ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যেভাবে অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করল পুলিশ

রফিকুল ইসলাম কামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করল পুলিশ

শিশু নিয়ামতুল ইসলাম রিফাত

রফিকুল ইসলাম কামাল, সিলেট : সিলেট মহানগরীর বাগবাড়ি কানিশাইল এলাকা থেকে অপহৃত হয় শিশু নিয়ামতুল ইসলাম রিফাত (৫)।

গত শুক্রবার সকালে অপহৃত হওয়া রিফাতকে আজ রোববার দুপুরে লালমনিরহাট থেকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণের বিষয়টি জানার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিফাতকে উদ্ধারে সফলতা দেখিয়েছে পুলিশ।

এই উদ্ধার তৎপরতার মূলে ছিলেন সিলেট নগরীর কোতোয়ালি থানার এসি সাদেক কাউসার দস্তগীর। তার তৎপরতায় অপহৃত রিফাতকে উদ্ধার এবং অপহরণকারীরা শনাক্ত হয়েছে।

সাদেক কাউসার দস্তগীর জানান, এই অপহরণ চক্রের মূল হোতা হচ্ছেন স্বাধীন মিয়া (২৭)। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছের হাজীপাড়া গ্রামের মো. হযরত মিয়া ও সাহের বানুর ছেলে। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন সোহাগ ও মন্ডল নামের আরো দুজন।

তিনি আরো জানান, কানিশাইল রোডের ১০ নম্বর বাসার বাসিন্দা পিডিবির প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নেছার আহমেদের ছেলে রিফাত। অপহরণকারীরা নেছার আহমেদের পরিচিত, তার সঙ্গে কাজ করত।


                                                 রিফাতের মা-বাবা


আজ দুপুরে লালমনিরহাটে রিফাতকে উদ্ধারের পর সিলেট কোতোয়ালি থানায় তার মা স্বপ্না বেগমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। স্বপ্না বেগম বলেন, ‘গত শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে নাশতা খেয়ে রিফাত আমাকে বলে, মা আমি খেলে আসি। আশপাশের বাসার বাচ্চাদের সঙ্গে ও খেলছিল। সকাল ৯টার দিকে রিফাতকে অপহরণ করা হয়।’

তিনি বলেন,  ‘আশপাশের যেসব বাচ্চারা রিফাতের সঙ্গে খেলছিল, তারা বলেছে, ‘স্বাধীন মিয়া এসে রিফাতকে এক প্যাকেট চিপস ও একটি খেলনা গাড়ি দিয়ে বলে, চলো তোমাকে তোমার আব্বুর কাছে নিয়ে যাব। রিফাত স্বাধীন মিয়াকে আগেও দেখেছে। এ জন্য সে ওর সঙ্গে যায়।’

অপহরণের পর ওই দিনই রিফাতকে লালমনিরহাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয় চার লাখ টাকা। রিফাতের বাবা-মা গতকাল শনিবার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। থানায় মামলাও হয়। এরপরই তৎপরতা শুরু করেন কোতোয়ালি থানার এসি সাদেক কাউসার দস্তগীর।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে থানায় নিজের কক্ষে আলাপকালে এসি দস্তগীর বলেন, ‘পুলিশ অপহরণের বিষয়টি জানার পরই প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে। অপহরণকারীদের দাবিকৃত চার লাখ টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে দেওয়া হয়। মূলত অপহরণকারীদের চিহ্নিত করার ফাঁদ হিসেবেই এ টাকা দেওয়া হয়। বিকাশে দেওয়া টাকা লালমনিরহাট থেকে উত্তোলন করে অপহরণকারীরা। প্রযুক্তির সহায়তায় ওই বিকাশ নম্বরও লোকেট করে পুলিশ।’

তিনি জানান, অপহরণকারীদের ফোন নম্বর এবং বিকাশ নম্বর ট্র্যাক করে অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ এবং পুলিশের ইনফরমারদের কাজে লাগানো হয়। গোটা বিষয়টি সিলেট থেকে তত্ত্বাবধান করেন তিনি।


                                    কোতোয়ালি থানার এসি সাদেক কাউসার দস্তগীর 


তিনি বলেন, ‘অপহরণকারীদের চিহ্নিত করার পর উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ। তবে বিষয়টি টের পেয়ে শিশু রিফাতকে রেখে পালিয়ে যায় তারা। রোববার দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় রিফাতকে।’

বর্তমানে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে রিফাত। তাকে আনতে সিলেট থেকে তার বাবা-মা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই নজরুল ইসলাম আজ বিকেলে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দেবেন।

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহেল আহমদ রিফাতকে উদ্ধারের মূল কৃতিত্ব দিলেন এসি সাদেক কাউসার দস্তগীরকে। তিনি বলেন, ‘রিফাতকে উদ্ধারের মূল কৃতিত্ব আমাদের থানার এসি সাদেক কাউসারের।’

এদিকে অপহরণকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওসি সোহেল আহমদ।



রাইজিংবিডি/সিলেট/১২ মার্চ ২০১৭/কামাল/রুহুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়