‘গহীন’কে পেতে চান সাত দম্পতি
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের শিশু হাসপাতালের সি-ব্লকের একটি বাথরুমে ফেলে যাওয়া নবজাতক ‘গহীন’কে পেতে আদালতে সাত দম্পতি আবেদন করেছেন।
ঢাকার একটি পারিবারিক আদালতে সম্প্রতি এই দম্পতিরা সমাজসেবা অধিদপ্ততের মহাপরিচালক ও ছোট সোনামনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালককে বিবাদী করে পৃথক পৃথক আবেদন জমা দিয়েছেন।
গত ২০ জুন বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক সাফিয়া শারমিন সকল আবেদনের বিষয়ে বিবাদীদের প্রতি সমন জারী করে বুধবার শুনানির দিন ঠিক করেছেন। কিন্তু এদিন বিচারক পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ২ জুলাই ধার্য করেছেন।
১৮৯০ সালের গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট এবং ১৯৮৪ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের ৫(২) ধারার বিধান অনুযায়ী নবজাতক শিশু গহীনের শরীরের অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার দাবিতে আবেদনগুলো করা হয়েছে।
আদালতে সাত দম্পতির মধ্যে হাসপাতালে দুদিন দেখভাল করা রাসেল মাহমুদ (৪১) ও তার স্ত্রী পলি বেগম (৩৬) রয়েছেন। আট বছরের বিবাহিত জীবনে তারা নিঃসন্তান। তারাই প্রথম শিশুটিকে দেখতে পান ও থানায় জিডিও করেন এবং মাতৃস্নেহে শিশুটিকে দেখভালও করেন মর্মে আবেদনে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া আবেদনকারী অন্য ছয় দম্পতি অন্যতম সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার মো. শাহ আলম শাহীন ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের নির্বাহী সদস্য ও মানবাধিকার সংস্থা আশকের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হামিদা আক্তার মিতা। যদিও এ দম্পতির একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
২০০৫ সালে বিবাহিত নিঃসন্তান মেসাস তালবিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. কাউছার আহমেদ ও মিসেস ভিয়েনা আক্তার দম্পতিও গহীনকে পেতে আবেদন করেছেন।
রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসিন্দা ২০১০ সালে বিবাহিত ও নিঃসন্তান মো. বদরুদ্দোজা চৌধুরী শিশুটিকে চেয়ে আবেদন করেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিনিয়র সাব-এডিটর শামীমা ইয়াসমিন নিঃসন্তান, তিনিও আবেদনকারী।
পপুলার এসোসিয়েটের মালিক মো. শফিউদ্দিন ও শায়লা সফি ১৯৯৮ সাল থেকে বিবাহিত, এই নিঃসন্তান দম্পতিও আবেদনকারী।
এছাড়া সপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ঝিনাইদাহের বাসিন্দা মো. এরশাদ আলী ও তার স্ত্রী প্রাশতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার দম্পতি আবেদন করেছেন। ২০১১ সালে বিবাহিত এ দম্পতির নিঃসন্তান বলে উল্লেখ করেছেন।
জানা গেছে, আবেদনকারী দম্পতিরা শিশুটিকে ছোটমনি নিবাসে নেয়ার আগে বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যান। হাসপাতাল থেকে ছোট সোনামনি নিবাসে নেয়ার পর সেখানে যান। কিন্তু আইন অনুযায়ী সরাসরি হাসপাতাল বা ছোট সোনামনি নিবাস থেকে গহীনকে দত্তক বা শরীরের অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার সুযোগ না থাকায় আদালতে আবেদন করেছেন।
গত ১৪ মে দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শিশু হাসপাতালের একটি বাথরুমের ভেতর থেকে ৩ থেকে ৪ দিন বয়সী নবজাতক কন্যা গহীনকে উদ্ধার হয়। পরে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুইদিন পর গত ১৬ মে দুপুরে গহীনকে রাজধানীর আজিমপুরের সরকারী ছোটমনি নিবাসে হস্তান্তর করা হয়। নবজাতকটিকে উদ্ধার করার পর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল মাহমুদ ও তার স্ত্রী পলি বেগম দেখভাল করেন। তারাই শিশুটির নাম রাখেন ‘গহীন’।
হাপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৪ মে দুপুর ১২টার দিকে হন্তদন্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ঢুকছেন দুই নারী। এক নারীর হাতে কাপড়ের পুটুলি সদৃশ কিছু দেখা যায়। তিনি বাথরুমে ঢুকে দ্রুত বেড়িয়ে আসেন। ঢোকার সময় হাতে যে পুটুলি দেখা যাচ্ছিল ছিল, তা বের হওয়ার সময় ছিল না। অন্যজন ছিলেন বোরকা পরা। ধারণা করা হচ্ছে ওই দুজনই শিশু গহীনকে ফেলে যান ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬জুন ২০১৯/মামুন খান/সাজেদ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন