ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাঠে গড়াগড়ি দিয়ে এসে বলল, ঈদের আনন্দ করে এলাম

কবি স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাঠে গড়াগড়ি দিয়ে এসে বলল, ঈদের আনন্দ করে এলাম

সন্তান যত বড়ই হোক, মায়ের কাছে সে সব সময় সেই ছোট্ট আদরের রয়ে যায়। মৌসুমী হামিদ আজ নামি অভিনেত্রী। কিন্তু মায়ের কাছে সে আজও তার আদরের মেয়ে। রাইজিংবিডির ঈদ আয়োজনে মা মাহমুদা হামিদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম মেয়ে মৌসুমীর পছন্দ-অপছন্দ এবং ছোটবেলার ঈদ নিয়ে। পাঠক, মায়ের মুখ থেকেই শুনুন মেয়ের ছোটবেলার ঈদ-আনন্দের কথা।

মৌসুমীর আব্বু সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। সেই সুবাদে আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে থাকা হয়েছে। মৌসুমী যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে আমরা তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। ছোট সময় থেকেই খেলাধুলা ওর পছন্দ। প্রতিযোগিতায় সবার আগে থাকত। আর ছোট ছোট ছেলেমেয়ের সঙ্গ পেলে তো কথাই নেই- তাদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠত। ওর সাহসও বেশি, কোনো কিছুতে তেমন পাত্তা দিতে চায় না। ওর মনে হলো কিছু করবে- করবে মানে সেটা করবেই।

ঈদে আমি নিজ হাতে ওর পোশাক বানিয়ে দিতাম। ঈদ উপলক্ষে খুব কারুকাজখচিত পোশাক কিনে দেওয়া হতো। তো ওকে একবার ঈদে ঘিয়ে রঙের একটা পোশাক কিনে দেওয়া হলো। ঝলমলে পোশাক পেয়ে খুব খুশি। সকাল সকাল গোসল সেরে খেয়ে চলে গেল ক্যান্টনমেন্টের মাঠে। মাঠভরা সবুজ ঘাস। ও সেই ঘাসের ওপর গড়াগড়ি করতে করতে মাঠের একপাশ থেকে আরেক পাশে গেছে। পুরো জামা ময়লায় ভরে গেছে। আমার কাছে এসে বলল- আম্মু ঈদের আনন্দ করে এলাম!

আমি তো রেগে গিয়েছিলাম। খুব বকে ছিলাম কিন্তু লাভ হয়নি। ওর সাথে রাগ করলে কিছু সময় চুপচাপ থাকত। একটু কান্নাকাটি করত ওই পর্যন্তই। কিছু সময় পরে ওকে দেখলে আর মেলানো যেত না যে, একটু আগে কান্নাকাটি করেছে। সারাক্ষণ হৈ-হুল্লোড় করা ওর পছন্দ ছিল।

সেমাই পছন্দ করে না বললেই চলে। ঈদের দিন সকালে ওকে দিতে হতো নুডুলস। যে কোনো ঝাল খাবার ওকে দিতে হবে। মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ওর পছন্দ, সঙ্গে থাকতে হবে পোলাও। পোলাও না থাকলে কাচ্চি রান্না করে দিতে হতো। ওকে কখনো খাওয়ার জন্য খুব বেশি কিছু বলতে হতো না। আমি নিজ হাতে আইসক্রিম বানিয়ে দিতাম। আইসক্রিম পেলে চুপচাপ বসে বসে খেত।

 



ঈদ এলে ও মনে করত এই উৎসব একটু অন্যভাবে উদযাপন করতে হবে। দৌঁড়, লাফ-ঝাঁপ যা যা করা দরকার কোনো কিছু বাদ দিত না। ক্যান্টনমেন্টে আরো অনেক পরিবার ছিল। তাদের ছেলেমেয়েরা ওর সাথে খেলতে আসত। ঈদের দিন সবাই নতুন পোশাক পরে ওর সাথে যখন খেলতে যেত ও ঠিকই এমন কোনো কাজ করত সবার পোশাকের মোটামুটি বারোটা বেজে যেত।

এখন অবশ্য মৌসুমী অনেক বদলে গেছে। বেছে বেছে খায়। নিয়ম মেনে চলে। কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে। ঈদ এলে নিজেই আমার জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে আসে। প্রতিদিন সময় করে খোঁজ নেয়। তবে ওর বাসায় গেলে আমাকে রান্না করার সব আয়োজন করে দেয়। আমি একের পর এক রান্না করতে থাকি। ও বন্ধু-বান্ধবীদের বাসায় দাওয়াত দিতে থাকে। কিছু দিন যাবার পরে বলে, আম্মু তুমি চলে যাও। আর কিছুদিন থাকলে আমি কিন্তু আরো মোটা হয়ে যাব!

এখনো আমি ওর জন্য নুডুলস রান্না করে দেই। যে কোনো রকমের রান্না করে দিলেই খুশি হয়ে যায়। ছেলেমানুষীটা এখনো আছে! আমি দেখি আর অবাক হই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ওকে ‘মৌচাক, মৌমাছি’ এসব নামে ডাকে। ও তাদের নিয়ে মেতে ওঠে। ও যখন ছোট ছিল তখন ছোটদের সাথে আড্ডা দিত। এখনো সুযোগ পেলেই ছোট ছেলেমেদের সাথে মেতে ওঠে। ওদের জন্য চকলেট, চুয়িংগাম, চিপস ওর ব্যাগে সব সময় থাকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়