।’

প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরো নিবেদিত হবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সক্ষম হবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পোশাক শিল্পসহ ৩৮টি শিল্পখাতের শ্রমিকদের জন্য নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করেছি। শ্রমঘন গার্মেন্টস শিল্পখাতের শ্রমিকদের নিম্নতর মজুরি ৫ হাজার ৩ শত টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’ যুগোপযোগী ও আধুনিক করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা বিএনপি-জামাত জোট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করেছি।’

বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারেরর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কার্যক্রম আরো সুদৃঢ় হয়েছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইন ২০১৩, সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে বলেও বাণীতে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি প্রণয়ন করেছি। প্রায় ৫৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬২টি চা বাগানে কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ‘আমরা শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। এ তহবিলে ১২২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১০৯টি শ্রমিক পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। শিল্পকারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে সার্বিক নিরাপত্তা সন্তোষজনক রাখার লক্ষ্যে মানসম্মত ও যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছি।’

তিনি মে দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ মে ২০১৭/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়