ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রক্তাক্ত তটরেখা

মাথার খুলির সঙ্গে ছিল লম্বা চুল

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৪ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাথার খুলির সঙ্গে ছিল লম্বা চুল

রফিকুল ইসলাম মন্টু: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। মার্চে মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। সবার প্রত্যয় ছিল একটাই- দেশকে শত্রুমুক্ত করা। যুবক-তরুণেরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর অবশেষে আসে মুক্তি। সারাদেশের ন্যায় মুক্তি সংগ্রামের সেই ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল উপকূলীয় জনপদের তটরেখা পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধের সেইসব ঐতিহাসিক তথ্যবলি নিয়ে ধারাবাহিকের আজকের পর্বে রয়েছে কক্সবাজার জেলার কথা।

সেখানে অধিকাংশ কঙ্কাল ছিল নারীর। উদ্ধার করা মাথার খুলির সঙ্গে লম্বা চুল আর কাপড় জড়ানো ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা হতো নারীদের, নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। জায়গাটি ‘বাহারছড়া বধ্যভূমি’। এটি কক্সবাজার জেলা সদরের পুরনো রেস্ট হাউস ময়দানে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে সেখানে রয়েছে একটি স্মৃতি স্তম্ভ। এটি চোখের সামনে এলে কিংবা ’৭১-এর সেই ভয়াল দিনগুলোর কথা মনে এলে এখানকার বয়সী ব্যক্তিদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেদিনের স্মৃতি। সেই ভয়াল স্মৃতি আজও আতঙ্ক হয়ে আছে এলাকার মানুষের কাছে। শুধু এই একটি নয়, কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বধ্যভূমির সন্ধান মিলেছে। সেসব স্থানের সেই ঘটনা আজও কাঁদায় স্বজনদের।

কক্সবাজার অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভয়াল সাক্ষ্য বহন করছে বাহারছড়া। স্থানীয় বাসিন্দারা যুদ্ধদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী এ অঞ্চলের বহু নিরীহ বাঙ্গালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বাহারছড়া সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য বহন করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের ভাষ্য থেকে জানা যায়, যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সেনাদের একটি ক্যাম্প ছিল কক্সবাজারের বাহারছড়ায়। মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি নারীদের ধরে আনা হতো এখানে। অপর এক তথ্যে জানা যায়, যুদ্ধ শেষে কক্সবাজার ফিরে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী জানতে পারেন, বাহারছড়ায় বর্তমান সেনাক্যাম্প এলাকায় বিপুলসংখ্যক লাশ ছিল। সেগুলো গণকবরে সমাহিত করা হয়। অপর এক সূত্র থেকে জানা যায়, যুদ্ধ শেষে কক্সবাজার পুরনো রেস্ট হাউসের স্টোর রুমে পাওয়া গিয়েছিল ৭টি শুকিয়ে যাওয়া লাশ। রেস্ট হাউসের সামনের কূপে পাওয়া যায় শহীদদের ১১টি কঙ্কাল।

সরেজমিন পাওয়া তথ্যসূত্র বলছে, কক্সবাজারের মুক্তিযুদ্ধকালীন বাহারছড়ার সেই বর্বরতার চিহ্ন মুছে দিতে মরিয়া একটি চক্র। বধ্যভূমির পশ্চিম পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাহারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়। এর পেছন দিকে রয়েছে অন্তত ২০০ রোহিঙ্গা পরিবারের বসতি। এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাশে পাকা দেয়াল ঘেরা ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা। তিনটি তিনতলা ভবন রয়েছে এই দেয়ালের ভেতরে। পাশে একটি মসজিদ। তার পাশে দাল্লাল এতিম কমপ্লেক্স নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে রয়েছে তিনতলা ভবন। ভবনটির সামনে রয়েছে ১৬ ইসিবি (ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ান) দপ্তর এবং বিমান বাহিনীর ঘাঁটি। গণহত্যার সেই ঐতিহাসিক পাতকুয়া দুটি রয়েছে ঘাঁটির পেছনে। ময়লা আবর্জনায় কুয়া দুটি ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, বধ্যভূমির স্থানে মাদ্রাসা করা হয়নি। বরং সেখানে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। কক্সবাজারের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের বিষয়ে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলেন, স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যর্থতার দায় শুধু প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। মুক্তিযোদ্ধারাও এজন্য অনেকাংশে দায়ী।      

