ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শত কোটি টাকার ট্যাক্স বকেয়া, সিসিকের উন্নয়ন স্থবির

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৩ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শত কোটি টাকার ট্যাক্স বকেয়া, সিসিকের উন্নয়ন স্থবির

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) হোল্ডিং ট্যাক্স খাতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে বকেয়া আরো ৩৩ কোটি টাকা।

শত কোটি টাকার বকেয়ার ফাঁদে স্থবির হয়ে পড়েছে সিসিকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিনের বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ট্যাক্স আদায়ে অভিযানে নামতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

হোল্ডিং ট্যাক্স খাত নগর ভবনের আয়ের প্রধান উৎস। নিয়মিত রাজস্ব আহরণ না করায় এ খাতে এমন বড় অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়ে আছে। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দফায় দফায় নোটিশ দেওয়ার পরেও পরিশোধে আগ্রহী হচ্ছেন না হোল্ডিংয়ের বসবাসরতরা। ফলে এবার অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।

অভিযানে হোল্ডিং ট্যাক্সের পাশাপাশি পানি বিল, ট্রেড লাইসেন্স এবং বিলবোর্ডের বকেয়া ট্যাক্সও আহরণ করা হবে; অনাদায়ে আইনি ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট হোল্ডিং মালিকের মালামাল জব্দও করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে সরকারি-বেসরকারি সবমিলিয়ে সাড়ে ৫৩ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ৮৫০টি। বাকি বেসরকারি হোল্ডিংয়ের মধ্যে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং রয়েছে। বকেয়া পড়ে থাকাদের মধ্যে বেশিরভাগই বাণিজ্যিক গ্রাহক। যারা বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আসছেন।

হোল্ডিং ট্যাক্সের ৬৭ কোটি ছাড়াও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পানির বিল বাবদ ১২ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ২০ কোটি টাকা এবং বিল বোর্ড বাবদ ১ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। যা দীর্ঘদিন ধরে নোটিশ প্রেরণের মাধ্যমেও আহরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন কাজেও বিঘ্ন ঘটছে।

জানা যায়, গত বছরের মে মাসে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়সহ সব ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এসময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছিলেন, ‘অনলাইন সেবা চালু করায় মানুষ ঘরে বসেই কোন ভোগান্তি ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের সবধরনের সেবা এবং বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এতে করে কর্পোরেশনের ট্যাক্স বা বকেয়া থাকবে না।’ একই ভাবে তিনি বেশি বকেয়া যাদের রয়েছে, তাদের কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তবে অনলাইন কার্যক্রম চালু এবং তার এ আহ্বানের পরেও ট্যাক্স প্রদানে তেমন সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বকেয়া ট্যাক্স আদায়ে মাঠে নামতে হয়েছে তাকে। বুধবার তিনি কর্মকর্তাদের নিয়ে নগরের ১৪ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। অভিযানের প্রথম দিনে তিনি ১০ লাখ টাকা আদায় করেন। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহক বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময় চেয়ে নিয়েছেন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পিআরও শাহাব উদ্দিন শিহাব জানান, ‘বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে সিসিকের সচিব মো. বদরুল হক, প্রধান প্রকোশলী নূর আজিজুর রহমান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবরকে প্রধান করে পৃথক তিনটি টিম করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে বকেয়া আদায়ে অভিযান চালাবেন তারা।’

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বকেয়া আদায়ের জন্য একাধিকবার নোটিশ প্রেরণ করা হলেও অনেকেই তা পরিশোধ করেননি। যে কারণে বাধ্য হয়েই এখন নিজে মাঠে নেমেছি। তিনটি টিমও করেছি। গ্রাহকদের বুঝিয়ে বকেয়া আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপরও যারা ট্যাক্স পরিশোধ করবেন না তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে; জরিমানাসহ বকেয়া আদায়ে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের মূল আয়ের খাতে এতো বিশাল পরিমাণ বকেয়া থাকায় নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। নগরবাসী নিয়মিত বকেয়া পরিশোধ করলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে।’




রাইজিংবিডি/ সিলেট/৩ জানুয়ারি ২০১৯/ আব্দুল্লাহ আল নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়