ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শব্দদূষণ বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শব্দদূষণ বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন

রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তবে শুধু ঢাকা নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরই এই শব্দদূষণের শিকার। এতে আগামী প্রজন্ম হারাচ্ছে শ্রবণশক্তি। সম্প্রতি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর কোথাও কোথাও শব্দের মাত্রা স্বাভাবিক মানের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। অথচ পবার জরিপে দেখা গেছে, অনেক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

খুব জোরে শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। তখন স্বাভাবিক শব্দও শোনা যায় না।

শব্দদূষণের কারণে শুধু শ্রবণশক্তিই নয়, উচ্চরক্ত চাপ, মাথাধরা, অজীর্ণ, পেপটিক আলসার, অনিদ্রাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত শব্দদূষণে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হয়, সন্তানসম্ভবা মায়েদের যেকোনো ধরনের উচ্চ শব্দ মারাত্মক ক্ষতিকর।

প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ হয়ে চললেও তা প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না।  ২০০৬ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একই ভাবে, নীরব এলাকার জন্য এই শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর থেকে বেশি মাত্রায় শব্দ সৃষ্টি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

কিন্তু বাস্তবে এই বিধি মানা হচ্ছে না। রাস্তায় বেরুলেই দেখা যায় শব্দদূষণের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অনবরত প্যাঁ পুঁ শব্দে হর্ন বাজানো। অবস্থা দেখে মনে হয় যানবাহনের চালকরা রাস্তায় যেন হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। শুধু গাড়ির হর্নই নয়, জনসভা, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মাইকও ব্যাপক শব্দ দূষণ করছে। উচ্চ শব্দে মাইক বা লাউড স্পিকারের ব্যাপক ব্যবহারে আশপাশে থাকা শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীর ঘুমে বিঘ্ন এবং পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী কোন এলাকায় ৬০ ডেসিবল মাত্রার বেশি শব্দ হলে সেই এলাকা দূষণের আওতায় চিহ্নিত হবে। এ ছাড়া অফিস কক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবল, হাসপাতালে ২০ থেকে ৩৫ ডেসিবল, রেস্তোরাঁয় ৪০ থেকে ৬০ ডেসিবল শব্দ মাত্রা সহনীয়। ৬০ ডেসিবল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।

১৯৯৭ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার-নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব জায়গায় মোটরগাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ এ আইনের তোয়াক্কা করে না কেউ। শব্দদূষণকারীদের জন্য অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান থাকা সত্ত্বেও এর কোনো প্রয়োগ আছে বলে মনে হয় না।

নগরীর বিপুলসংখ্যক মানুষকে রক্ষায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। শব্দদূষণ বন্ধে বিধিমালা বাস্তবায়নে গাড়িচালক ও গাড়ির মালিকগণকে শব্দদূষণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিতকরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত বিধান এবং শব্দদূষণ বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আলী নওশের/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়