ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেয়েটি পিতৃপরিচয় চেয়েছিল || ইমদাদুল হক মিলন

ইমদাদুল হক মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ২১ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 মেয়েটি পিতৃপরিচয় চেয়েছিল || ইমদাদুল হক মিলন

অলঙ্করণ : শতাব্দী জাহিদ

ভাইজান, পাগলনিটা তো আবার আসছে।

সময় : সকাল দশটা।

স্থান : বাজিতপুর উপজেলার বামুনগাঁও গ্রাম। শহিদদের বাড়ি।

আমি ছিলাম দোতলার দক্ষিণ দিককার রুমে। ওই রুমেই থাকার ব্যবস্থা। শহিদদের বাড়ি গ্রামে হলেও সুযোগ-সুবিধা শহরের মতোই। দোতলা বিলডিং বেশ আধুনিক ধরনের। রুমগুলো সুন্দর। আমার রুমের সঙ্গে চমৎকার বাথরুম। পল্লীবিদ্যুৎ আছে, জেনারেটরও আছে। বাথরুমের কল-শাওয়ার সবই ব্যবহার করা যায়। হাই কমোড ফ্লাশ করলে বিপুল বেগে পানি আসে। বাথরুমের দেয়াল আর মেঝেতে আকাশি রঙের টাইলস বসানো। বেসিন-কমোড সবই আকাশি রঙের এবং বেশ দামি। শহিদরা যে অবস্থাপন্ন, বাড়ির দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

খানিক আগে গোসল-নাশতা সেরে নিচে নেমেছি। শহিদদের বাড়ি পুবমুখী। পুবদিকে গেটের পাশে একতলা চমৎকার বসার ঘর। সেই ঘরে এসে বসেছি। শহিদের ছোট বোন মিথিলা একমগ জেসমিন টি এনে দিয়েছে। এ সময় শহিদ এসে কথাটা বলল। আমি অবাক হয়ে শহিদের মুখের দিকে তাকালাম। পাগলনিটা মানে? ওই যে কাল সন্ধ্যাবেলা আসছিল। আমি বাড়িতে ঢুকতে দেই নাই, আপনার সঙ্গে দেখা করতে দেই নাই। রাতেরবেলা বললাম না আপনারে!

হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ভাইরে, আমি পাগল খুব ভয় পাই।

শহিদ হাসল। না ভাইজান, আপনি যা ভাবছেন তা না। বকুল তেমন পাগল না।

বকুল নাকি নাম?

জি। ওর একটা সমস্যা আছে। সমস্যাটা বাপের পরিচয় নিয়া। ওই এক জিনিস নিয়া গ্রামের ময়মুরব্বি সবাইরে ও জ্বালাইয়া খাইতেছে। এক-দেড় বছর ধইরা এই কাণ্ডটা করতাছে। এই জন্য ওরে সবাই পাগলনি বলে। দেখলেই এড়াইয়া যায়। তবে ও কিন্তু ভাইজান ভালো ঘরের মেয়ে। ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছে।

তাই নাকি?

জি ভাইজান। ফালতু মাইয়া না।

আমি চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম, বাবার পরিচয়ের সমস্যা কী?

শহিদ আবার হাসল। ওইটা ভাইজান সিনামার মতো ঘটনা। ওর মুখ থেকে শুনলে আপনার মজা লাগব। ডাকব পাগলনিরে? ও কিন্তু ওই সব কথা বলতেই আপনার কাছে আসছে।

কিন্তু এসব ব্যাপারে আমি কী করব? আমি তো তোমাদের গ্রামের লোক না!

তা না হন, ও তো আপনার পরিচয় পাইছে।

কীভাবে?

শহিদ চেয়ার টেনে বসল। ভাইজানে বলে কী! গ্রামে কলেজ করতেছেন আমার আব্বায়। সেই কলেজের উদ্বোধন করতে আসছেন আপনি। তিন দিন ধরে দেশগ্রামে মাইকিং হচ্ছে। শুধু আমাদের গ্রাম না, বাজিতপুর উপজেলার সব গ্রামের লোকজনই আসবে। বিকাল তিনটায় অনুষ্ঠান, দেখবেন তার আগেই শয়ে শয়ে লোক চইলা আসবে।

