ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রানা প্লাজা ধস: ৬ বছরেও শুরু হয়নি বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রানা প্লাজা ধস: ৬ বছরেও শুরু হয়নি বিচার

মামুন খান : বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। পোশাক কারখানা ভবন ধসের এ ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয় এক হাজার ১৩৬ জনের। আহত হন প্রায় ২ হাজার জন। অনেক শ্রমিক পঙ্গু হয়ে গেছেন এবং আজ তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা নামের এই পোশাক কারখানা ভবন ধসের ঘটনায় বাংলাদেশে নেমে আসে শোকের ছায়া।

ভবনটি ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণে যারা দায়ী তাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে দেশের মানুষ। সে সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সব মহল থেকেই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়। সে মোতাবেক গ্রেপ্তার করা হয় রানা প্লাজার মালিকসহ দায়ী ব্যক্তিদের। তাদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা। কিন্তু দীর্ঘ ৬টি বছর অতিবাহিত হলেও শাস্তি তো দূরের কথা, বিচারকাজই শুরু হয়নি।

সেদিন যারা স্বজন হারিয়েছেন তারা প্রতিবছর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার সামনে জড়ো হয়ে বিচারের দাবি জানান।

রানা প্লাজা ধসের পর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও মূল মামলা দুটি। এর একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-ের অভিযোগে, অপরটি ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন তৈরির অভিযোগ। দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে থাকলেও অধিকাংশ আসামি জামিনে রয়েছেন এবং পলাতক রয়েছেন। ৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মামলার বিচারে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। থমকে আছে নানা আইনি জটিলতায়। দুই মামলায় চার্জ গঠন করা হলেও এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুই হয়নি। কবে নাগাদ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে কিংবা মামলার বিচার শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। চার্জ গঠনের পর প্রায় তিন বছরেও এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণই শুরু হয়নি। বিচারিক আদালতের চার্জ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে আবেদন করে আসামিপক্ষ। আর কয়েকজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকাতেই মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রানা প্লাজা ভবন ধসের বিচার দীর্ঘদিনেও না হওয়া আমাদের দেশের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার প্রতিফলন। তা সত্বেও হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে অনেক আগেই এ মামলার রায় সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল। দীর্ঘসূত্রিতার নামে শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের বিচার হবে কিনা- তা নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে। আর সুবিচার যদি না হয়, তাহলে এ ধরণের ঘটনার জন্য যে শাস্তি হয়, তা প্রতিষ্ঠিত হল না। যার ফলে অপরাধীরা অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় একদিকে যারা ভুক্তভোগী তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন, অপরদিকে অপরাধীদের সুরক্ষা হয়। এজন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ঘটতেই থাকবে। আর তার জন্য বিচার না হওয়ায়ই উদাহরণ হিসেবে দায়ী থাকবে।’

মামলা সম্পর্কে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কৌঁসুলি খোন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘রানা প্লাজা হত্যাকা-ের মামলায় আট আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম হয়নি। এদের মধ্যে ছয় জনের স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট (বাতিল) হয়ে গেছে। বর্তমানে আসামি মোহাম্মদ আলী ও রেফাত উল্লাহর পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। ওই দুজনের স্থগিতাদেশ ভ্যাকেটের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া অন্য কোনো আসামির পক্ষে স্থগিতাদেশ থাকলেও তাও ভ্যাকেটের উদ্যোগ নেওয়া হবে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ বাতিল হলেই আমরা দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে করতে পারব।

মামলা দায়েরের দু’বছরের বেশি সময় পর ২০১৫ সালের ১ জুন তদন্ত শেষে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। যার একটিতে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে ভবন মালিক সোহেল রানা ও তার বাবা-মা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র ও কমিশনারসহ ৪১ জনকে এবং অপরটিতে ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। দুটি চার্জশিটে মোট আসামি ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি। এ দুটি মামলায়ই পৃথক দুই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। তবে দুটি মামলাতেই আসামিপক্ষ চার্জ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করায় এবং কয়েকজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া রানা প্লাজা নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘটনার দুই বছর পর এ মামলায় কমিশন চার্জশিট দাখিল করলেও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় আদালত তা গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। এক বছর ধরে পুনঃতদন্ত শেষে দুদক ফের প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১৭ সালের ২১ মে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধ চার্জ গঠন করেন আদালত। এরপর এ মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ হলেও আর কেউ সাক্ষ্য দেননি।

রানা প্লাজার হত্যা মামলা : রানা প্লাজা ধসের পরদিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই আলী আশরাফ। ওই মামলায় সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া রানা প্লাজা ধসে নিহত হওয়ার ঘটনাকে হত্যাকা- আখ্যায়িত করে আদালতে আরেকটি মামলা করেন গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শিউলি আক্তার। আদালতের নির্দেশে একে অবহেলাজনিত মৃত্যু মামলার সঙ্গে একীভূত করে তদন্ত করে সিআইডি। তদন্ত শেষে হলেও ৫ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় মঞ্জুরি আদেশ না দেওয়ায় দীর্ঘদিন চার্জশিট আটকে থাকে। পরে মঞ্জুরি আদেশ ছাড়াই চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। চার্জশিটে পরিকল্পিত হত্যাকা- ঘটানোসহ দ-বিধির ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৬৫, ৪৭১, ২১২, ১১৪, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। চার্জশিট দাখিলের পর আদালত থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওই ৫ জনের মঞ্জুরি আদেশ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয় যে, ওই ৫ কর্মকর্তা জড়িত নন। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় মঞ্জুরি আদেশ ছাড়াই চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। আদালতে দায়ের করা হত্যা মামলার বাদী শিউলি আক্তার এখন পুলিশের মামলার সাক্ষী। এ মামলায় মোট ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। চার্জশিটভুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে সোহেল রানা কারাগারে। আসামি আবু বকর সিদ্দিক ও আসামি আবুল হোসেন জামিনে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আর ৩২ আসামি জামিনে ও ছয় আসামি পলাতক রয়েছেন। বর্তমানে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২৩ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

