শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই
রাজধানী ঢাকার সহস্রাধিক শপিং কমপ্লেক্সে যথাযথ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের এক অনুসন্ধানে বিপজ্জনক এ চিত্র পাওয়া গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস নিজস্ব অনুসন্ধান থেকে বলেছে, ঢাকা মহানগরীর ১ হাজার ১২৬টি বিপণিবিতানের মধ্যে মাত্র ৪৬টিতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে।
সম্প্রতি গুলশানে ডিসিসি মার্কেট আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর অনুসন্ধান চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, দুই সিটি করপোরেশন ও পুলিশের মালিকানাধীন শপিং কমপ্লেক্সও রয়েছে এই তালিকায়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৬ শতাংশ শপিং কমপ্লেক্সই বিপজ্জনক।
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোন আধুনিক শপিং কমপ্লেক্সে যথাযথভাবে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শপিং কমপ্লেক্সের অবস্থান, ভবনের উচ্চতা এবং ক্রেতা-বিক্রেতা অনুযায়ী, নির্বাপন ব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, উন্নত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার ও নিয়মিত মেরামত, পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণ, প্রশস্ত সিঁড়ি ও বিকল্প জরুরি বহির্গমনের পথ রাখা, অতিরিক্ত লোকসমাগমের স্থানে স্মোক/হিট ডিটেক্টর থাকতে হবে।
শপিং কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বার ও সিঁড়ি থাকতে হবে প্রশস্ত। সিঁড়িঘরে বা যত্রতত্র মালামাল না রেখে আলাদা গুদামে সংরক্ষণ, নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য বিশেষ জরুরি টেলিফোন ব্যবস্থাসহ বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বর দোকানদার ও নিরাপত্তা কর্মীদের অবগত করা, অগ্নি নির্বাপণের প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
দেখা গেছে, অধিকাংশ বিপনীকেন্দে যথাযথভাবে এসব ব্যবস্থা নেই। আবার থাকলেও প্রয়োজনের সময় সংশ্লিষ্টদের অজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার ব্যবহত হয় না। ঢাকা শহরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড থেকে জান-মাল নিরাপদ রাখার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
নিরাপত্তা বিধি না মেনে ইচ্ছেমত যেখানে সেখানে মার্কেট নির্মিত হচ্ছে। সাধারণতঃ বহুতল আবাসিক ভবন, শপিং কমপ্লেক্স, কল-কারখানায় বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসাবে বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিটকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এসব স্থাপনার জন্য বৈদ্যুতিক তার, ফিটিংস, ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার সঠিক মানসম্পন্ন নয়। নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারেও রয়েছে উদাসীনতা।
ফায়ার সার্ভিস যে চিত্র তুলে ধরেছে তা সত্যিই ভয়াবহ। নিত্য যেসব শপিং কমপ্লেক্সে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে সেসব শপিং কমপ্লেক্স নিরাপদ করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই। সামনে গ্রীষ্ম ঋতু, শুষ্ক ও গরমের মৌসুম। এই মৌসুমেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। আমরা চাই না, গুলশানের মত আর কোনো মার্কেট দুর্ঘটনার শিকার এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হোক। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়ের স্বার্থেই মার্কেটগুলোতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আলী নওশের/তৈয়বুর
রাইজিংবিডি.কম