স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, টেকনাফের নাইট্যংপাড়ায় একটি বধ্যভূমি রয়েছে। সেখানে পাহাড়ে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই হত্যাকাণ্ডে প্রয়াতদের দাফন করা হয় গণকবরে। কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ধরে এনে পাকিস্তানিরা এখানে হত্যা করে। অধ্যাপক মাহবুবুল হকের দেয়া তথ্য মতে, টেকনাফ সেনা ক্যাম্পের কাছেই রয়েছে বধ্যভূমি। সেখানেই ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। যুদ্ধ শেষে ওই বধ্যভূমি থেকে কমপক্ষে ১১৫ জন মানুষের হাড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। টেকনাফের সেনানিবাসের সামনের কবর থেকে শহীদদের ৭৭টি কঙ্কাল  উদ্ধার করা হয় বলে আরেকটি সূত্র দাবি করেছে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় কয়েকটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। এসব স্থানে পাকসেনারা নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন ধরে এনে এখানে হত্যা করা হয়। মহেশখালী উল্লেখযোগ্য বধ্যভূমিগুলো হচ্ছে- গোরকঘাটা মাছবাজার বধ্যভূমি, গোরকঘাটা মাতারবাড়ী বধ্যভূমি, ঠাকুরতলা আদিনাথ মোঠির দক্ষিণ পাশের বধ্যভূমি, পুটিবিলা কায়স্থপাড়া বধ্যভূমি, পুটিবিলা পালপাড়া বধ্যভূমি, দেবাঙ্গাপাড়া বধ্যভূমি, বড় মহশেখালী হিন্দুপাড়া বধ্যভূমি, হোয়ানক পুঁইছড়া বধ্যভূমি, কালারমারছড়া বাজার বধ্যভূমি।

কক্সবাজারবাসীর কাছে ৬ মে দিনটি স্মরণীয়। ৭১-এর এই দিনে বাঁকখালী নদীর তীরে দাঁড় কারিয়ে ব্রাশফায়ারে বুক ঝাঁঝরা করে দেয়ার সেই বর্বরোচিত ঘটনা মনে করে আজও আঁৎকে ওঠেন এখানকার বয়সী ব্যক্তিরা। দেশীয় পাক দোসরদের হাতে থানায় বন্দি হন কয়েকজন। এদের মধ্যে ছাত্রনেতা সুভাষ, ফরহাদের নাম উল্লেখযোগ্য। থানায় নেয়ার পর ৭-৮জনকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বাঁকখালী নদীর তীরে। সেখানেই গুলিতে ঝাঁঝড়া হয় মুক্তিকামী যোদ্ধাদের বুক। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ওই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান ছাত্রনেতা ফরহাদ। গুলি করার সময় গুলি লাগে ফরহাদের বুকে। ফরহাদ মৃতের মতো পড়ে থাকেন সেখানে। কিন্তু তার প্রাণ ছিল তখনও। হানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর অতিকষ্টে বাঁকখালী নদী পাড় হয়ে খুরুশকুল তীরে ওঠেন তিনি। বাঁচার আকুতি নিয়ে এগিয়ে যান সামনে। বুকে গুলির আঘাত নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে কারও সাহায্য প্রত্যাশা করছিলেন। পাহাড়ের মসজিদের পাশে পড়ে যান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে সহায়তা করেন। এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় পান। কিন্তু ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে শেষ রক্ষা হয়নি ফরহাদের। পাক বাহিনীর দোসররা ঘাঁটিতে খবর দিয়ে আবার ধরিয়ে দেয় ফরহাদকে। তার আকুতি কেউ সেদিন কানে তোলেনি। তাকে মেরে ফেলার জন্য আনা হয় কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বদরমোকামে। ফরহাদ বুঝতে পারেন, হয়তো তার জীবন এখানেই শেষ। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তার শেষ প্রার্থনা। মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করে নেন। বুকে গুলির আঘাত নিয়ে হাঁটতে পারছিলেন না ফরহাদ। রক্ত ঝরছিল। তার বাঁচার প্রার্থনা কাজে আসেনি। পাক বাহিনী সন্ধ্যার দিকে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে।

প্রতিরোধের প্রস্তুতি গ্রহণের আক্রোশে পাক বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন যোদ্ধা ফরহাদ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে অর্ধ শতাধিক যুবক নিয়ে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ পরিচালনা করেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি চলে যান কালুরঘাট। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় দলসহ কক্সবাজার চলে আসেন। মাত্র দু্ই সপ্তাহের ব্যবধানে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রবেশ করে পাক বাহিনীর গাড়ি বহর। শুরুর দিকেই পাক বাহিনীর নজরে আসেন ফরহাদ এবং তার বাহিনী। সে কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তবে অস্ত্র সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধের অনেক সংগঠক তখন বার্মায় আশ্রয় নেন এবং সেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