এ সম্পর্কে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডিশনাল পাবলিক প্রসিউকিউটর মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘হত্যা মামলাটি সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে কিন্তু এ মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র পক্ষ থেকে অনেকবার সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। তারপরও সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্থগিতাদেশ থাকা ওই দুই আসামি বাদে অপর আসামিদের পক্ষে সাক্ষ্য নেওয়া যায় কি না, এরকম একটা মতামত চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমরা কোন মতামত পাইনি। আশা করি উচ্চ আদালতের অনুমতি পেলেই বিচারকার্য দ্রুত শুরু করতে পারবো।’

রানার আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘মামলাটির বিচার হচ্ছে না । বিনা বিচারে রানা কারাগারে আটক আছে। জামিন চাইলে তা পাচ্ছি না। ভবনের মূল মালিক রানার বাবা জামিন পেলেও রানা জামিন পাচ্ছে না। সব আসামি জামিন সুবিধা ভোগ করছে কিন্তু নামের কারণে রানা জামিন পাচ্ছে না। এজন্য আমরা চাই মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়ে যায়।’

ইমারত আইনের মামলা : ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে ওই সময় সোহেল রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। সিআইডি তদন্ত শেষে এ মামলায় সোহেল রানা ও তার বাবা-মা সহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারায় এ চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলায় ১৩৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে ফৌজদারী রিভিশন দায়ের করে আসামি পোশাক কারখানার মালিক আনিছুজ্জামান। এরপর থেকে আদালতের অন্তত ২৫টি ধার্য তারিখ পার হয়েছে। ঢাকার দেউলিয়া আদালতে আগামী ২৫ এপ্রিল রিভিশন মামলাটির রায়ের জন্য ধার্য আছে।

অপরদিকে পোশাক কারখানার মালিক বজলুস সামাদ আদনান ও মাহমুদুর রহমান তাপস ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে চার্জের বিরুদ্ধে ফৌজদারী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল আদালত ওই দুই আসামির রিভিশন নাকচ করেন। অর্থাৎ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন সঠিক মর্মে আদেশ দেন। ওই একই আদালতে অপর পোশাক কারখানা মালিক আমিনুল ইসলাম চার্জের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। প্রায় ১০ মাসে আগে দেওয়া এক রায়ে এ আসামির রিভিশন মামলা মঞ্জুর করেন আদালত। অর্থাৎ তাকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন আদালত। মামলায় ১৮ আসামির মধ্যে সোহেল রানা কারাগারে রয়েছে। পাঁচ আসামি পলাতক আর বাকিরা জামিনে আছেন।

ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা সম্পর্কে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কৌঁসুলী আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসে ইমারত আইনের মামলায় আসামি পক্ষ বিচার কাজ বিলম্বিত করার জন্য চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে রিভিশনের আবেদন করেছে। রিভিশন শুনানি না করে সেখানেও বার বার সময়ক্ষেপন করছে। রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। রিভিশন শুনানির জন্য মামলার মূল নথি সংশ্লিষ্ট আদালতে রয়েছে। ফলে বিচারিক আদালতে  মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম নিজাম বলেন, ‘পোশাক কারখানা মালিক আসামি আমিনুল ইসলামের পক্ষে ইমারত আইনের মামলায় ও দুদকের মামলায় রিভিশন আবেদন করা হয়। পৃথক দুই আদালত শুনানি শেষে ওই দুই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ইমারত আইনের মামলায় একাধিক আসামিপক্ষে স্থগিতাদেশ রয়েছে। অপরদিকে দুদকের দায়ের করা মামলায়ও অন্তত ছয় থেকে সাত আসামিকে রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণে দুদকের মামলা : রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর পরই ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে দুদক। নকশাবহির্ভুত ভবন নির্মাণের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১৫ জুন সাভার থানায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করে কমিশন। ভবনটি সোহেল রানার বাবার নামে হওয়ায় ওই সময় মূল অভিযুক্ত সোহেল রানাকে বাদ দিয়েই তার বাবা-মাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। তদন্তে সোহেল রানাই ভবনের মূল দেখ-ভালকারী ছিলেন প্রমাণ হলে চার্জশিটে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক এসএম মফিদুল ইসলাম ওই বছরের ১৬ জুলাই সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দ-বিধি ১০৯ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন। দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রে ত্রুটি থাকায় আদালত তা গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। দুদক পুনরায় তদন্ত করে গত বছরের শুরুর দিকে আদালতে ফের চার্জশিট দাখিল করে। নতুন চার্জশিটেও রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন এ মামলায় বাদী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরপর থেকে আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য হয়নি। আগামী ২ মে  মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য  ধার্য রয়েছে।

এ মামলা প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলাটিতে বাদীর সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আশা করি অপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করতে পারব।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যায়। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অসনাক্তকৃত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। জীবিত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১ হাজার পাঁচশ ২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৭৮ জন পঙ্গু হয়ে গেছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৯/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়