ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মানব-শূকর সংকর ভ্রূণ সৃষ্টি!

রাসেল কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানব-শূকর সংকর ভ্রূণ সৃষ্টি!

রাসেল কবির : মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্যে সবসময়ই প্রয়োজনীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গ না পাওয়ার সারাবিশ্বে প্রায় ২২ জন মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে।

এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণাগারে এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জন্মানোর কথা ভাবছেন। আর এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জন্মানো হবে অন্য একটি প্রাণীর শরীরে। প্রাণীদের ভ্রুণে মানুষের স্টেম সেল ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা, যাতে সেখানে নির্দিষ্ট প্রত্যঙ্গ তৈরি হতে পারে। এতে করে নাকি মানবদেহের কিছু বিশেষ প্রত্যঙ্গ ওই প্রাণী দেহে উৎপাদন সম্ভব হবে। ফলে হৃৎপিণ্ড বা যকৃতের মতো প্রত্যঙ্গও অর্ডার দিলে পাওয়া যাবে ‘রেডিমেড’!

গত দুই দশক ধরে মানব দেহের স্টেম সেল অন্য প্রাণীর দেহে তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। জিন এডিটিং বা জিন সম্পাদনার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এই কাজটি করছেন আর এই গবেষণায় সফল হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া সল্ক ইনস্টিটিউট।

শূকরের ভ্রুণের ভেতরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মানুষের স্টেম সেল প্রবেশ করিয়ে মানুষ ও শূকরের একটি সংকর ভ্রূণ তৈরির চেষ্টায় সফল হয়েছেন তারা। এই সংকর ভ্রূণটি শূকরীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করে চার সপ্তাহ (২৮ দিন) পর্যবেক্ষণ করা হয়। ২৮ দিন পরেই শুয়োরের ভ্রূণ থেকে মানুষের শরীরের স্টেম সেলগুলিকে বের করে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাই মানুষের কোষ থেকে যে ধরনের কলা তৈরি হয়, সেগুলো খুব বেশি পরিমাণে গড়ে ও বেড়ে উঠতে পারেনি শুয়োরের ভ্রূণে। তবে এর মাধ্যমে বিশ্বে এই প্রথম মানুষ ও শুয়োরের ‘সংকর প্রাণী’-র জন্ম হয়েছে। তবে তার চেয়েও যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল- এর ফলে, এক দিন শুয়োর বা অন্য কোনো প্রাণীর ভ্রূণের মধ্যেই মানুষের শরীরের কোষ, কলা দিয়ে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বানিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

গবেষক দলের সদস্য ড. আইজপিজুয়া বেলমোন্ট বলেন, ‘নৈতিক উদ্বেগ উত্থাপন ছাড়াই মানব এবং শূকর কোষের একইসঙ্গে মিশ্রিত হয়ে পরিপক্কতা অর্জন সম্বন্ধে জানা-বুঝার চেষ্টা করার জন্য ২৮ দিন যথেষ্ট ছিল।’

বর্তমানে মানুষের জন্য প্রত্যঙ্গ তৈরিতে শূকরের শিমেরা (জিনগতভাবে আলাদা ধরনের টিস্যুর সংমিশ্রণের ফলে তৈরি হয় বিশেষ সংকর প্রজাতি) তৈরিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কারণ শূকরের সঙ্গে মানুষের কোষের মিল সবচেয়ে বেশি। এটা সফল হলে মানুষের প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের অনেক সমস্যাই সমাধান করা যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বিজ্ঞানীরা প্রত্যাশা করছেন, শূকরের ভ্রুণের ভেতর থেকে ডিএনএ সরিয়ে, তারপর সেখানে মানবদেহের স্টেম সেল ঢুকিয়ে এই কাজটি করা হবে। এর ফলে যে ভ্রুণের সৃষ্টি হবে সেটা দেখতে এবং আচার আচরণে সাধারণ একটি শূকরের মতোই হবে কিন্তু এর ভেতরে একটি প্রত্যঙ্গ তৈরি হবে যেটি তৈরি হবে মানব কোষের মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এভাবে ওই প্রাণীটির ভেতরে মানব হৃদপিন্ড, কিডনি, লিভার অগ্নাশয়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অঙ্গ জন্মানো হবে।

তবে প্রাণী অধিকার রক্ষায় কাজ করে এরকম একটি সংস্থা-পেটার একজন উপদেষ্টা জুলিয়া বেইন্স এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়ে এই সংকর সৃষ্টি খুবই আতঙ্কের বিষয়। প্রাণীর এরকম বর্বর ব্যবহার শুধু ভৌতিক কল্পকাহিনির বইগুলোতেই দেখা যেত।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই কাজটা করা হচ্ছে শুধু এ কারণে যে ওই প্রাণীর শরীরে মানব দেহের ওই উপাদানগুলো রয়েছে। এটা করতে গিয়ে প্রাণীটির নানা রকমের যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এবং তারপর যদি ওই সংকর শিশুটির জন্ম দেওয়া হয় তাহলে তার অনেক খারাপ পরিণতিও হতে পারে। যেমন তাদের শরীরে টিউমার জন্মাতে পারে, ত্রুটি থাকতে পারে মস্তিষ্কের গঠনে। সুতরাং এই কাজটা করা নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী।’

তবে ড. আইজপিজুয়া বেলমোন্ট বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ দক্ষতা, কৌশল উন্নতকরণ এবং একটি বিশেষ মানব অঙ্গ গঠন হবে শুকরের কোষের মধ্যে। আমাদের গবেষণাতথ্য আধুনিক বিজ্ঞান এবং ওষুধের জন্য, সেইসঙ্গে চিকিৎসা থেরাপির জন্য একটি সম্ভাব্য নতুন অধ্যায় রচিত হবে যাতে একটি অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক ভ্রূণ গঠন ও অঙ্গ গঠনের পথ  উন্মোচন হতে পারে।’

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হিসেবে প্রাণী হত্যা করাটা যেমন অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য, তেমনি মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার জন্য শূকরের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির ভ্রূণ তৈরি করে, মানুষের জীবন রক্ষা করার বিষয়টি অনেকেই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন এবং প্রশংসাও করছেন।

তথ্যসূত্র:  ডেইলি মেইল



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়