ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মাতৃত্ব বনাম ক্যারিয়ার

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাতৃত্ব বনাম ক্যারিয়ার

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : কয়েকটা দিন আগের কথা। কোলে তোয়ালে জড়ানো সাত রাজার ধন এক মানিক নিয়ে আপনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন। তারপর কয়েক মাস তো নাওয়াখাওয়া প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। রাতের পর রাত জাগা, একটু পর পর তাকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, অসুখ-বিসুখ নিয়ে সারাক্ষণই আপনার বিরাট যুদ্ধ। আপনার চোখে চোখ রেখে ওর তাকানো, ভুবনভোলানো হাসি, হঠাৎ করে উল্টে যাওয়া, একা একা হাত পা ছুঁড়ে খেলা, আপনার কাছে তা এক অপার আনন্দ।

কখন যে চোখের পলকে ৫-৬ টা মাস পাখা মেলে উড়ে গেছে টেরই পাননি। তারপরই মনের ভেতর একটা আতঙ্ক চোখে আঙুল দিয়ে ভয় দেখাতে শুরু করলো। অফিসে যোগদানের তারিখ তো এসেই গেল। আপনার আদরের দুধের শিশু, তাকে ছেড়ে আট-নয় ঘণ্টা বাইরে থাকার কথা চিন্তা করলেই কান্না পায়। অনেকেই আপনাকে বলতেও শুরু করেছে চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার কথা। আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কি করবেন।

কিন্তু একটু বাস্তববাদী হয়ে ভাবুন তো ক্যারিয়ার, চাকরি ছেড়ে সত্যিই কি আপনি সবসময় বাসায় মন বসাতে পারবেন? আপনার তিল তিল করে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার এত সহজেই ভুলে যেতে পারবেন? মনে জমে থাকা রাগ, হতাশা পরোক্ষভাবে স্বামী বা সন্তানের উপর পড়বে না তো?

আসলেই কি কোনও জটিল বিরোধ রয়েছে মাতৃত্ব এবং ক্যারিয়ারের? চলুন একটা সমন্বয় বের করার চেষ্টা করা যাক, যাতে আপনার আদরের সন্তান এবং এতদিনের গড়ে তোলা ক্যারিয়ার দুইয়েরই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।

* সহায়তা
অন্যদের সহায়তা ছাড়া একসঙ্গে মাতৃত্ব এবং সংসারের সমন্বয় করা অসম্ভব। আজকাল শহুরে জীবনে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়িরা অন্তর্ভুক্ত হন না। কিন্তু বাসার বয়স্কদের মতো শিশুদের তত্ত্বাবধান অন্য কেউ করতে পারে না। একসঙ্গে থাকলে তো ভালোই, তবে না থাকলে আপনার অনুপস্থিতিতে কোনও বয়স্ক আত্মীয়কে সন্তানের দেখভালের অনুরোধ করুন। কিন্তু কখনোই তার উপর শিশুর পুরো দায়িত্ব দেবেন না। শুধু তত্ত্বাবধানের কাজটাই তাকে দিন। সন্তানের অন্যান্য কাজের জন্য একজন অভিজ্ঞ সহায়তাকারীও সঙ্গে ঠিক করে রাখুন। তিনি যদি আপনার সন্তানের যত্ন ঠিকমতো নিতে পারেন তাহলে টাকা নিয়ে তার সঙ্গে দরকষাকষিতে যাবেন না। তাকে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই ভাবুন। আপনি তাকে আপন ভাবলে তবেই তিনি আপনার সন্তানের যত্ন ঠিকভাবে নেবেন। পারিবারিক প্রীতি এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় না রাখলে কোনও সাপোর্ট সিস্টেমই কিন্তু দাঁড়াবে না। আপনার ছুটির দিনে তাদেরও একটু অবসরযাপনের সুযোগ দিন। অফিসে অপ্রয়োজনীয় গল্পগুজব, ফোন, ইন্টারনেটের সময় কমিয়ে সেটা কাজে লাগান যাতে বেশি রাত অবধি অফিসে থাকতে না হয়। শেষ মুহূর্তের জন্য কাজ একেবারেই তুলে রাখবেন না। সহকর্মীদের অন্যান্য কাজে সাহায্য করুন যাতে আপনার সমস্যায় তারাও আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

* সন্তানের সঙ্গে বন্ধন
সন্তান যত বড় হয়ে উঠবে আপনার চাকরির গুরুত্বও বুঝতে শিখবে। প্রথম থেকেই সন্তানকে বাসায় রেখে অফিস করাটাকে সেন্টিমেন্টাল ইস্যু বানাবেন না। বাবার মতো মায়ের অফিসে যাওয়াও স্বাভাবিক সেটাই ওকে বুঝতে দিন। সবসময় কাছাকাছি না থেকেও যে ভালোবাসা মজবুত থাকে তা ওকে বোঝান। সকালে নাস্তার টেবিলে সন্তানকে সময় দিন। স্কুলের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করুন। পড়াশোনা, বন্ধুবান্ধবদের খোঁজ নিন। আপনার অফিসের গল্প ওকে শোনান। স্কুল থেকে ফেরার পর অবশ্যই অফিস থেকে ফোন করে ওর সঙ্গে কথা বলুন। বাসায় ফেরার পর সন্তানকে কিছুটা সময় দিন। আপনার উপার্জিত অর্থ যে আপনাদের সবার প্রয়োজন মেটায় তা ওকে বুঝতে দিন। জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে ছোট থেকেই শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা জরুরি। এছাড়া আপনি নিজেও কোনও অপরাধবোধে ভুগবেন না। বরং পজেটিভদিকগুলো ভাবুন। প্রতিদিন ওকে আধাঘণ্টা গল্প শোনান। সন্তানের বন্ধুদের ছুটির দিনে বাসায় ডাকুন। ওদের জন্য পছন্দের খাবার বানান। মাঝেমাঝে বাইরে ঘুরতে যান। এমন জায়গায় যাবেন যেখানে শিশুরা ছোটাছুটি করতে পারে, নতুন কিছু শিখতে পারে।

* বিকল্প ব্যবস্থা
ধরুন আপনি কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারলেন না। প্রচুর হিসাবনিকাশ করেও দেখলেন পূর্ণ সময়ের চাকরি করা আপনার পক্ষে অসম্ভব। সেক্ষেত্রেও কিন্তু ক্যারিয়ারকে মাতৃত্বের কাছে বলি নাও দিতে হতে পারে। পুরো পৃথিবীতেই এখন মায়েরা সন্তানের দেখাশোনার তাগিদে বিকল্প ক্যারিয়ার বেছে নিচ্ছেন। বাসার বাইরে রোজগার না করেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন BYOB। মানে হচ্ছে Be Your Own Boss। আপনার নিজের সুবিধাজনক সময়ে শুরু করতে পারেন হোম বেসড বিজনেস। আপনার ক্যারিয়ারও তখন নতুন মোড় নেবে।

চাকরি কিংবা পার্ট টাইম জব অথবা নিজস্ব ব্যবসা- আপনার ক্যারিয়ারই কিন্তু আপনাকে রোল মডেল হিসেবে সন্তানের সামনে মেলে ধরবে। স্নেহময়ী মা ছাড়াও যে আপনি নিজ দক্ষতা, কৃতিত্বে ভাস্বর একজন পূর্ণ নারী সেটা আপনার সন্তান বুঝতে পারবে। শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, সন্তানপালনেও পথ দেখাবে আপনার এই ক্যারিয়ার।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়