ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মেগা প্রকল্পে মেগা স্বপ্নের হাতছানি’

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মেগা প্রকল্পে মেগা স্বপ্নের হাতছানি’

নৃপেন রায় : টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ খ্যাত ১০ মেগা প্রকল্প ‘মেগা স্বপ্নের’ হাতছানি দিচ্ছে । যে কারণে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ বেশ গতি পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ  প্রকল্পগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নে সচেষ্ট আছেন। ইতোমধ্যে মেগা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

১৪ আগস্ট শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পায়রা বন্দরের মাধ্যমে দেশে উন্নয়নের নতুন জোয়ার উন্মোচিত হবে। নতুন এ বন্দর ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য গড়ে উঠবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সমগ্র বাংলাদেশ এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্যও একটা শুভ সূচনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করব, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। বঙ্গবন্ধু তার সারাজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এখন জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।’

দেশে পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, এমআরটি-৬ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। যার সভাপতি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজ ও নদী শাসন কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ জেলায় লাগবে উন্নতির হাওয়া। সরকারের চলতি মেয়াদে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। এ সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩২ শতাংশ এবং প্রায় ২৪ ভাগ মূল সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়েছে। রাজধানীবাসীকে যানজটের নাকাল অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে নেয়া হয়েছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করা হবে।

তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির ৩৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৮০ শতাংশ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজে অগ্রগতি হয়েছে।

প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর শুরু হয়েছে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। একমাত্র সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলো আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে কিংবা এরও আগে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে নৌপথ রক্ষায় ড্রেজিং ও নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ওপর। এতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের গতি বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের অক্টোবরেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফর করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মিলিত হবেন। এই সফরেই বাংলাদেশের সকল নদীর ড্রেজিংয়ের জন্য চীনা সরকার একটি চুক্তি হবে।

স্বপ্নের সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু : পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে সম্পাদিত প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু নির্মাণ কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া অবস্থানে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১৩ দিন পর ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম সভায় পদ্মা সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাওনসেল ইকোম’কে নিয়োগ দেয় সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে ১০ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল এ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে। সেতুর ওপর তলা দিয়ে যানবাহন ও নিচ তলা দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প : এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগের উন্নয়ন করা। এ প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং এতে নিজস্ব খাত (জিওবি) থেকে ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া চীনা সরকারের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতির অর্থায়নে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক দিয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও সমীক্ষা ও বিস্তারিত ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়ন সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য মোট দৈর্ঘ্যকে চারটি সেকশনে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সেকশন- ১, ঢাকা-গেন্ডারিয়া; সেকশন-২, গেন্ডারিয়া-মাওয়া; সেকশন-৩, মাওয়া-ভাঙ্গা জংশন-ভাঙ্গা; সেকশন-৪, ভাঙ্গা জংশন-যশোর।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন (ডে-ওয়ান) হতে মাওয়ায় ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে ভাঙ্গা স্টেশন হতে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সেকশনের কাজ আগামী আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাওয়া-ভাঙ্গা রেললাইন নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-ফরিদপুর-পাঁচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কে সঙ্গে সংযুক্ত হবে। প্রকল্পের অন্য তিনটি সেকশনের নির্মাণ কাজ আগামী সাড়ে চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় ১০০ ব্রডগেজ যাত্রীবাহী বগি সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৭০০ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ২০০ দশমিক ৪৮ একর এবং সেতু কর্তৃপক্ষের ৬৮ একর ভূমি স্থানান্তর করা হবে।

দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ : প্রকল্পটি শুরু হয়েছে গত ২০১০ সালের জুন মাসে এবং আগামী ২০২২ সালের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজস্ব (জিওবি) ৪ হাজার ৯১৯ দশমিক ৭ কোটি টাকা এবং এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পের সাহায্যের পরিমাণ ১৩ হাজার ১১৫ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ৩১৩ দশমিক ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিপরীতে প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ ভাগ। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৬১৩ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভবিষ্যত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। এতে আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে সিল্ক রুট (চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে বিদ্যমান রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প : পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গত ২০১১ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি (আইজিএ) প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য ২০১৩ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট চুক্তির ভিত্তিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ মার্চ ২০১৩ থেকে জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে জিওবি ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্যের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৪ হাজার ৪০১ কোটি ২ লাখ টাকা।

এতে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্পটিতে দেশীয় ও আšর্জাতিক সকল বাধ্যবাধকতা বিবেচনায় এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পাদন করা হচ্ছে। এদিকে, মধ্যমেয়াদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে গত ২৫ ডিসেম্বর জেনারেল কন্ট্রাক্ট ফর রূপপুর (এনপিপি) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মূল্য ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১ দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিওবি হতে প্রদান করা হবে এবং অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ বা ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাশিয়ান ফেডারেশন হতে ঋণ গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রয়োজনে সাইটের নিকটবর্তী পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চর হতে আরও ৮০০ একর জমি প্রকল্পের অনুকূলে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার : এটি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান স্বল্পতার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা হতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্যের পরিমাণ ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৪২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এতে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ ভাগ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি) : ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন, নিরাপদ কার্যকরী দক্ষ পরিবহন ব্যবস্থা চালু এবং গণপরিবহন সুবিধা নিশ্চিতকরণে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় মেট্রোরেল তথা এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১২ হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত। দ্রুত প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করা হয়েছে।

মোট আটটি কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। এই প্রকল্পে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে জিওবি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ এবং জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পে সাহায্যের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৭৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং এতে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ : দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বন্দর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০১৮ সাল নাগাদ বন্দরটি পুরোদমে চালু হতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। এ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত। প্রাথমিক কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য প্রস্তুত করা প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর : কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প তিনটি ধাপে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করার পর তা সম্পন্ন করতে পাঁচ বছর প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে কাজ যথাক্রমে ২০৩৫ ও ২০৫৫ সাল নাগাদ সমাপ্তির পরিকল্পনা রয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হবে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পটি জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জি-টু-জি পদ্ধতিতে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও দুবাইয়ের চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব পেশ করেছে।

মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাগেরহাট জেলার রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) ৩০ আগস্ট ২০১০ সালে ৫০-৫০ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যৌথ একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ইসিএ ১০ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ ভাগ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২ দশমিক ১ ভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। ভূমি প্রক্রিয়াকরণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ঢাল সুরক্ষা প্রভৃতি কার্যক্রমের বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। এছাড়া ইপিসি চুক্তির জন্য সময় নির্ধারণ না হওয়ায় এখনও মূল ইপিসি প্ল্যান্টের কাজ শুরু করা হয়নি। মধ্য মেয়াদে এ প্রকল্পে ১১৪ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার যা ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এবং ইকুইটি থেকে নির্বাহ করা হবে।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ : দেশে বিদ্যমান গ্যাসের বিকল্প হিসেবে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হতে পারে। এলএনজি ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের জন্য কাতারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই চুক্তিটি সম্পন্ন হলে এলএনজির প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করা সম্ভব হবে। কক্সবাজারে মহেশখালী সমুদ্র উপকূল হতে পশ্চিম দিকে গভীর সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে যার এলএনজি ধারণ ক্ষমতা ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এবং রি-গ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ৫০০ এমএমএসসিএফডি। প্রকল্পের বিস্তারিত ডিজাইন টার্মিনাল কোম্পানি কর্তৃক সম্পন্ন করা হচ্ছে।

প্রাক্কলিত ব্যয় হিসেবে এলএনজি আমদানি ও ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালন ব্যয় বাবদ বছরে প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার এবং ভ্যাট, ট্যাক্স বাবদ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে চালু করা হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এনআর/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়