ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শেষের কবিতা ও নূনা আফরোজ

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেষের কবিতা ও নূনা আফরোজ

আমিনুল ইসলাম শান্ত : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘লাবণ্য’। নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্নিগ্ধ একটি মুখ। এ মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছে গল্প। যে গল্প আনন্দ, প্রেমানুভূতি, ভাঙনের বিষাদে ভরা। যে লাবণ্য অনেকটা যুদ্ধ করে নিজেকে দাঁড় করায়, যে সুখের স্বপ্ন বুনে আবার সময় তাকে বেদনার চাদরে মুড়ে দেয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের এ চরিত্রটি অনেক অভিনেত্রী টেলিভিশন ও মঞ্চে রূপায়ন করেছেন। অভিনেত্রীদের এ তালিকায় নূনা আফরোজও রয়েছেন। মঞ্চ ও টেলিভিশন দুটি মাধ্যমেই চরিত্রটি রূপায়ন করেছেন তিনি। 

২০১১ সালে ঢাকার প্রথম সারির নাটকের দল প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে নিয়ে আসে ‘শেষের কবিতা’ নাটকটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন অনন্ত হিরা। নির্দেশনায় রয়েছেন নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোরের প্রতিষ্ঠাতা, নির্দেশক নূনা আফরোজ। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে দর্শকপ্রিয় এই প্রযোজনাটি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন অডিটোরিয়ামে মঞ্চস্থ হবে নাটকটির ২৯তম প্রদর্শনী।

 



নির্দেশক নূনা আফরোজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শেষের কবিতা বহুল পঠিত একটি উপন্যাস। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া উপন্যাসও এটি। সম্ভবত এত কপি অন্য কোনো উপন্যাসের বিক্রি হয়নি। যে মানুষটি তেমন কোনো বই পড়েননি সেও হয়তো এই উপন্যাসটি পড়েছেন। এ রকম একটি উপন্যাস নিয়ে কাজ করে দর্শকদের তৃপ্ত করা অনেক কঠিন। একজন পাঠক তার কল্পনায় ইচ্ছে মতো বিচরণ করতে পারেন, মেলতে পারেন ডানা। সেই পাঠক যখন দর্শক হয়ে আসেন তখন তাকে তৃপ্ত করা সত্যি অনেক কঠিন হয়ে যায়। কারণ বই পড়ে নাটক দেখতে এসে অনেক কিছুই তিনি মেলাতে পারেন না। কারণ বইটি পড়ার সময় পাঠক নিজের মতো করে অনেক কিছু কল্পনা করে থাকেন। যা তিনি মঞ্চের অল্প সময়ে দেখতে পান না। উপন্যাসটি নিয়ে হয়তো একটি টেলিফিল্ম কিংবা খুব ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ তুলনামূলক সহজ কিন্তু ভালোবাসার এতটা টানাপোড়েনের গল্পকে মঞ্চে নাটকীয়ভাবে তুলে ধরা একটু কঠিন। তবে উপন্যাসটি মঞ্চে থিয়েট্রিক্যালি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

‘হয়তো বিষয়টি অনেকে জানেন না, এই নাটকে দুজন লাবণ্য দুজন অমিত রয়েছেন। এটার কারণ হচ্ছে, লাবণ্য এমন এক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিক্ষিত মেয়ে যে, সব কথা মুখে বলেও না। লাবণ্য কিংবা অমিত যেটা ভাবছে তাহলে সেটা কীভাবে মঞ্চে উপস্থাপন করব। নাটকে লাবণ্য যখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে, সেটা আমি অন্য লাবণ্যকে দিয়ে উপস্থাপন করিয়েছি। সেটা কখনো কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে কখনো বা গানের মাধ্যমে। আর অমিত যেটা ভাবছে সেটাও আরেকজন অমিতকে দিয়ে বলিয়েছি। লাবণ্যর মতো ভিন্ন ঘরানার একটি চরিত্র রূপায়ন করে মাত্র তিন চার মিনিটের ব্যবধানে পোশাক পাল্টে কেতকী চরিত্রে মঞ্চে হাজির হয়ে থাকি। আমি নিশ্চিত যে, এতদিন কেউ আমাকে চেনেননি। এছাড়া রামিজ রাজু অমিত করছে, পাশাপাশি মোহনলাল চরিত্রও করছে, অনন্ত অমিত করছে, পাশাপাশি কথক চরিত্র করছে। এরকম নাটকীয় অনেক ব্যাপার নাটকটিতে রয়েছে।’ বলেন, নূনা আফরোজ।

 



উপন্যাসে যে শিলং পাহাড়ের কথা লেখা, নির্দেশক তা নাটকে দেখাতে চাননি। তিনি চেয়েছেন, নাটকের দর্শককে তার কল্পনার মাধ্যমে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে। কল্পনার মাধ্যমে দর্শক যাতে ওই জায়গায় পৌঁছাতে পারেন সেই চেষ্টাটা করেছেন বলেও জানান নির্দেশক।    

তিনি আরো বলেন, “ভারতের মুম্বাই, কলকাতাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শেষের কবিতার যতগুলো প্রদর্শনী করেছি প্রতিবারই আমি খুব ভয়ে থেকেছি। কারণ যে পাঠকগুলো আমার নাটকের দর্শক হয়ে আসবেন তাদের তৃপ্ত করতে পারব কিনা? কিন্তু আমি খুবই ভাগ্যবান যে, প্রতিটা প্রদর্শনীতে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছি। যারাই উপন্যাস নিয়ে মঞ্চে কাজ করেন তারা বরাবরই অভিযোগ শোনেন, ‘উপন্যাসে এটা পড়েছি কিন্তু মঞ্চে এটা আসে নাই।’ আসলে পাঠককে তৃপ্ত করা যায় না, এটাই মূল কথা।”  

নির্দেশনার পাশাপাশি নাটকটির লাবণ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন নূনা আফরোজ। তার অভিনীত এ চরিত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘লাবণ্য চরিত্রটি লাবণ্যময়। যে জীবন যুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়। এই চরিত্রের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, মমতা, দরদ আছে। আর লাবণ্য খুব মাপা একটি চরিত্র। তাই পরিমাপ করে এই চরিত্রে অভিনয় করা খুব কঠিন। ওভার অ্যাক্টিং বা আন্ডার অ্যাক্টিং করা সহজ কিন্তু পরিমিতভাবে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এই চরিত্রে অভিনয় করা কঠিন। কারণ এ চরিত্রে আবেগ, ভালোবাসা সব রয়েছে।’ 

 



কলকাতায় পূর্ব পশ্চিম দেশ বিদেশ নাট্যমেলায় নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রদর্শনীতে দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক, বিভাষ চক্রবর্তী, উষা গাঙ্গুলী। প্রদর্শনী শেষে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক। এটা অনেক বড় পাওয়া বলে জানান নূনা আফরোজ।

নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, রামিজ রাজু ছাড়াও নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করছেন শুভেচ্ছা, ইস্টের সুমী, আউয়াল রেজা, সরোয়ার সৈকত, মাইনুল তাওহীদ, চৈতী, কারিমা, জাহিদ, আশা, রিগ্যান, সীমান্ত, মনির, বিপ্লব, ঊষা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ অক্টোবর ২০১৭/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