আমার জন্য এত লাক কেন আসবে? আমি তো সিনেমার লোক না। আমি একজন লেখক।

তারপরও ভাইজান, লোকে আপনারে চেনে। গ্রামদেশে এখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন। আপনার নাটক দেখে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপনি কথাবার্তা বলেন, সেই সব দেখে। সিনেমা-টেলিভিশনের লোকজনরে বাস্তবে দেখার জন্য সাধারণ লোকজন পাগল হয়ে যায়। গতকাল বিকালে আপনি আইসা পৌঁছাইছেন এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বহুত মানুষজন কিন্তু বাড়িতে আসছিল। কাওরে আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে দেই নাই। বলছি, ভাইজানে ম্যালা জার্নি কইরা আসছেন, তিনি খুব ক্লান্ত। অনুষ্ঠানের আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হইব না। বকুল পাগলনি তো ঘণ্টার ওপর বইসা ছিল।

কোথায় বসেছিল?

গেটের সামনে। এখনও বইসা আছে।

আসছে কখন?

তিন-চার ঘণ্টা আগে।

বলো কী?

জি ভাইজান। রোদ্র ওঠার আগে থেকেই নাকি আমাদের বাড়ির গেটের সামনে আইসা বইসা রইছে। আমি তাড়ায়া দেওয়ার চেষ্টা করছি, খুব কান্নাকাটি করল। আপনার সঙ্গে দেখা সে করবই। কী করি বলেন তো?

একটি মেয়ে কাল সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঘণ্টাখানেক বসেছিল, আজও তিন-চার ঘণ্টা ধরে বসে আছে, লেখাপড়া জানা মেয়ে, ভদ্র পরিবারের, সবাই ঠাট্টা করে পাগলনি বলে, আসলে সে তেমন পাগল না, তার সমস্যা পিতৃপরিচয়ের। আমার সঙ্গে কেন দেখা করতে চায়, কী বলতে চায় অবশ্যই আমার তা শোনা উচিত। কাল যখন বসেছিল তখন জানলে কালই আমি তার সঙ্গে কথা বলতাম।

শহিদকে বললাম, ডাকো মেয়েটিকে।

সঙ্গে সঙ্গে বকুলকে ডেকে আনল শহিদ। তাকে দেখে আমি একটু থতমত খেলাম। শ্যামলা রঙের মিষ্টি চেহারার মেয়ে। লম্বা, ছিপছিপে গড়ন। ফিরোজা রঙের সস্তা সালোয়ার-কামিজ পরা। সাদা ওড়নায় ঘোমটা দিয়ে রেখেছে। মুখটা খুবই করুণ, বিষণ্ন। এই ধরনের মুখের দিকে তাকালেই মায়া লাগে।

ঘরে ঢুকেই পায়ে হাত দিয়ে সে আমাকে সালাম করল। আমি বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়িয়েছি। আরে কী করছ? বসো, বসো।

মেঝেতে বেশ গুছিয়ে বসল বকুল। চোখ দুটো ডাগর কিন্তু চোখের কোলে গাঢ় হয়ে কালি পড়েছে। আমার দিকে এমন অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল, ওই চোখের দিকে আমি আর তাকাতে পারি না। বুক তোলপাড় করে।

এ রকম একটি মেয়েকে সবাই পাগলনি বলে!

চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বকুলের দিকে তাকালাম। নাশতা করেছ?

বকুল থতমত খেল। জি?

শুনলাম খুব ভোরে এসেছ। নিশ্চয় নাশতা করা হয়নি।

বকুল পরিষ্কার গলায় বলল, না হোক, কোনও অসুবিধা নাই ভাইজান। আমি শুধু আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে আসছি। কথাটা বলেই চলে যাব। বেশি বিরক্ত করব না।

আমি শহিদের দিকে তাকালাম। শহিদ, নাশতার ব্যবস্থা করো।

আমার এই ধরনের আচরণ একেবারেই আশা করেনি শহিদ, সে প্রথমে যেন একটা ধাক্কা খেল, তারপর ভেতরবাড়ির দিকে ছুটে যেতে যেতে বলল, জি ভাইজান জি। এখনই করতেছি।

বকুল অপলক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ দুটো ছলছল করছে। আমি তাকাতেই বলল, এমন মায়া আমারে কেউ কোনও দিন করে নাই ভাইজান। আইজ মনে হইতেছে, যেই আশা করে আমি আপনার কাছে আসছি, আল্লাহ মনে হয় আশা পূরণ করব।

সমস্যাটা বলো, আমি শুনব।

একটু সময় লাগবে ভাইজান। আপনে রাগ করবেন না তো?

