ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যশোরে চলতি মাসে ৯ খুন

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যশোরে চলতি মাসে ৯ খুন

যশোর প্রতিনিধি: যশোরে খুন খারাবি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চলতি মাসে জেলায় হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ৯ জন। এরমধ্যে যশোর সদরেই খুন হয়েছেন ৬ জন।

খুন খারাবি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তুচ্ছ ঘটনায় ঘটছে খুনের মতো ঘটনা।

জুনের প্রথম দিনে শার্শা উপজেলার মাদ্রাসাশিক্ষক হাফেজ হাফিজুর রহমান ওই মাদ্রাসার ছাত্র শাহ পরানকে বলাৎকারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। শাহ পরান এ ঘটনা মাদ্রাসা কমিটিকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলায় শিক্ষক হাফিজুর নিজ বাড়িতে এনে তাকে হত্যা করেন। পরদিন ২ জুন ওই বাড়ি থেকে শাহ পরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার ১০দিন পর ১১ জুন তাকে খুলনার একটি কওমি মাদ্রাসা থেকে আটক করা হয়।

৬ জুন সন্ধ্যায় যশোর শহরের রেলবাজার (গাড়োয়ানপট্টি) এলাকায় কিশোর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় আব্দুল্লাহ খান নামে আরেক কিশোর। নিহত আব্দুল্লাহ ওই এলাকার মুরাদ খানের ছেলে। এক সন্ত্রাসীকে মা তুলে গালি দেওয়ার কারণে তাকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৫ কিশোর সন্ত্রাসী পরে আটক হয়।

এ হত্যাকান্ডের দু’দিন পর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পিটিয়ে ও কীটনাশক খাইয়ে হত্যা করেন দু সন্তানের জননী পলি খাতুনকে।

এর ৫দিন পর যশোর শহরের শংকরপুর সন্ন্যাসী দিঘিরপাড়ে কিশোর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় ফেরদৌস হোসেন নামে এক যুবক। মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কিলার হিসেবে চিহ্নিত কিশোর সন্ত্রাসী সাব্বিরকে আটক করতে পারেনি।

এই হত্যাকান্ডের একদিন পর চৌগাছা উপজেলার লস্কারপুর ভোগের বিলে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ কর্মী মমিনুর রহমান মমিনকে। বিল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের আরেকটি গ্রুপের সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে।

এর পরদিন ১৫ জুন সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলার মহাকালের আমভাঙ্গা খাল থেকে রফিকুল ইসলাম এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের পনিক বিশ্বাসের ছেলে।

১৮ জুন সন্ধ্যায় যশোর শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গণপিটুনিতে নিহত হয় সানি নামে এক সন্ত্রাসী। প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী নয়নের ওপর বোমা হামলা চালাতে গিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হওয়ার পর পুলিশ নয়ন ও আনন্দ নামে উভয় পক্ষের দুই সন্ত্রাসীকে আটক করে।

 এ ঘটনার দু’ দিন পর ২০ জুন সকালে শহরতলীর  খোলাডাঙ্গা গাজীরবাজার থেকে সিনবাদ নামে একজন হোটেল শ্রমিকের ব্যারেলভর্তি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের রাতে শহরের মানিকতলায় তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে এলাকার কতিপয় সন্ত্রাসী। আধিপত্য বিস্তার ও চোরাই মোবাইল ফোন সংক্রান্ত ঘটনায় তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৩ জনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে পুলিশ।

২০ জুন বিকেলে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্যাসফিল্ডের কাছে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় মাদ্রাসাছাত্র সাজিদ হোসেন সম্রাট। মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দু’ জনকে আটক করতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু প্রকৃত খুনি এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, আগে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় পুলিশ নিয়মিত টহল দিতো। ডিবি পুলিশকেও মাইক্রোবাসে টহল দিতে দেখা যেত। পুলিশ কোন স্থানে বখাটে কিশোর অথবা যুবকদের আড্ডা দিতে দেখলে তল্লাশি চালাতো। সন্ধ্যার পর স্কুল-কলেজের ছাত্ররা বাইরে আড্ডা দিলে ছত্রভঙ্গ করে দিতো পুলিশ। মোটরসাইকেলে সন্দেহজনক চলাফেরা দেখলেই আরোহীদের ধরে দেহে তল্লাশি চালানো হত। যে কারণে পাড়া মহল্লায় বখাটে কিশোর অথবা যুবকেরা যত্রযত্র আড্ডা দিতে ভয় পেতো। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো শহরের পাড়া মহল্লায় পুলিশের জোরালো টহল দিতে দেখা যায়না।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়েলি ঘটনায় কেউ খুন হচ্ছে। অথবা তুচ্ছ ঘটনায় কাউকে খুন করা হচ্ছে। এ ধরনের খুন খারাবি রোধে পুলিশের টহলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে কোথায় কোন সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলে সেখানে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়াও হয়। সেখানে সংঘর্ষ হলে অথবা অপরাধ ঘটলে পুলিশ তা রোধ করতে পারলো কিনা- সেটা বিবেচ্য বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও জটলা দেখলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাছাড়া অপরাধীদের ছুরি-চাকুর ব্যবহার রোধেও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’



রাইজিংবিডি/ যশোর/২৫ জুন ২০১৯/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়