ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নির্যাতনে আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল মিয়ানমার সরকার

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১৯ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা নির্যাতনে আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল মিয়ানমার সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়নের জন্য মিয়ানমার সরকার কয়েক সপ্তাহ-মাস আগে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ‘বিস্তৃত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রস্তুতি’ নিয়েছিল।  বৃহস্পতিবার ব্যাংককভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানো হয়েছে এতে যে মিয়ানমারের ২২ সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা ছিল তার বিশ্বাস করার ‘যৌক্তিক ভিত্তি’ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে বিষয়টি অবহিত করে এর তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

ফর্টিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘গণহত্যা এমনি এমনি হয় না। এই অপরাধগুলোর দায়মুক্তি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরো সহিংসতা ও হামলার পথ করে দেওয়া হবে। বিশ্ব অলস বসে থেকে আরেকটি গণহত্যার উন্মোচন দেখতে পারে না। কিন্তু এই মুহূর্তে ঠিক সেটাই হচ্ছে।’

মানবাধিকার সংগঠনটি জানিয়েছে, গত বছরের আগস্টে দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরসা। এরপরই আরসার বিরুদ্ধে অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধণ অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর প্রস্তুতি অবশ্য তারা ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকেই নিয়ে রেখেছিল। কারণ ওই সময় আরসা প্রথমবারের মতো সেনাদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলার জবাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালায় সেনারা। অক্টোবরের সহিংসতার প্রতিক্রিয়া দেখাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ হওয়াতে মিয়ানমারের সেনারা দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালানোর সুযোগ পায়।

রোহিঙ্গা নির্যাতনে নিয়মতান্ত্রিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ফর্টিফাইট রাইটস জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের কাছ থেকেই আগেই ধারালো ও ভোঁতা বস্তু নিয়ে নেওয়া হয়, স্থানীয় অ-রোহিঙ্গা গোষ্ঠিগুলোকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ, রোহিঙ্গাদের বাড়ির আশেপাশ থেকে বেড়া ও অন্যান্য প্রতিবন্ধক অপসারণ, হামলার আগে রোহিঙ্গাদের শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ইচ্ছা করে খাদ্য ও জীবন বাঁচানোর উপকরণের সরবরাহ বাধাগ্রস্থ করা এবং রাখাইনে অপ্রয়োজনীভাবে অতিরিক্ত সংখ্যক রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন।

সংস্থাটি জানিয়েছে, নৃশংস অপরাধ বিশ্লেষণে জাতিসংঘের যে ফ্রেমওয়ার্ক আছে তার আলোকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এই কাজগুলোকে ‘প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের আগস্টের প্রথম দিকে উত্তর রাখাইনে হামলা চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ২৭ ব্যাটালিয়ন সেনা যার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার এবং কমপক্ষে তিন ব্যাটালিয়ন দাঙ্গা পুলিশ। ফৌজদারি তদন্ত ও সম্ভাব্য বিচারের জন্য এ ঘটনায় দায়ী ২২ সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাকেও চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। এদের মধ্যে রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং, উপপ্রধান জেনারেল সোয়ে উইন এবং সামরিক বাহিনীর যুগ্মপ্রধান জেনারেল মাইয়া তুন ও।

এর আগে গত মাসে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-হামলায় জড়িত মিয়ানমারের ১৩ সেনা ও পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিতে করেছিল অ্যামনেস্ট ইন্টারন্যাশনাল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুলাই ২০১৮/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়