ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আইন প্রতিহত করা হবে’

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আইন প্রতিহত করা হবে’

ছবি: কিসমত খন্দকার

বিশেষ প্রতিবেদক : মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যেকোনো আইন এ দেশের জনগণ বুকের রক্ত দিয়ে হলেও প্রতিহত করবে।

সোমবার শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘মত প্রকাশে বাধা, সাম্প্রতিক কালাকানুন, কোন পথে বাংলাদেশ’ র্শীষক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্তের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, ব্লগার ও উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সভাপতি শাহজাহান সাজু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স প্রমুখ।

এর আগে গণজাগরণ মঞ্চের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রজন্ম চত্বরে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সুবিধাবঞ্চিত বিভিন্ন সংগঠনের শিশু ও কিশোররা। এরপর একটি বর্ণাঢ্য জাগরণ মিছিল প্রজন্ম চত্বর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে প্রজন্ম চত্বরে শেষ হয়। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির শিল্পীরা।

অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের মৌলিক অধিকারের বিরোধী 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন' এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এই গণবিরোধী আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। অন্যথায় জনগণ অতীতের মতো রাজপথে নেমে আসবে।

তিনি রাজধানীতে ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন করার প্রস্তাবেরও নিন্দা করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই রাজধানীতে প্রচণ্ড জ্যাম থাকে। সেক্ষেত্রে আলাদা লেন করার প্রস্তাবের নিন্দা জানাই।

সমাবেশে বক্তারা নাগরিকের স্বাধীনতা হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানান।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, ৫৭ ধারা খারাপ আইন ছিল, তারা এর পরিবর্তে এই আইনটি করেছেন। ৫৭ ধারার বিরুদ্ধ আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি, তখন তারা একে খারাপ বলেননি। তখন ৫৭ ধারার পক্ষে তারা সাফাই গেয়েছেন। এখন ৩২ ধারাকে ভালো বলছেন। যখন এটিও বাতিল হবে, সম্ভবত তখন তারা বলবেন, এটি কত বাজে আইন ছিল।

তিনি আরো বলেন, ৫৪ ধারা থেকে শুরু করে অনেক কালা কানুন আমরা দেখেছি। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে শুধু কালা কানুন বললে কম বলা হবে। এটি এমন একটি আইন, যা বাংলাদেশকে মধ্যযুগে পিছিয়ে নিয়ে যাবে। এই আইন কার্যকর করা হলে অন্ধকার যুগের সাথে বাংলাদেশের কোনো পার্থক্য থাকবে না।

ইমরান এইচ সরকার বলেন, ডিজিটাল আইনের কুফল বোঝার জন্য আইন বিশষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। একজন সাধারণ মানুষও বুঝবেন, কোনো সরকারি অফিসে গিয়ে যদি কেউ ঘুষ খাওয়ার কোনো ছবি তুলেন বা ভিডিও রেকর্ড করেন, তবে ঘুষখোরকে ধরিয়ে দেবার চেষ্টার জন্য সচেতন মানুষটির ১৪ বছরের জেল আর ২০ লাখ টাকা জরিমানা হবে। এমন আইন কি কোনো সভ্য সমাজে সম্ভব? সরকার কি দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়?

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, এই আইনের অপব্যবহারের কথা অনেকে বলেছেন। কিন্তু আমি এর ভালো ব্যবহারের কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না। এই আইনটি করাই হয়েছে দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকদের দেশদ্রোহী বানিয়ে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।

তিনি আরো বলেন, এই আইন করা হয়েছে গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরার জন্য, করা হয়েছে সিটিজেন জার্নালিজম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বন্ধ করে দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজদের পথ প্রশস্ত করে দিতে। সাধারণ মানুষকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। সব ধরনের প্রতিবাদের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে সাংবাদিকদেরও গলা চেপে ধরা হয়েছে, যেন তারা কোনো দুর্নীতির খবর প্রচার করতে না পারে।

বক্তব্যের শুরুতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির প্রেক্ষপট তুলে ধরেন ইমরান এইচ সরকার। একই সঙ্গে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে গিয়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। একই সঙ্গে তাদের হত্যার বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়