ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

মুজিব-ইয়াহিয়া আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুজিব-ইয়াহিয়া আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক

শাহ মতিন টিপু : ১৬ মার্চ ১৯৭১। এই দিনটি ছিল লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের পঞ্চদশ দিবস।

১ মার্চ ভুট্টোর প্ররোচনায় ইয়াহিয়া ঘোষিত একতরফাভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস-অসহযোগ ইতোমধ্যে সর্বব্যাপী রূপ লাভ করে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণরুপে বঙ্গবন্ধুর অনুকূলে।

পাকিস্তানের উভয়াংশেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এ অবস্থায় সব মহলের চাপে অবশেষে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান সকাল সাড়ে ১১টায় কড়া সামরিক প্রহরাধীন প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দফা আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী হয় এ বৈঠক। বৈঠকে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন না। প্রথম পর্বের এ বৈঠক ছিল ওয়ান টু ওয়ান এবং রুদ্ধদ্বার আলোচনা।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে যাত্রার প্রারম্ভে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সম্মুখ প্রাঙ্গণ তখন লোকে লোকারণ্য। ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি উচ্চারণ করে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাত তুলে সবার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এখন কিছুই বলার নেই।’

উপস্থিত অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত সমর্থককে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে শোকের স্মারক কালো পতাকা উড্ডীন সাদা রঙের গাড়িটিতে আরোহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর গাড়ি প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে পৌঁছলে পুনরায় একঝাঁক সাংবাদিক তাকে ঘিরে ধরেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করেই বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন।

বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুনরায় বৈঠক হবে।’

‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় খুশি হয়েছেন কি না?’ জনৈক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করছি। আরো আলোচনা হবে।’

রাজধানী ঢাকায় যখন বঙ্গবন্ধু মুজিব-জেনারেল ইয়াহিয়া আলোচনা চলছে, তখন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের উত্তাল। অসহযোগ আন্দোলন সৃষ্ট স্বাধিকার থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তির ঢেউ। যেসব সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত, স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চালু রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছেন, কেবল সেগুলো ছাড়া অন্য সব অফিস-আদালত বা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকে।

একদিকে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক চলছে, অন্যদিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে আন্দোলন-সংগ্রামে পুরো পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পয়লা মার্চ থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ হারায় পূর্ব পাকিস্তানের ওপর। সামরিক জান্তাদের কোনো আদেশ-নির্দেশই মানছে না বীর বাঙালি। একমাত্র সেনা ছাউনি ছাড়া পাকিস্তানের অস্তিত্বই ছিল না কোনো জায়গায়। বরং গোটা পূর্ব পাকিস্তানের গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, শহর-বন্দরে পতপত করে উড়ছে বাংলাদেশের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা।

সারা দেশের অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। সব সরকারি ভবন, হাটবাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায়ও উড়ছে প্রতিবাদের কালো পতাকা। কোথাও কোথাও বাংলাদেশের নতুন পতাকাও উড়তে থাকে। মহল্লায়-মহল্লায় গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। সব বয়স, সব পেশা ও শ্রেণির মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মার্চ ২০১৮/টিপু/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়