ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা মুক্ত হয়েছিল ৮ ডিসেম্বর

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা মুক্ত হয়েছিল ৮ ডিসেম্বর

মিরপুর উপজেলার শহীদ স্মৃতিসৌধ

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়াবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন। কুষ্টিয়ার মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল এই ৮ ডিসেম্বর।

৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এর পর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করে। মিরপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিভিন্ন বয়সের হাজারও নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।

এখানের মুক্তিযোদ্ধাদের রয়েছে অনেক বীরত্ব গাঁথা। এখানে বারবার মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় পাকবাহিনীকে। বেশ ক’জন পাকবাহিনী নিহতও হন। কিন্তু পাক সৈন্যদের গুলিতে মুক্তিবাহিনীরও বেশ ক’জন শহীদ হন। মশানের ডাঃ আব্দুর রশিদ হিলম্যান, গোলাপ শেখ, আশরাফ আলী ও সোনাউল্লাহ শহীদ হন। কামারপাড়ার যুদ্ধে শহীদ হন সিপাহী মহিউদ্দিন ।

দৌলতপুরও হানাদারমুক্ত হয় ৮ ডিসেম্বর। মুক্তিকামী বীর সূর্য সন্তানেরা একাত্তরের এই দিনে দৌলতপুরকে শত্রুমুক্ত করে থানা চত্বরে বিজয় পতাকা ওড়ান।

দৌলতপুরকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের সন্মুখ যুদ্ধসহ ছোট-বড় ১৬টি যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এসকল যুদ্ধে ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক’শ নারী-পুরুষ শহীদ হন। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ সংঘঠিত হয় উপজেলার ধর্মদহ ব্যাংগাড়ী মাঠে। এ যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩’শ পাকসেনা নিহত হয়। শহীদ হন ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সদস্য।

৮ ডিসেম্বর সকালে আল্লারদর্গায় পাক সেনারা দৌলতপুর ত্যাগ করার সময় তাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা রফিক শহীদ হয়। এরপর দৌলতপুর হানাদার মুক্ত ঘোষনা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী।

ভেড়ামারা মুক্ত হয়েছিল তুমুল যুদ্ধের মধ্যদিয়ে। পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা ভেড়ামারাকে ৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত করতে সমর্থ হন।

এই দিন ৮নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর আবুল মুনছুর ও জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদুল আলম’র নেতৃত্বে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোর ৭ টার সময় ভেড়ামারা ফারাকপুরে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। প্রায় ৭ ঘন্টা ব্যাপী এই যুদ্ধে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধের পর পরই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রায় ৫০/৬০ জন বিহারী নিহত হয়। এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে ভেড়ামারায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর অন্যান্য সদস্যবৃন্দের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তারা সন্ধ্যার আগেই ভেড়ামারা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে পালিয়ে যায়। এই দিন রাতে মুক্তিপাগল মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ভেড়ামারায় প্রবেশ করতে থাকেন এবং বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন।




রাইজিংবিডি/ কুষ্টিয়া/৮ ডিসেম্বর ২০১৮/ কাঞ্চন কুমার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়