ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মৃত্যু পথযাত্রী এক তরুণ চিকিৎসক

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৃত্যু পথযাত্রী এক তরুণ চিকিৎসক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : মাত্র ২৮ বছরের টগবগে তরুণ, যার তারুণ্যের উন্মাদনায় ছুটে চলার কথা সে আজ বিছানায়।দিন কাটছে তার শুয়ে শুয়ে, গুনছেন মৃত্যুর প্রহর।

টগবগে এই তরুণের নাম মো. নুরুল ইসলাম। ইতিমধ্যেই ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।২০১২ সালে বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ থেকে পাশ করার পর তিনি ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে তার শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে।নতুন উদ্দীপনায় জীবনযাত্রার শুরুতেই ঘটে ছন্দপতন।

যে তরুণটির চিকিৎসা সেবা বিলিয়ে দেওয়ার কথা, সে নিজেই হয়ে ওঠেন অসহায় রোগী। কিন্তু তিনি সুস্থ্য হয়ে আবারো মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ইউরোপ, আমেরিকা অথবা জাপানে নিতে পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে নিয়ে চিকিৎসা করালে তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন বলে চিকিৎসকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সে সাধ্য কোথায়?

বাবা গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গী রোডের ব্যবসায়ী মতিনুর রহমান । মা শহরের নাছিমা খানম আলীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা একমাত্র ছেলের চিকিৎসার অর্থ যোগাতে যোগাতে এখন ক্লান্ত।আর পারছেন না তারা।

প্রথমে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে ৬ মাস চিকিৎসা করা হয়। পরে ভারতের কোলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টার থেকে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। পরে তাকে নিয়মিত চেকআপ করানো হয়। কিন্তু, গত ডিসেম্বরে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে প্রফেসর ডাঃ এম এ খালেকের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়।

তিনি চিকিৎসার পর তাকে জাপান নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে কলকাতা নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ইউরোপ, আমেরিকা অথবা জাপান নিয়ে চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। বর্তমানে শয্যাশায়ী হওয়ায় তিনি অচল হয়ে পড়েছেন। চলাফেরা করতে পারছেন না। ঘরের বিছানায় শুয়েই দিন কাটছে তার।

নুরুল ইসলামের ব্লাড ক্যান্সার চিকিৎসায় পরিবারের পক্ষ থেকে স্বজনদের সহায়তায় এ যাবত অন্তত ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের পক্ষ  থেকে তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হয়নি ।

মা নাছিমা খানম বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে অনেক আশা নিয়ে বেসরকারি মেডিকেলে ডাক্তারি পড়িয়েছি। অনেক টাকা ব্যয় করেছি। পরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি। চিকিৎসায় সহায় সম্বল সব খুইয়েছি। এখন তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী শেখ হাসিনার সহায়তা কামনা করছি। তিনিই আমাদের এ সংকট থেকে রক্ষা করতে পারেন।’

বাবা মতিনুর রহমান বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসা করিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। স্ত্রীর আয়ের টাকা দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে। মানবতাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে সে সুস্থ হয়ে আবার চিকিৎসা সেবায় ফিরতে পারবে।’ একমাত্র ছেলের চিকিৎসায় পরম মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনানহ সমাজের বৃত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘মেধাবী এ চিকিৎসককে বাঁচাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ চৌধুরী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাঃ নুরুল ইসলামকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বিদেশে তাকে উন্নত চিকিৎসা করা হলে সুস্থ হয়ে ফিরবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে সবাইকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করছি।’



রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়