না না, বলো। যদি কাল সন্ধ্যায় শুনতাম তুমি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য বসে আছ, তাহলে তখনি তোমার সঙ্গে কথা বলতাম।

একবার ভাবছিলাম সারা রাইত এই বাড়ির দরজায় বইসা থাকি। তাহলে কোনও না কোনও সময় সুযোগ একটা আসবই। কিন্তু মার কথা ভাইবা থাকতে পারি নাই। মার বড় অসুখ। সে আমারে নিয়া চিন্তা করব। এ জন্য তখন চইলা গেছি। তবে রাত্রে আর ঘুমাই নাই। ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিছি। আমাদের বাড়িটা ভাইজান এই গ্রামের একেবারে শেষ দিকে। হাঁইটা আসতে সমায় লাগে।

বকুলের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে চিন্তিত হলাম। সর্বনাশ! এই মেয়ে তো অনেক কিছু আশা করে এসেছে। তার সেই আশা পূরণ করার ক্ষমতা কি আমার আছে? শহিদ বলেছে, বকুলের সমস্যা তার পিতৃপরিচয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে কী উপকার মানুষের করা যায়! তা ছাড়া ঘটনাটাও তো আমি জানি না।

গম্ভীর গলায় বললাম, সমস্যাটা বলো, শুনি।

শহিদ ভাইজান আপনেরে বলে নাই?

যেটুকু বলেছে তাতে কিছু বুঝতে পারিনি।

সমস্যা ভাইজান বাবারে নিয়া। আমার মার প্রথমে একটা বিয়া হইছিল, সেই ঘরে কোনও ছেলেমেয়ে হয় নাই। মার সেই স্বামীর হার্টের অসুখ ছিল। তবে অবস্থা ভালো ছিল তার, টাকা-পয়সা, জমিজমা ছিল বিস্তর। আমার মার জন্য আলাদা ছোট্ট একটা বাড়িও সে করছিল। হার্টের অসুখ ধরা পড়ার পর মার নামে ষোলো বিঘা জমিন সে লেইখা দিছিল। সেই জমিন ভাগে চাষ করত গ্রামের আরেক গিরস্ত। তার নাম রহমান। সংসারে বউ আর দুইটা ছেলে। নিজের তিন-চাইর বিঘা জমিন তার আছে, সেই জমিনের আয়ে সংসার ভালো চলে না দেইখা আমার মার নামের ষোলো বিঘা জমিন ভাগে চাষ করত। জমিগুলির ওপরে তার খুব লোভ। দামি জমিন। ফসল ভালো হয়। মা’র স্বামী মারা যাওয়ার পর রহমান মিয়া মারে বিবাহের জন্য পটাইতে লাগল।

এক বউ থাকার পরও তোমার মাকে বিয়ে করতে চাইল?

জি ভাইজান। ওই যে ষোলোবিঘা জমির লোভ! মায়ও মনে হয় রহমান মিয়ারে পছন্দ করত। বছরখানেকের মাথায় বিবাহ হয়ে গেল, কিন্তু মারে নিজের বাড়িতে সে নিল না। আগের স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া বাড়িতেই থাকল মায়। রহমান মিয়া মাঝে মাঝে আইসা থাকে। আমার মায় খুবই সরল মানুষ। রহমান মিয়া পটাইয়া পাটাইয়া তার কাছ থিকা একদিন ষোলো বিঘা জমিন দলিল কইরা নিল। আমি তখন পেটে। আমার জন্মের দুই-তিন মাস আগে আমার মারে সে তালাক দিল।

খুবই বাজে লোক দেখছি!

শহিদ এসে ঢুকল। তার পেছন পেছন এল কাজের লোক মোতালেব। মোতালেবের দুহাতে ধরা ট্রেতে পরোটা, মুরগির ভুনা মাংস, দুটো বড় বড় রসগোল্লা আরেক গ্লাস পানি। অর্থাৎ আমাকে যে নাশতা দেওয়া হয়েছে তাই।

দেখে খুশি হলাম। কোনও কোনও বাড়িতে দেখেছি মূল অতিথিকে যা খেতে দেওয়া হয় অন্যদের তা দেওয়া হয় না। এই বাড়িতে সেই ফাজলামোটা নেই।

