ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাছের খাবার দিয়ে তৈরি হয় কথিত খাঁটি গাওয়া ঘি

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাছের খাবার দিয়ে তৈরি হয় কথিত খাঁটি গাওয়া ঘি

উদ্ধার হওয়া নকল গাওয়া ঘি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দোকানে নানা ধরনের কৌটা, টিনজাত অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে নকল বাঘাবাড়ির গাওয়া ঘি। ঘি তৈরির প্রধান উপকরণ গরুর দুধ হলেও চট্টগ্রামে তৈরি হওয়া এ সব নকল ঘিতে ব্যবহৃত ঘি তৈরির উচ্ছিষ্ট ‘গাদ’।

গাদ মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় ভেজাল পাম অয়েল, কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার। দীর্ঘ দিন ধরে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র চট্টগ্রাম জুড়ে এ সব নকল ঘি তৈরি এবং প্রকাশ্যে বাজারজাত করে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে আসছে।

নকল ঘি তৈরির এই সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন। গত চার দিনে হাটহাজারী উপজেলার চারটি স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে নকল ঘি তৈরির চারটি কারখানার সন্ধান পেয়েছেন তিনি। জব্দ করা হয়েছে তিন হাজার লিটারেরও বেশি নকল ঘি এবং এ সব ঘি তৈরির উপকরণ। চারটি কারখানায় অভিযানে কোথাও দুধের অস্তিত্ব পায়নি অভিযানকারী দল।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন রাইজিংবিডিকে জানান, হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে দীর্ঘ দিন ধরে বিক্রি হচ্ছিল বাঘাবাড়ির আসল ঘি’র নামে নকল ঘি। এ সব নকল ঘি স্থানীয় বাবুর্চিদের পরামর্শে শত শত লিটার বিক্রি ও ব্যবহৃত হয় জেলা-উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। মূলত বাবুর্চি এবং মুদি দোকানদারদের বড় অংকের কমিশন দিয়ে কারখানার মালিকরা নকল ঘি বিক্রির ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত রোববার প্রথমে উপজেলার পৌর এলাকায় নকল ঘি কারখানায় অভিযান চালানো হয়। উপজেলার মেখল রোডে পরিচালিত অভিযানে জব্দ করা হয় প্রায় দেড় হাজার লিটার নকল ঘি এবং নকল ঘি তৈরির নানা উপকরণ। এর পর বেরিয়ে আসে একের পর নকল ঘি তৈরির কারখানার সন্ধান।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন আরো বলেন, গত এক সপ্তাহে উপজেলা সদরের মেখল রোড, নাজিরপাড়া, বুলবুলিপাড়া এবং কুয়াইশ বুড়িশ্চর এলাকার কাউয়ার বাড়ি এলাকায় চারটি নকল ঘি কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। জব্দ করা হয় তিন হাজার লিটারেরও বেশি নকল ঘি। এসব কারখানা থেকে ঘি তৈরির উপকরণ হিসেবে কালো এক ধরনের পদার্থ উদ্ধার করা হয়। খাঁটি ঘি-এর ঘ্রাণযুক্ত এসব পদার্থ কী তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়- ফরিদপুর, দিনাজপুর, বগুড়া অঞ্চলে যেখানে খাঁটি ঘি তৈরি হয়, সেখানে ঘি তৈরির উচ্ছিষ্ট পদার্থই হচ্ছে এসব কালো পদার্থ, যা স্থানীয় ভাষায় ঘি এর ‘গাদ’। এই গাদ ব্যবহৃত হয় মূলত মাছের খাবার হিসেবে। যারা মাছ শিকার করেন কিংবা মাছের চাষ করেন, তারা এসব পদার্থ কিনে নিয়ে যান। এ সব গাদ ফরিদপুর অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের নকল বাঘাবাড়ির ঘি কারখানায় তৈরি হচ্ছিল মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর গাওয়া ঘি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসল ঘি-এর লিটার ১১/১২শ’ টাকা। সেখানে এসব নকল ঘি বিক্রি হয় ৫/৬শ’ টাকা কেজি দরে। স্থানীয় বাবুর্চি এবং দোকান মালিকদের বড় অংকের কমিশন দিয়ে কারখানার মালিকরা বড় বড় সামাজিক অনুষ্ঠানে শত শত কেজি নকল ঘি বিক্রি ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, খবর পেলেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনসাধারণকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে গোপনে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/রেজাউল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়