ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহসী পদক্ষেপ

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহসী পদক্ষেপ

এশিয়ার বৈরী দুই দেশ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায় উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং–উন একের পর এক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর কারণে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও হমকি দেন উত্তর কোরীয় নেতা। পাল্টা হুমকি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ফলে উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্পের। এতে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। কোরীয় উপদ্বীপে সংঘাত এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধের পর এই প্রথম উত্তর কোরীয় নেতা দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে পা রাখেন। শান্তির চারা রোপণ করেন সীমান্তে যা আশাবাদী করে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। এ বৈঠকের ফলে দুদেশের মধ্যে বিরাজমান সেই বৈরীতার অবসান ঘটতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই কোরিয়ার এই শান্তি উদ্যোগকে বিশ্বের জন্য এক অভাবনীয় সুখবর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি সুখবরের অপেক্ষায় ছিল। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপানসহ অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটিকে ভালো খবর বলে অভিহিত করেছেন। আমরাও অভিনন্দন জানাই দুই কোরীয় নেতাকে ।

বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় দুই কোরিয়ার পরস্পরবিরোধী সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। কোরীয় অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণ, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে লিয়াজোঁ অফিস প্রতিষ্ঠা, দুই কোরিয়ার বিভক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে যোগাযোগ, শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনা অব্যাহত রাখা, সীমান্তে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।

অবশ্য এর আগে উত্তর কোরীয় নেতা প্রেসিডেন্ট কিম জং উন তার দেশের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন।  উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রয়াস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ায় সরাসরি আঘাতের হুমকিও দিয়েছিলেন। যুদ্ধ এড়াতে ট্রাম্প চীনকে অনুরোধ করেছিলেন তার ঘনিষ্ঠ মিত্র উত্তর কোরিয়াকে যেন পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ থেকে বিরত রাখতে তার প্রভাব কাজে লাগায়।

এদিকে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট গোপনে চীন সফরকালে শান্তির পথে আসার জন্য চীনা নেতাদের আশ্বস্ত করেন। এরপর উন সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ স্থগিত ও পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রের কাজ বন্ধের ঘোষণা দেন। এর ফলে নিশ্চিত হয় দুদশের শীর্ষ বৈঠকের বিষয়টি। আগামী মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও কিম জং–উনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যুদ্ধ উন্মাদনা পরিহার করে এই শান্তি প্রয়াস আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দু’নেতার এ বৈঠকের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনও প্রশংসার দাবিদার। গত বছর তার দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তিনি বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এমনকি 'পুনরেকত্রীকরণ' হবে তার প্রধান লক্ষ্য। দেশের মানুষ ও রাজনীতিকদের একটি অংশের প্রবল সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তবে সম্পর্কোন্নয়নের আগ্রহ উত্তর কোরিয়ার দিক থেকেও ছিল। দেশটির বর্তমান নেতার বোন কিম ইউ জং দীর্ঘ দিনের বন্ধ তালা খুলতে ভূমিকা রেখেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক চলাকালে উত্তর কোরিয়া থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর পাশাপাশি নিজেও সফরে গিয়েছিলেন। দক্ষিণের নেতার সঙ্গে তার করমর্দনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি সীমান্তের দুই পাশেই আশার আলো ছড়িয়ে দেয়। এরপর ভাইয়ের ঐতিহাসিক সফরেও তার পাশে ছিলেন তিনি।

দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্কের কথা ভুলে গিয়ে দুই কোরীয় নেতার এই বৈঠক বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও শিক্ষণীয় হতে পারে। কোরিয়া উপদ্বীপের এই আবহে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে যে, শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। সমস্যা যত পুরোনো হোক নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব। এভাবে আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক সব বিরোধের নিষ্পত্তি সম্ভব। দু নেতার এ বৈঠককে অভিহিত করা যেতে পারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে। বিশ্বশান্তির জন্য দুই কোরিয়ার সমঝোতা অবদান রাখবে এমনটিই প্রত্যাশা বিশ্বের মানুষের।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ এপ্রিল ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়