ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৭ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

রোহিঙ্গাদের নিজভূমে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা এ মাসের মাঝামাঝি (১৫ নভেম্বর) থেকে। এদিন দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চলছে। রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মন্ত্রীরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিবও । সেখানে দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।

এরপর ৩০ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। এ বৈঠকে নির্ধারিত হয় ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। এক্ষেত্রে শুরুতে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। ওই দেশের কর্তৃপক্ষ তরফে বলা হয়েছে, এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সপ্তাহে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

কিন্তু এ উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা এর আগেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করেনি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, এ বছরের ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে তা শুরু করেনি মিয়ানমার। দেশে ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গারা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করতে পারবে কি না- সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে। তারা আবারো নিপীড়নের শিকার হতে পারে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালায় মিয়ানমার বাহিনী। তাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মিয়ানমারের বর্বর এ অভিযান ছিল মূলতঃ জাতিগত নির্মূল অভিযান। এ কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কাজ শুরু করার কথা বলে দেশটি।

কিন্তু তড়িঘড়ি করে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে আবারো শোচনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। রোহিঙ্গারা যে সহিংসতা ও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসেছে, মিয়ানমারে ফিরে গেলে আবারো একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- মিয়ানমারে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা ও প্রথা বাতিল করা এবং সংকটের কারণ খুঁজে সেগুলোর সমাধান করা; নাগরিকত্ব ও সুরক্ষা প্রদানসহ প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নৃশংসতা প্রতিরোধে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশের আলোকে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

আমরা মনে করি, এ মাসে যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তাতে রোহিঙ্গারা যেন আবার ফিরে না আসে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ফিরে গেলেও পুনরায় তারা নির্যাতিত-নিগৃহীত হলে, তাদের ওপর হামলা হলে তারা আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে। কাজেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার পাশাপাশি সে দেশে তাদের নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টির কাজও করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। এ জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ জন্য দেশটির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও নজরদারী রাখা প্রয়োজন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ নভেম্বর ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়