ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘রোহিঙ্গাদের মর্যাদা-নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওআইসিকে পাশে দাঁড়াতে হবে’

তানজিনা আফরিন ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৫ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রোহিঙ্গাদের মর্যাদা-নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওআইসিকে পাশে দাঁড়াতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওআইসিকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ অবসানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান।

শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা-ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দু’দিনের এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৪০ জন মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।     

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ এ ওথাইমিন, আইভরি কোস্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসেল আমোন তানোহ, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওআইসিকে আমি দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

ইসলামী সম্মেলন সংস্থাকে অবশ্যই মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী তাদের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের দেশে নিরাপদে ফেরত নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কাজেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি, ওআইসি তখন নিশ্চুপ থাকতে পারে না।

নিপীড়িত মানবতার জন্য আমরা আমাদের চিত্ত ও সীমান্ত দুই-ই উন্মুক্ত করে দিয়েছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ব্যথায় ব্যথিত।’

ইতিহাসের এক ‘বিশেষ সন্ধিক্ষণে’ ঢাকায় ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি যখন প্রযুক্তি প্রবাহ ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং যুব সমাজের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে অসমতা, অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অবিচার এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব। এসবের সমন্বিত প্রভাবে আমাদের ইসলামী চিন্তা-চেতনার মৌলিক ভিত্তি আজ হুমকির সম্মুখীন। এমন অবস্থা আগে কখনো আমরা প্রত্যক্ষ করিনি।’



তিনি বলেন, ‘মুসলিম বিশ্ব আগে কখনো এতো বেশি পরিমাণ সংঘাত, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, বিভাজন ও অস্থিরতার মুখোমুখি হয়নি। লক্ষ্য করা যায়নি এতো ব্যাপক হারে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর দেশান্তর। আজকে মুসলমান পরিচয়কে ভুলভাবে সহিংসতা ও চরমপন্থার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে।’

এ অবস্থা চলতে পারে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন সময় এসেছে চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ফলাফল-কেন্দ্রিক নতুন কৌশল-সম্বলিত একটি রূপান্তরিত ওআইসি।’

মুসলিম বিশ্বের সমৃদ্ধি ও সামাজিক অগ্রগতর লক্ষ্যে কয়েকটি নিজের বেশ কয়েকটি চিন্তাভাবনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতা বর্জন এবং ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা বা সমাজে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিন্দুকদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না দিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। ওআইসিতে আমাদের বিরোধ মীমাংসার প্রক্রিয়াসমূহকে শক্তিশালী এবং আমাদের নিজস্ব শক্তি ও সম্পদসমূহের আরো উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।’

তিনি সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ বন্ধ, ইসলামী উম্মাহর মধ্যে বিভেদ বন্ধ এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথে যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রস্তাব তুলে ধরেন।

পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ জনশক্তি, এক-তৃতীয়াংশের বেশি কৌশলগত সম্পদ এবং সম্ভাবনাময় কয়েকটি উদীয়মান শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ থাকার পরও মুসলিম বিশ্বের পিছিয়ে পড়া বা অমর্যাদাকর অবস্থায় থাকার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর, জরুরি মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইসলামী সম্মেলন সংস্থার বলিষ্ঠ কর্মসূচিসহ একটি দ্রুত কার্যকর উন্নয়নমূলক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্য, ঐতিহ্যগত ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শক্তি আমাদের নারী ও যুবসমাজ এবং জনসংখ্যার বর্তমান আদল। আমাদের যুবশক্তি ও প্রযুক্তিতে যথাযথ বিনিয়োগ করে তাদের উৎপাদনশীল শক্তিতে পরিণত করতে হবে। এই যুবসম্পদের উপর ভিত্তি করে আমরা শান্তি ও উন্নয়নের একটি নিয়মনিষ্ঠ কাঠামো তৈরি করতে পারি। এটা বৃহত্তর ওআইসির আঙ্গিকেও হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকে আছে আরো চার লাখের মতো। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে আসছেন। জাতিসংঘ একে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতক সংস্থা ও দেশের চাপে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে  বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গত ডিসেম্বরে চুক্তি করে মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটির পক্ষ থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না এখনো।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৮/ইভা/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়