ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মূলধন ঘাটতি পূরণে বাজেটে আবার ২০০০ কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ২০ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মূলধন ঘাটতি পূরণে বাজেটে আবার ২০০০ কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত : আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে আবার দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো চরমভাবে মূলধন সঙ্কটে ভুগছে। এ সংকট কাটাতে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকছে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০১১-২০১২ অর্থবছর থেকে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘পুন:মূলধন বিনিয়োগ’ খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি ব্যাংক সংস্কারে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে এসব ব্যাংকের ঘাটতি কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি বরং বিশাল এ ঘাটতির বিপরীতে সরকারি ছয় ব্যাংককে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ঋণ পেয়েছে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটি পেয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। আর সোনালী ৩০০ কোটি, রূপালী ২০০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৪৯ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১০০ কোটি এবং গ্রামীণ ব্যাংক ২২ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে রাখা হয় ৩৪১ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ওই অর্থবছরে ব্যয় হয় ৫৪১ কোটি টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ব্যয় হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আবারো পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও শেষ পর্যন্ত খরচ হয় পাঁচ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তবে ওই অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে বরাদ্দ রাখা হয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে বরাদ্দ রাখা হয় দুই হাজার কোটি টাকা।

এদিকে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে শুধু বেসিক ব্যাংকেই মূলধন ঘাটতি বাবদ সরকার যোগান দেয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেয়া হয় ১৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেয়া হয় ৫৫ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংক পায় এক হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয় ৭১০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২৫০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেয়া হয় ৭৫ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক পায় এক হাজার ৯৯৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ৮১৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক এক হাজার ৮১ কোটি, রূপালী ব্যাংক ২১০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১৭৫ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংক পায় ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১১৯ কোটি ৪৯ লাখ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১০৮ কোটি টাকা। আর ২০১১-২০১২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয় ৮৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জন্য ছাড় করা হয় ১০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি কমিয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মূলধন পূরণে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কার চলছে। এসব সংস্কার কর্মকা- পুরোপুরি কার্যকর হলে আর্থিক খাত থেকে সব ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতি কমে আসবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মে ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়