ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোমান পোলানস্কি : নিঃসঙ্গতা নির্মাণের জাদুকর

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোমান পোলানস্কি : নিঃসঙ্গতা নির্মাণের জাদুকর

রোমান পোলানস্কি

রুহুল আমিন : রোমান পোলানস্কি। বর্তমান সময়ের প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন। যিনি  চলচ্চিত্রে মানুষের নিঃসঙ্গতার তীব্র আবেদন তুলে ধরেন। সমাজের বাইরে আরেক সমাজ গড়তে চেয়েছেন তিনি। একেবারে নিজস্ব সমাজ, যেখানে প্রেম আছে, দ্রোহ আছে, আছে শিল্পের চর্চাও। তার হাত ধরে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা মনস্তাত্ত্বিক অনবদ্য সিনেমা।

১৯৩৩ সালের ১৮ আগস্ট ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন রোমান পোলানস্কি । ফ্রান্সে জন্ম হলেও বাবা-মা ছিলেন পোলিশ। পৈতৃক সূত্রে নাম পেয়েছিলেন রাজমন্ড রোমান লাইব্লিঙ্গ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোলানস্কি কিশোর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তার কিশোর মনের ওপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। এই কারণে পোলানস্কির কাছ থেকে আমরা পেয়েছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর নির্মিত সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র ‘দি পিয়ানিস্ট’। পোলানস্কি বলেন, ‘সিনেমা সেটাই হওয়া উচিত যা দেখে দর্শক ভুলে যাবে সে থিয়েটারে বসে আছে।’

দি পিয়ানিস্টে পোলানস্কি দেখিয়েছেন যুদ্ধ আক্রান্ত একজন শিল্পীর বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এ সিনেমাটির জন্য ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অস্কার পুরস্কার লাভ করেন। তবে পোলানস্কি পরিচালিত প্রথম সিনেমাটি ছিল ‘নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’ (১৯৬২)। আর হলিউডে তার যাত্রা শুরু হয় ‘রোজমেরি’জ বেইবি’ (১৯৬৮) দিয়ে। দুটো সিনেমাই সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী।

চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজস্ব স্টাইল সম্পর্কে পোলানস্কি বলেন, ‘আমার চলচ্চিত্রগুলো প্রতি মুহূর্তের আকাঙ্খার প্রকাশ। চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় আমি শুধু আমার সহজাত প্রবৃত্তিকেই কাজে লাগাই, তবে তা একটি সুনির্দিষ্ট এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে।’

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী সিনেমার ক্ষেত্রে আলফ্রেড হিচককের পরই রোমান পোলানস্কির নাম বিবেচনা করা হয়। পোলানস্কিও তার চলচ্চিত্রে হিচককের প্রভাব স্বীকার করেন।চলচ্চিত্রকে বাস্তবসম্মত করে ফুটিয়ে তুলতে পোলানস্কি নানা কৌশলের আশ্রয় নেন এবং চলচ্চিত্রে এই বিষয়টিকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। চলচ্চিত্রে যদি ভায়োলেন্স দেখাতে হয় তবে তা যথার্থরূপেই দেখাতে হবে। যদি তা বাস্তবসম্মত করে দেখানো না যায় তবে বিষয়টি চলচ্চিত্রে তুলে ধরাই হবে অনৈতিক ও ক্ষতিকর। দর্শককে যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্তই না করা গেল তবে ভায়োলেন্স দেখানো চলচ্চিত্রে অশ্লীলতারই নামান্তর। রোমান পোলানস্কি এমনই মনে করেন।

ব্যক্তি জীবনে দুর্ভাগ্য আর বিতর্ক যেন পোলানস্কির নিত্যসঙ্গী। ১৯৬৯ সালে তার জীবনে অত্যন্ত মর্মান্তিক এক ঘটনা ঘটে। পোলনস্কির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অভিনেত্রী শ্যারন টেইটকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী চার্লস ম্যানসনের অনুসারীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯৭৮ সালে পোলানস্কি জড়িয়ে পড়েন নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে।

এখানে তার সিনেমা চায়নাটাউনের কথা আসতে পারে। চায়নাটাউন তার একটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা। চায়নাটাউন সিনেমা মুক্তির পরই তার জীবনে ওই ঘটনা ঘটে যা পরবর্তীতে তাকে আরো ভালোভাবে সিনেমাটির সঙ্গে জড়িয়ে স্টাডি করার পরিবেশ তৈরী করে দেয়। চায়নাটাউন সিনেমার সাফল্যের মাত্র দুই বছর বাদে পোলানস্কির বিরুদ্ধে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলা হয়। যে মেয়েটিকে তিনি ধর্ষণ করেছিলেন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর, ফলে এই ঘটনার মাধ্যমে তারই সিনেমার নোয়া ক্রস চরিত্রের সঙ্গে মিশে যান। সেই থেকে পোলানস্কি একজন ফেরারি, তিনি ফ্রান্সে থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, আমেরিকায় এলেই তিনি গ্রেপ্তার হবেন। এ কারণেই দ্য পিয়ানিস্ট সিনেমার পুরস্কার তিনি নিজে গ্রহণ করতে পারেননি, করেছিলেন তার পক্ষ থেকে আরেকজন।

পরে ধর্ষণের ঘটনার প্রায় ত্রিশ বছর পর ২০০৯ সালে সুইজারল্যান্ডে জুরিখ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।প্রায় ছয় মাস গৃহবন্দি থাকার পর মুক্তি মেলে। এরই মাঝে রাজনৈতিক থ্রিলার ‘দি গোস্ট রাইটার’ সিনেমার জন্য ২০১০ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালকের ‘রৌপ্য ভল্লুক’ জিতেন রোমান পোলানস্কি। তবে গৃহবন্দী থাকায় পুরস্কার গ্রহণ করতেও যেতে পারেননি তিনি।

রোমান পোলানস্কি নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে কালজয়ী সাসপেন্স ও থ্রিলারধর্মী অ্যাপার্টমেন্ট ট্রিলজি : ‘রিপালসন’ (১৯৬৫), ‘রোজমেরি’জ বেইবি’ (১৯৬৮) ও ‘দি টিনেন্ট’ (১৯৭৬)। এ ছাড়া- ‘চায়না টাউন’  (১৯৭৪),‘দ্য নাইন্থ গেট’ (১৯৯৯), ‘বিটার মুন’ (১৯৯২),‘হোয়াট?’ (১৯৭৩), ‘অলিভার টুইস্ট’ (২০০৫),  ‘দি গোস্ট রাইটার’ (২০১০), ‘দ্য প্রেস উন হিস্তোয়ার ভ্রাই’ (২০১৭) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ আগস্ট ২০১৭/রুহুল/শান্ত  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়