কক্সবাজারে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয় অনেক আগেই। ’৭১-এর ৩ মার্চ বিকাল ৩টায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। তাদের দাবি ছিল পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর। জনসভার সমর্থনে সকাল ১০টায় মিছিল হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্রনেতা আল মামুন শামসুল হুদা (নান্নু) তালাবদ্ধ এসডিও অফিসের উপরে টাঙানো পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলেন। দুপুরে অপর একজন ছাত্র একেএম মনসুর উল হক স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করেন। পূর্ব ঘোষিত সময়ে জনসভার শেষদিকে মনসুর উল হক জনসভা মঞ্চে উঠে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে ফেলে স্থানীয়ভাবে তৈরি পতাকাটি উত্তোলন করেন। কক্সবাজারের পাবলিক লাইব্রেরি ময়দানে উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেঠে পড়ে। মার্চের শুরুতে এভাবেই কক্সবাজারে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটে। যা বঙ্গন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর আরও গতিশীল হয়। ভাষণের পর আবসার কামাল চৌধুরীকে আহবায়ক করে গঠিত হয় জেলা সংগ্রাম কমিটি। কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন একেএম মোজাম্মেল হক। কমিটিতে আরও ছিলেন এ. জহিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নুর আহমদ, অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, এ. মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট সুরেশচন্দ্র সেন, মোহাম্মদ ইদ্রিস, এস. কে শামসুল হুদা, ডা. শামশুদ্দিন, শমশের আলম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরও অনেকে। জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় সংগ্রাম কমিটির কার্যক্রম পরিচালিত হতো। শহরের প্রবেশ মুখে পিটিআই মাঠে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ নামে আর একটি মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্প করা হয়েছিল। কক্সবাজারের মুক্তিবাহিনীর কেউ প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন, কেউবা প্রতিরোধে ব্যস্ত থাকেন।  

কক্সবাজারের পাহাড়ি জনপদ  বলে পরিচিত মহেশখালী পাক বাহিনীর আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যেমন ছিল, তেমনি পাক বাহিনীর আক্রমণও ছিল। পাক বাহিনী প্রবেশের আগে সেখানেও মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মহেশখালী থানা থেকে অস্ত্র যোগাড় করে, এছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অস্ত্র প্রেরণ ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। যথারীতি গঠিত হয় সংগ্রাম কমিটি। কিন্তু পাক বাহিনীর দোসররা মুক্তি বাহিনীকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। কালারমারছড়া ইউনিয়নে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। এই খবরটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাছে পৌঁছায় মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হিসাবে। ফলে সেখানকার মুক্তি সংগ্রামীদের পাকিস্তানের শত্রু হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলির নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশে শাক্তিশালী হয় পাক বাহিনীর দেশীয় দোসররা। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেককে খুন করে, অনেককে ধরে নিয়ে কক্সবাজারে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। চলতে থাকে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অমুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার তৎপরতা।  

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মহেশখালীতে পাকহানাদারদের আক্রমণে প্রধান শক্তি ছিল স্থানীয় রাজাকাররা। প্রায় চারশ  দেশীয় রাজাকার যুক্ত হয়ে আক্রমণ চালায় নিরীহ বাঙালির ওপর। মুক্তি বাহিনী ও তাদের পক্ষের লোকজন ও অমুসলিমদেরসহ নির্বিচারে হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মূল্যবান সম্পদ লুট, নারীদের ধর্ষণ, জোর পূর্বক অমুসলিদের ধর্মান্তর ও পুরুষাঙ্গ খৎনা করে নজির বিহীন বর্বরোচিত অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়। মহেশখালীর আদিনাথ পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনসাধারণ প্রায় ৭০০ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন হিসাবে আজও সাক্ষ্য বহন করছে মহেশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১০টি বধ্যভূমি। মহেশখালী থানা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় বাইরের মুক্তিযোদ্ধা সাহায্য করতে আসতে পারেননি। ফলে দ্বীপের মুক্তি সংগ্রামী মানুষের ওপর অবর্ননীয় নির্যাতন চালাতে পেরেছে পাকহানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা।

কক্সবাজারবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন ১২ ডিসেম্বর। দীর্ঘ সময় যুদ্ধ শেষে শত্রুমুক্ত হয় জেলাটি। মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকা নিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থল পাবলিক হল ময়দানে সমবেত হন। এ সময় বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা। কক্সবাজারকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে বিজয়ের পথে এগিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধাসহ এ জেলার মুক্তিকামী মানুষেরা।

তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন, কক্সবাজার
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মার্চ ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়