যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ গণতন্ত্রের কথা বলে যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের মানুষের জন্য যখন কাজ করতে এসেছি দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ দেশের জন্য কাজ করে যাব। গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে যাব। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সূচনা বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময়ে সামরিক সরকার থেকে দল গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারপর দল গঠনের মাধ্যমে উর্দি পরে ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক নেতা হয়। এরপর দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। এ ধরনের একটা সামরিক শাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার সূচনা এই দেশে চালু হয়। সেই থেকেই কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, সেই হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জিয়াউর রহমান শুরু করল অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধ করার প্রক্রিয়া। এরপর জেনারেল এরশাদও এসে একি কাণ্ড ঘটাল। তারপর খালেদা জিয়া। আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করলাম। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক ধারাটাও আবার ব্যাহত করল খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। যখন ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে। যদিও বাংলাদেশের মানুষ সেই নির্বাচন মেনে নেয়নি। মাত্র দেড় মাসের মাথার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে উৎখাত করল। সে পদত্যাগে বাধ্য হলো। এরপর ’৯৬ সালের ১২ জুন মাসে নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং আমরা সরকারে আসি।
মূলত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একটি দেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা যায় এবং দেশের মানুষ যে এর সুফল পেতে পারে এবং সরকারের দায়িত্বে থেকে যে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, উন্নয়ন করা যায়- এটা প্রথম এই দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারল।
সামরিক সরকারগুলোর বিভিন্ন মেয়াদে সীমাহীন দুর্নীতি ও অপরাজনীতির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, উচ্চ আদালতের বিচারকদের বয়স ৬২ থেকে ৬৫ করা হয়েছিল। এরপর আবার সেটাকে কমিয়ে দিয়ে ৬৫ থেকে ৬২ করিয়ে দিয়ে বিচারক বিদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এটা একবার না, অনেকবারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। বিএনপির জিয়াউর রহমান এ ঘটনা ঘটায়। আবার এজলাসে প্রধান বিচারপতি বসে আছেন, তিনি জানেনও তাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। একজন বিচারপতিকে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হলো। শুধু তাই নয়, আমরা ’৯৬ সালে সরকারে এসে যতজন বিচারক নিয়োগ দিয়েছিলাম, একই দিনে ১০ জন বিচারককে পত্রপাঠ বিদায় দেওয়া হয়। এরপর আবার ছয়জনকে। তারপর আরো কয়েকজনকে। এভাবে আমাদের নিয়োগকৃত সবাইকে বিদায় দিয়েছিল। তবে পরে রিট করে কয়েকজন ফিরে এসেছিল। এ জাতীয় ঘটনাও ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমারা ’৯৬ সালে এসে সবসময় চেষ্টা করেছি, জনগণ যাতে সরকারের সেবা পায়। কারণ জনগণের সেবা করাই সরকারের কাজ। আমরা কিন্তু সেটার ওপরই গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়াও নির্বাচন কীভাবে স্বচ্ছ করা যায়, জবাবদিহি করা যায়, জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, তাদের ভোটের অধিকার তারা যেন প্রয়োগ করতে পারে, আমরা কিন্তু সেই আন্দোলন শুরু করি। আমরাই জনগণের ভোট-ভাতের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করি। আমরাই স্লোগান তুলি, আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। আওয়ামী লীগ সব সময় এটাই চেয়েছে।
বাংলাদেশে অনেক সময় নির্বাচনের নামে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে ২০০১ সালের সেই নির্বাচনের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু সবসময় গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে তার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমাকে অনেকে বলেছে, আমি ঢাকায় নামলেই আমাকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে বা আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলি, ওটা নিয়ে আমি পরোয়া করি না। জীবনকে বাজি রেখেই এসেছি ’৭৫ সালের পর। কারণ বাবা-মা সবাই মারা গেছেন। আমার কেউ নেই। আমি আর আমার ছোট বোন। দেশের মানুষের জন্য যখন কাজ করতে এসেছি, তো কে মারবে, না মারবে ওই চিন্তা করে তো লাভ নাই।আমি তো জানি, মারবেই। ওটা নিয়ে এত চিন্তা করার কী আছে। যতক্ষণ আমার শ্বাস আছে ততক্ষণ আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব এবং গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে যাব। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা জয়ী হয়ে দেশের উন্নয়ন করেছি। অন্তত এটুকু বলতে পারি, আজকে দেশটা যে এগিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছিল বলেই এই দেশের উন্নতি হয়েছে। কারণ আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন করেছি। কাজেই আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সবসময় মনে করি, রাজনীতি নিজের জন্য না। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ যেন ভাল থাকে, আমরা সেটাই চাই।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ অক্টোবর ২০১৭/নৃপেন/মুশফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন