ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ১২:৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে

শাহ মতিন টিপু: মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে/স্মৃতি যেন আমার এ হৃদয়ে বেদনার রঙ্গে রঙ্গে ছবি আঁকে- লাইনটি যাকে মনে করিয়ে দেয় তিনি হেমন্ত।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ২৯তম প্রয়াণ দিবস আজ। কালজয়ী এই শিল্পীকে বিশেষভাবে স্মরণ করার দিন আজ। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জীবনাবসান ঘটে প্রথিতযশা এই শিল্পীর।

হেমন্ত মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে শুনিয়েছিলেন ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’। সত্যি, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আজো বাজে এই শিল্পীর অসংখ্য গানের স্বরলিপি।

‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’ কিংবা ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, ‘এই রাত তোমার আমার’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ এমন মন দুলিয়ে দেওয়া অসংখ্য গান আজো মুগ্ধ করে আমাদের।

‘মা গো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে’ গানটি দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে গান করেছিলেন। তিনি সেসময় বিভিন্ন ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়াতেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, তিনি চ্যারিটি শো করে এর অর্থ তুলে দিয়েছিলেন উদ্বাস্তু শিবিরের সাহায্যার্থে।

১৯২০ সালের এই দিনে ভারতের বারাণসীতে জন্মেছিলেন হেমন্ত। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গানের ছন্দে মাতিয়ে রেখেছিলেন হেমন্ত। তার সুরের ঢেউ এসে আঘাত হানে লাগে এই বাংলায়। সেই থেকে হেমন্ত যেন এখনো বাংলার। এখনো বাংলার নদী জলে ভাসে তার সুর।

হেমন্ত মহানায়ক উত্তম কুমারের বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকেই যেন উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। পরবর্তী সময়ে এই জুটি পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা।

মূলত তার প্লে-ব্যাক সংগীত জীবন শুরু হয় ১৯৪১ সালে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর থেকেই তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার একজন অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হন। তার সঙ্গীত পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবির মধ্যে রয়েছে হারানো সুর, দ্বীপ জ্বেলে যাই, নীল আকাশের নীচে, স্বরলিপি, শেষ পর্যন্ত, কুহক, দুই ভাই, সপ্তপদী, রাগ অনুরাগ, ফুলেশ্বরী এবং দাদার কীর্তি।

জীবনের ৬৯ বছরে ‘আজ দু’জনার দুটি পথ’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’, ‘তোমাদের আসরে আজ’, ‘তোমার ভুবনে মাগো এত পাপ’, ‘বন্ধু তোমার পথের সাথীকে’, ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’, ‘মনে রবে কিনা রবে আমারে’, ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরিষ শাখায়’, ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে’, ‘শুধু তোমার বাণী’, ‘আমার রাত ফুরালো’, ‘সুরের আকাশে’, ‘কোনো এক গায়ের বধূর কাহিনী’, ‘আমি দূর হতে তোমাকেই দেখেছি’, ‘পাল্কি চলরে’, ‘রানার রানার’, ‘এই বালুকা বেলায়’ এমন বহু হৃদয়স্পর্শী বারবার মনে করিয়ে দেবে তাকে।

‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো, আমিও নদীর মতো আসবো না ফিরে আর আসবো না ফিরে কোনোদিন’। সত্যিই তিনি আর ফিরে আসবেন না কোনো দিন। কিন্তু তার সৃষ্টিই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে চিরদিন।জনপ্রিয় গানগুলোর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন অমর এই সংগীতশিল্পী।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/টিপু 

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়