ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যমুনায় ডুবোচরে আটকা পণ্যবাহী ১৩০ জাহাজ

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যমুনায় ডুবোচরে আটকা পণ্যবাহী ১৩০ জাহাজ

পাবনা প্রতিনিধি : নাব্যতা সংকটের কারণে যমুনার আরিচা ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে আটকে আছে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরগামী ১৩০টি জাহাজ। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে রাসায়নিক সার, ক্লিংকার, জ্বালানি তেল, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে যাচ্ছিল।

বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথের পাঁচটি পয়েন্টে নাব্যতা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে পণ্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানি অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ।

এ নৌপথে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের যুগ্ম পরিচালক আব্দুস ছালাম জানান, প্রতি বছর এ সময় দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌ-চ্যানেলে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। তবে মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, মোহনগঞ্জ, কৈটোলা ও চর পেঁচাকোলা পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ থেকে ৬ ফুটে। এই নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো জানান, পদ্মা ও যমুনা নদীতে প্রতিদিন পানি কমছে। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য দুটি ড্রেজার পলি অপসারন করছে। বাঘাবাড়ী নৌ-পথে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুট ড্রাফটের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কার্গো জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব মাস্টার জানান, বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথের মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, মোহনগঞ্জ, কৈটোলা ও চর পেঁচাকোলা পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ থেকে ৬ ফুট। এতে নাব্যতা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, ক্লিংকার, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ১৩০টি কার্গো জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে যেতে পারছে না। গত প্রায় ১০ দিন ধরে কার্গো জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরের ৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে পাটুরিয়া, গোয়ালন্দ ও দৌলদিয়া পয়েন্টে নোঙর করে রয়েছে। প্রতিদিনই আটকে পড়া জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে লাইটারেজের মাধ্যমে প্রতিদিন ২-৩টি জাহাজ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়ছে।

এদিকে লাইটারেজ জাহাজ সংকটে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আব্দুল ওহাব আরো বলেন, নৌ-চ্যানেলটি সচল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু যথাসময়ে এ নৌচ্যানেল ড্রেজিং না করায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের সেচনির্ভর বোরো আবাদ।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের লেবার এজেন্ট আব্দুল মজিদ ও আবুল হোসেন জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে গত প্রায় দুই মাস ধরে সরাসরি কোনো জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না। লাইটারেজ করে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্য বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের কাজকর্ম কমে গেছে। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই সঙ্গে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দর লেবার সরদার লুৎফর রহমান বলেন, এ মওসুমে প্রতিদিন বন্দরে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করত। বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পারায় ৫০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাঘাবাড়ী বন্দরমুখী রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না, পাটুরিয়া-দৌলদিয়ায় জাহাজের রাসায়নিক সার, ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য অর্ধেকের বেশি খালাস করে ছোট ছোট নৌকায় করে বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের জাহাজ প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাঘাবাড়ী পোর্ট অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ড্রেজিং চলছে, ২-৩ দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাঘাবাড়ী বাফারগুদাম ইনচার্জ সোলায়মান হোসেন বলেন, বন্দরের ৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে জাহাজ থেকে সার ছোট ছোট নৌকায় লাইটারেজ করে বাঘাবাড়ীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে বাফার গুদামগুলোতে আপৎকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। তবে আগের মজুদ থেকে রাসায়নিক সার সরবরাহ অব্যাহত থাকায় এখনো এ অঞ্চলে সারের কোনো সংকট দেখা দেয়নি।

 





রাইজিংবিডি/পাবনা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/শাহীন রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়