ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যে ছয় প্রযুক্তি শিল্পকলায় বিপ্লব এনেছে

মো. রায়হান কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪১, ২ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে ছয় প্রযুক্তি শিল্পকলায় বিপ্লব এনেছে

আঁকিয়ে রোবট ‘ভার্টওয়াকার’

মো.  রায়হান কবির : ঘুরে ফিরে সেই পুরোনো কথা, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ! আগে চিত্রশিল্পীরা একটি শিল্পকর্মের জন্য শ্রম ও মেধা ব্যয় করতেন, এখন ততটা না করলেও চলে।

আগে একটি পত্রিকার পাতায় কার্টুন ছাপার জন্যে ঘরে বসে কত পাতা নষ্ট করতে হতো, আর এখন? পাতা কি জিনিস সেটাই শিল্পীরা ভুলে গেছেন? যেমন এখনকার লেখকদের হাতের লেখা কেমন সেটা জানতে হলে তার অটোগ্রাফ খুঁজতে হয়, কেননা হাতে লেখার কোনো পান্ডুলিপি এখন আর পাওয়া যায় না।

তেমনি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে চিত্রশিল্পীদের সাধনা। এখন যেসব চিত্রশিল্পী একটু আধটু প্রযুক্তির জ্ঞান রাখেন, তাদের শিল্প সমন্ধে জ্ঞান কম থাকলেও চলে! কিভাবে? চলুন নিচের প্রযুক্তিগুলোর সঙ্গে পরিচয় হই, তাহলেই বুঝবেন।

ডিজিটাল কাগজ ও কলম : আগে একজন শিল্পীর কল্পনার রঙ ও ছবি ফুটিয়ে তুলতে কত রঙ, কত তুলি আর কত ক্যানভাস যে নষ্ট হতো তার হিসাব থাকতো না। কিন্তু এখন কোনো কিছু নষ্ট না করেই আপনার কল্পনার ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন একবারে নিখুঁতভাবে, স্বপ্নের চেয়েও সুন্দরভাবে! সিনটিক নামের একটি প্যাড আছে, যা আপনার ক্যানভাস বা কাগজ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এখানে আপনি ডিজিটাল কলম বা তুলিতে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন আপনার কল্পনা বা বাস্তবের ছবি। একই সঙ্গে ব্যাম্বো স্কেচ নামের পেন বা কলম আছে যা তুলির সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর আঁচর দিতে সক্ষম। ব্যাম্বো স্কেচ থাকলে আপনি আপনার আইপ্যাড বা আইফোনকেই বানাতে পারেন ক্যানভাস। ফলে যতবার খুশি রঙ ও শেড মিলিয়ে বা পাশাপাশি রেখে তুলনা করে এঁকে নিতে পারেন নিখুঁত ছবি।

লেনোক্স ডিগ্রি অব পারফেক্ট ক্যানভাস : একটি ক্যানভাসে আপনি দু’ধরনের ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারবেন! আরো পরিস্কার করে বললে, ক্যানভাসে আপনি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনার ছবিকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন। অর্থাৎ সাধারণ তাপমাত্রায় ছবি দেখা না গেলেও ক্যানভাসে ঠান্ডা বাতাস স্প্রে করলে ফুটে উঠবে আপনার শিল্পকর্ম! মানে ক্যানভাসেই কারচুপির খেলা, খেলা সম্ভব। আর সেজন্যে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে তাপমাত্রা সংশ্লিষ্ট বিশেষ রঙ। আর এই প্রযুক্তি এনেছে লেনোক্স নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। লেনোক্স সিবিএক্স২৭ইউএইচ এয়ার হ্যান্ডলার দিয়ে স্প্রে করলে বিশেষ রঙে আঁকা ছবি ফুটে উঠবে নতুবা সাধারণ তাপমাত্রায় আপনার ছবি দৃশ্যমান হবে না।

থ্রিডি প্রিন্টিং : থ্রিডি প্রিন্টিং আসার পর অনেক অসাধ্য সাধন হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া অনেক শিল্পকর্ম ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টিং এর সাহায্যে। এমনকি অন্ধ মানুষ যাতে বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম উপভোগ করতে পারে, সে জন্যে থ্রিডি প্রিন্টিং ছবিগুলোকে অনেকটা হাতে ছোঁয়ার মতো করে প্রিন্ট দেয়। যাতে ছবির বিষয়বস্তু হাতের স্পর্শে বোঝা যায়। তাছাড়া অনেক পুরোনো ভাস্কর্য বা নষ্ট ছবিও ফেরত আসছে এই প্রযুক্তির কল্যাণে। আর এখন তো থ্রিডি প্রিন্ট দিয়ে বাড়িও তৈরি করা হচ্ছে।

আঁকিয়ে রোবট : আড়াআড়ি ভাবে মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন। আর সেখানে ছবি আঁকা তো আরো কঠিন। তাই কোনো উঁচু দেয়াল বা বিল্ডিংয়ে ছবি আঁকার জন্যে এবার মানুষের বদলে কাজ করবে রোবট। এটি ঠিক মানুষের আকৃতির রোবট নয়। গোলাকার দেখতে অনেকটা প্লেটের মতো এই রোবটের একটি হাত রয়েছে, যেটার সাহায্যে অ্যাক্রিলিক রঙ নিয়ে আড়াআড়ি দেয়ালে সুন্দর ছবি আঁকতে পারে ‘ভার্টওয়াকার’ নামের এই রোবট। জার্মানির জুলিয়ান এডিন্যুয়ার এবং মাইকেল হাস নামের দুই চিত্রশিল্পী এর উদ্ভাবক। এর ফলে দেয়ালে বা যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো কঠিন সেখানে চিত্র আঁকার বাঁধাও আর রইলো না।

মোলস্কিন স্মার্ট নোটবুক : এটা একটু ভিন্ন প্রযুক্তি। এবার অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল। সরাসরি ডিজিটাল নয়। মানে আপনার হাতে আঁকা ছবিকে এটা ইমেজে রুপান্তর করে অ্যাডোবি ফটোশপের সাহায্যে তা সম্পাদনার সুযোগ করে দেয়।

ভিআর প্রযুক্তি : ভিআর এখন আর আকাশ ছোঁয়া প্রযুক্তি না। ভিআর এখন কম দামি মোবাইলেও ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন চিকিৎসা কাজেও ভিআর প্রযুক্তির ব্যবহার আছে। এমনকি, গতকাল থেকে শুরু হওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মাঠেও থাকছে ভিআর প্রযুক্তি। ভিআর দ্বারা এখন শিল্পকর্ম পাচ্ছে নতুন মাত্রা। হাতে আঁকা ছবি কিংবা শিল্পকর্ম ভিআরের মাধ্যমে উপস্থাপন এখন নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়