ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু!

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : একাত্তরের রণাঙ্গনে সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি মেলেনি আব্দুল করিম গাজীর। স্বীকৃতি না পেয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে অপমানিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন আব্দুল করিম গাজী।

সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর গ্রামের আব্দুল করিম গাজীর মেয়ে ফতেমা খাতুন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মে মাসে আমার বাবা আব্দুল করিম গাজী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। টাকির আমবাগানে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তাকে দেওয়া হয় থ্রি নট থ্রি রাইফেল। এরপর তিনি ৯ নম্বর সেক্টরের আওতায় শোভনালী, কেয়ারগাতী, গোয়ালডাঙ্গা, ব্যাংদহা এলাকায় সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

সেসময় তার যুদ্ধকালীন কমান্ডার অধিনায়ক ছিলেন মো. আবুল খায়ের ও সন্তোষ কুমার দাশ। ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল। তার সহযোদ্ধা ছিলেন আবুল খায়ের (লাল মুক্তিবার্তা নম্বর- ০৪০৪০১০১১৪), সন্তোষ কুমার দাশ (লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০৪০৪০১০১১৩) ও আবু বক্কর ছিদ্দিক (লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০৪০৪০৭০৩১৬)।

এ ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব দালিলিক প্রমাণ থাকার পরও অজানা কারণে আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তিনি হতাশ ছিলেন। অভাবের কারণে তিনি খুলনায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার কঠোর পরিশ্রমের টাকা দিয়ে আমাদের পাঁচ ভাইবোনকে মানুষ করেছেন।

মেয়ে ফতেমা খাতুন বলেন, পরিশ্রমের মধ্যে তিনি ভেবেছিলেন এইবার যাচাই-বাছাইতে তিনি অবশ্যই স্বীকৃতি পাবেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেখানেও ঘটে ভিন্ন ঘটনা। যাচাই-বাছাই কমিটির নেতারা তাকে তো স্বীকৃতি দিলেন না বরং তাদের অপমানজনক মন্তব্যে আমার বাবার মন বিষিয়ে উঠেছিল। আর বাবা এ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

তিনি আরো বলেন, আমার বাবা আর কখনো ফিরে আসবেন না। তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি না পেয়ে ক্ষোভ ও হতাশায় নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আর কখনো বলবেন না আমি মুক্তিযোদ্ধা। আজ আমার একটাই দাবি আমি যেন জাতির কাছে মাথা উঁচু করে পরিচয় দিতে পারি, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

আমি বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের  হস্তক্ষেপ কামনা করছি।



রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এম. শাহীন গোলদার/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়