ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১৯ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বিনিয়োগ ও উৎপাদন সহায়ক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রিয় ব্যাংক। একই সঙ্গে এতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশকে। মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, যাতে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে।

আগামী ২৬ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মুদ্রানীতিতে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগান যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে। বেসরকারি খাতে এবারে ঋণ জোগানের প্রাক্কলন সামান্য বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হতে পারে। ব্যাংক ঋণ খাতে প্রয়োজনীয় জোগান দেওয়ার বিষয়েও নজর দেওয়া হবে।

এছাড়া বিনিয়োগের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কারণ, ব্যাংক আমানতের সুদ হার এখন যে কোন সময়ের চেয়ে কম। এছাড়া ব্যাংকেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী মুদ্রানীতিতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার উদ্যোগ থাকবে।

তবে, আসছে মুদ্রানীতি নিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেন, অন্যবারের মতো এবার সংকোচনশীল মুদ্রানীতি প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক উত্থানে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন মুদ্রানীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। কারণ, হঠাৎকরে ডলারের দর বেড়ে গেলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো হলে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নতুন মুদ্রানীতির সুফল আসবে।

নতুন মুদ্রানীতির বিষয়ে মতামত দিতে গত ৯ জুলাই রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সাবেক গভর্নর এবং অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মতামত সভায় উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘মূলত প্রতি ৬ মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণার আয়োজন চলছে। এ মাসের শেষের দিকে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এ উপলক্ষে গত ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে।

এদিকে সরকারের নির্ধারিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সামনে রেখে মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন প্রাক্কলন করা হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়।

২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত গড় বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বসীমা ধরা হয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। মে পর্যন্ত এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অবশ্য সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার তুলনায় ১৮ হাজার ২৯ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে। এদিকে গত জুনে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশে উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় শেষে তা ছিল পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে ৮৬ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুই বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথমার্ধের প্রথম মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে এবং অন্যটি দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুলাই ২০১৭/নাসির/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়