ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শ্রমজীবী মানুষের ইফতার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রমজীবী মানুষের ইফতার

মজিবুর রহমান

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : সংযমের মাস পবিত্র রমজান। এ সময় সংযম তো দূরে থাক উল্টো ভোজন রসিক হয়ে উঠেন সমাজের পুজিঁপতিরা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে অসংখ্য আইটেমে করা হয় বর্ণিল ইফতার পার্টি। ইফতারের বাহারি আয়োজনে সমাজের ভোগবাদী সংস্কৃতির নগ্নতা প্রকাশ পায়। সমাজ সভ্যতার মূল চালিকা শক্তি শ্রমজীবী মানুষ, আমরা কি কখনো জানার চেষ্টা করি তাদের ইফতার আয়োজন কেমন?

ভ্যান চালক মজিবুর রহমান (৪৫)। বাড়ি বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলায়। ৩০ বছর ধরে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় ভ্যান চালান। মানুষের বাসা বদল করার সময় ভারী মালামাল বহন করেন তিনি। ঢাকায় তিনি একাই থাকেন,পরিবার পরিজন থাকে গ্রামের বাড়িতে। কোথায় কিভাবে ইফতার করেন জানতে চাইলে মজিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, খ্যাপ নিয়ে রাস্তায় থাকলে সময়মতো ইফতার করা হয়ে উঠে না। ভিআইপি রোডে ভাড়া নিয়ে গেলে ইফতার করতে সমস্যা হয়। তিনি জানান, ইফতারের সময় অবসর থাকলে ছোলা, মুড়ি দিয়ে ইফতার করেন।

ফার্নিচার মিস্ত্রি আব্দুল মান্নান (৫৬)। বাড়ী রাজশাহীর রায়নগর উপজেলায়। তিনি ৩৭ বছর ধরে ঢাকায় কাঠ মিস্ত্রির কাজ করেন। আব্দুল মান্নান ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করেন ধানমন্ডি একটি ফার্নিচার দোকানে। তিনি চেয়ার, টেবিল, খাটসহ সব ধরনের ঘরোয়া ফার্নিচার তৈরি করেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে। আব্দুল মান্নানের পরিবার থাকে ঢাকার মধু বাজার এলাকায়।

 

 

ইফতার প্রসঙ্গে আব্দুল মান্নান জানান, ইফতার আইটেম ছোলা, মুরি, পেয়াজু মালিকের বাসা থেকে আসে। দোকানের অন্য তিনজন শ্রমিকের সঙ্গে ইফতার করেন তিনি। তিনি জানান, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে ইচ্ছে করে কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা অনেক বছর হয়ে উঠেনি।

দর্জি আব্দুল আউয়াল (৩৮)। বাড়ী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায়। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর এলাকায়। ১৫ হাজার টাকার মাসিক চুক্তিতে কাজ করেন ধানমন্ডির একটি অর্ডারি দোকানে। তিনি তৈরি করেন ব্লাউজ, সেলোয়ার কামিজ, বোরকা। কাজ করেন সকাল ৯টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত। তিনি ২৫ বছর ধরে দর্জি পেশায় যুক্ত।

 

ইফতার কিভাবে করেন জানতে চাইলে আব্দুল আউয়াল রাইজিংবিডিকে জানান, ইফতারের সময় ১২ জন দর্জি এক সঙ্গে ইফতার করেন। ছোলা, মুরি, পেয়াজু, বেগুনি, জিলাপি একসঙ্গে মিশিয়ে ইফতার বানান তারা। মালিক পক্ষ থেকে ইফতারের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ টাকায় ইফতার হয় না, ভালো ইফতারের জন্য প্রত্যেকের পকেট থেকে বাড়তি টাকা যোগ করতে হয় বলে জানান দর্জি আউয়াল। তিনি বলেন, ইফতারের সময় পরিবার পরিজনকে খুব মিস করি, এক সঙ্গে ইফতার করতে পারলে বেশ মজা হতো। 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়