বকুলকে বললাম, খাও বকুল।

বকুল বিনীত গলায় বলল, একটু পরে খাই ভাইজান। তার আগে কথাগুলি বলি।

খেতে খেতেও বলতে পারো।

না ভাইজান, সেইটা বেদ্দপি হইব। আমার মায় ভাইজান যেমুন সরলসোজা, তেমুন অভিমানি। রহমান মিয়ার এমন কাম দেইখা একেবারে চুপচাপ হইয়া গেল। ভাইবেরাদার, মা-বাপ সবাই তখন তার আছে কিন্তু কেউর কাছে সে গেল না। ওই বাড়িতেই পইড়া থাকল। আমারে জন্ম দিল, এর বাড়ি ওর বাড়ি ঝিয়ের কাজ কইরা আমারে বড় করল। ইসকুলে পড়াইল। তারপর এমুন অসুখ হইল, হাঁটাচলা করতে পারে, কামকাইজ করতে পারে না।

তাহলে তোমাদের চলে কী করে?

এখন সংসার চালাই আমি। নাইন পর্যন্ত পড়ছি, গ্রামের ওয়ান-টুর ছেলেমেয়ে পড়াই বাড়ি বাড়ি গিয়া। ওতে কোনও রকমে চলি। কিন্তু ভাইজান, সমস্যাটা অন্য। আমার বিবাহের বয়েস হইছে। সমন্ধ দুই-চাইরটা আসে, বাপের পরিচয় নাই দেখে বিবাহ ভেঙ্গে যায়।

বাপের পরিচয় নেই মানে? রহমান মিয়া তোমার বাবা! তোমার মার সঙ্গে যখন তার তালাক হয় তখন তুমি ভূমিষ্ঠ হওনি ঠিকই, কিন্তু মায়ের পেটে তো ছিলে?

এইটা ভাইজান সে স্বীকার করে না।

বলো কী?

জি। আমি নিজে তার বাড়িতে গেছি, সে আমারে দূর দূর কইরা তাড়ায়া দিছে। আমারে মাইনা নেয় নাই। গেরামের চেয়ারম্যান-মেম্বর-ময়মুরব্বি সবার কাছে গেছি, কেউ আমারে সাহায্য করে নাই।

কেন?

রহমান মিয়া এখন অনেক জাগা-সম্পত্তি আর টাকা-পয়সার মালিক। তার দুই ছেলের খুব প্রভাব গ্রামে, দুই ভাই পিঠাপিঠি, দুইজনেই শহিদ ভাইজানের বন্ধু। তাগো রাইখা কে আমার পক্ষে দাঁড়াইব, কে আমার হইয়া কথা বলব? আমার বিবাহ হোক না হোক সেইটা বড় কথা না ভাইজান, যেমনে বাঁইচা আছি থাকলাম, কিন্তু জন্মদাতা পিতার পরিচয়টা থাকব না এইটা কেমুন কথা?

আমি ফ্যালফ্যাল করে বকুলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

বকুল বলল, পিতার পরিচয় চাইতে চাইতে আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইজান। যে দেখে সেই আমারে দেইখা এখন হাসে। আমারে কয় পাগলনি।

হতাশ গলায় বললাম, কিন্তু আমি তোমাকে কী সাহায্য করতে পারি বকুল? মাথায় কিছু আসছে না। যদি রহমান মিয়াকে ডেকে অনুরোধ করি, সে কি আমার কথা শুনবে?

না, তা শুনব না ভাইজান। সে খুব কঠিন লোক।

তাহলে আমি তোমার জন্য কী করতে পারি বলো?

আমি আপনার সম্পর্কে শুনছি ভাইজান। আপনে অনেক নাম করা লোক। আপনে বই লেখেন, টিভিতে নাটক লেখেন, পেপারে লেখেন। আমার ঘটনাটা আপনে একটা পেপারে লেখেন। দেশের মানুষ জানুক, সরকার জানুক। তাইলে নিশ্চই কেউ না কেউ আমারে সাহায্য করতে আসব।

দু’হাতে আমার পা জড়িয়ে ধরল বকুল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার এই উপকারটা করেন ভাইজান, এই উপকারটা করেন। বাপের কাছে টাকা-পয়সা, ধনসম্পত্তি কিচ্ছু আমি চাই না, চাই শুধু পরিচয়, পিতৃপরিচয়। আমি যে তার মেয়ে এইটা সে মাইনা নেউক। আর কিছু চাই না।

আমি তখন পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে আছি। বকুলকে যে পা থেকে ছাড়াব, কিছু না কিছু সান্ত্বনা দেব, সেই ক্ষমতা নেই।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়