ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র আছে, কার্যক্রম নেই

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র আছে, কার্যক্রম নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : আজ ৯ ডিসেম্বর মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যু দিবস। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরে তার জন্ম। 

দিবস পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকালে বেগম রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, সাড়ে ১০টায় প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, স্কুল পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং বিকেলে মেলার উদ্বোধন ও আলোচনা সভা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রংপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ। পরে নাটিকা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। ১০ ও ১১ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববদ্যালয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করেছে।

বাঙালি মুসলমান নারী মুক্তির পথদ্রষ্টা মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার, মা রাহাতুন্নেছা সাবের চৌধুরানী। খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে অল্প বয়সে বিয়ে হয় রোকেয়ার। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি স্বামী হারান। অবরোধবাসিনী, অর্ধাঙ্গী, সুলতানার স্বপ্ন, মতিচূরসহ অসংখ্য বই লিখেছেন বেগম রোকেয়া। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মারা যান। কলকাতার শোদপুরে দাফন করা হয় তাকে।



পায়রাবন্দ গ্রামে রোকেয়ার জন্মভূমিতে গড়ে উঠেছে ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র’। ১৯৯৭ সালের ২৮ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সোয়া তিন একর জমির উপর পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিকেন্দ্রটি। যা ২০০১ সালের ১ জুলাই উদ্বোধন করার পর রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উপ-পরিচালকসহ ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া হয়। যা মাত্র দুই বছর চলতে না চলতেই ২০০৭ সালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বন্ধ হয়ে যায়। রোকেয়ার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে গবেষণা, তার গ্রন্থাবলীর অনুবাদ, সংস্কৃতি চর্চা ভেস্তে যায়।

বন্ধ হয়ে যাওয়া স্মৃতিকেন্দ্রে বসে পোশাক শ্রমিকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ২০০৮ সালে পোশাক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন-উ-আহমেদ। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ এবং উচ্ছেদ করার জন্য ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্মৃতিকেন্দ্রের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বিকেএইএ-এর কারখানা বন্ধের আদেশ দিলে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসন ওই বছরের ১ মে কারখানা উচ্ছেদ করে।

এর পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্মৃতিকেন্দ্রের কর্তৃত্ব নিয়ে টানা-হেঁচড়ার ফলে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বেগম রোকেয়ার জন্মভূমিতে হস্ত ও কুটির শিল্প কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। একমাত্র ডাক বাংলায় ভূতড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। সেলাই প্রশিক্ষণ, এমফিল গবেষণা, সংগ্রহশালা, সঙ্গীত প্রশিক্ষণ- এ সবের কার্যক্রম নেই এখন। শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে স্মৃতিকেন্দ্রটি।

বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ-আল-ফারুক বলেন, হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের জন্য তারা আন্তরিক রয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে স্মৃতিকেন্দ্র প্রাণ পাবে।



রাইজিংবিডি/রংপুর/৯ ডিসেম্বর ২০১৭/নজরুল মৃধা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়