ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘শিক্ষার মানোন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধি কোথায়?’

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১৪ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘শিক্ষার মানোন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধি কোথায়?’

আবু বকর ইয়ামিন : আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা খাতকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এটি স্মরণকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। দীর্ঘ ৯ বছর পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুখবর এলো নতুন বাজেটে। মোট বাজেটের শতকরা হিসাবে ও টাকার পরিমাণে বরাদ্দ বেড়েছে বলে বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে। তবে শিক্ষা খাতে এ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত ও একেবারেই গতানুগতিক বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।

তিনি বলেন, এ বাজেটে তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য। এমপিওভুক্তির জন্য একটা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেটাতে বেড়েছে। আর বেড়েছে শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা দেওয়ার কারণে। তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধিটা কোথায়?

শুক্রবার রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি বলেন, শিক্ষা ও টেলিযোগাযোগ মিলে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বাজেট রাখা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ বাদ দিলে শিক্ষায় মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেটি গত বছরের সাথে তুলনা করলে দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। যেটিকে বাড়া বলে না। এটাকে স্বাভাবিকও বলা চলে না। এটা একেবারেই গতানুগতিক। প্রত্যাশা পূরণ করেনি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার প্রত্যাশা পূরণে এ বাজেট বিশেষ ভূমিকা পালন করবে না।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাজেট উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেছে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে গতবারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে। টাকার অংকে তা ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। গতবারের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তা বেড়েছে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষার সাথে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। সেটি আমাদের একটি গর্বের জায়গা। কিন্তু সেটিকে শিক্ষার বাজেটের সাথে দেওয়ার তো কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। ওটার সাথে শিক্ষার কী সম্পর্ক? আগেরবার যোগ করা হয়েছিল রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প। এবার যোগ হয়েছে স্যাটেলাইট। এটা তো ঠিক না। শিক্ষার বাজেট একদম আলাদা করেই দেওয়া উচিত শিক্ষাটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।

তিনি বলেন, গতানুগতিক বাজেট দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা সম্ভব নয়, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা। শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার রয়েছে। মোট বাজেটে ২০ শতাংশ না হলেও প্রতি বছর শিক্ষা খাতে কিছু কিছু করে আকার বাড়ানো দরকার। সরকার বলছে, বাজেটে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তা-ই যদি হয় তবে প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। সেটিও তো বিবেচনা করতে হবে। ছাত্রপ্রতি বিনিয়োগ বাড়েনি। অন্যদিকে, উচ্চ শিক্ষায় গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো কথা বললেও কীভাবে গবেষণা বাড়ানো হবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, শিক্ষকদেরকে এমপিওভুক্ত করা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এমপিওভুক্ত করলেই শিক্ষার মান বাড়ে, এমন তো কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তার সাথে এটাও সত্য, আমরা যদি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে পারি তাহলে শিক্ষকদের কেন নয়? অবশ্যই শিক্ষকদের প্রণোদনা দিতে হবে, এমপিওভুক্ত করতে হবে। কিন্তু এ এমপিওভুক্তির সঙ্গে টাকার ব্যবহারটা কী হবে সেটাও দেখার আছে। সেটা যাতে রাজনীতিকরণ না হয়। দেখা যাবে একটা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ভালো কাজ করে যাবে, কিন্তু এমপিও পাচ্ছে না। অন্যদিকে, আরেকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ভালো না হলেও খুঁটির জোড়ে এমপিও পেয়ে যাচ্ছে। কাজেই এমপিওভুক্তির বিষয়ে অনিয়মের বড় একটা আশঙ্কা রয়ে গেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৯/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়