ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ৫ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি

সাইফ বরকতুল্লাহ : মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের ধরতে অভিযান চলছে। এই অভিযানে গত কয়েক দিনে সে দেশে বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- যাদের একটা বড় অংশই বাংলাদেশি। দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার সকাল পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫২ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।

মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম নিউ স্ট্রেইটস টাইমস অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন শহরে একযোগে এ অভিযান চলার কারণে ঘরেই বন্দি হয়ে পড়েছে বৈধ কাগজপত্র না থাকা শ্রমিকরা। যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বৈধকরণ ই-কার্ড প্রক্রিয়া। ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড কর্মসূচির রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ হয় গত ৩০ জুন। তারপর থেকেই অবৈধ শ্রমিকদের গ্রেপ্তারে এ অভিযান শুরু হয়। মালয়েশিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ৬ লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত আবেদন করেছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৬ জন, অর্থাৎ মাত্র ২৩ শতাংশ।

মালয়েশিয়ায় ওই অভিযানের কারণে আতঙ্কে অনেক শ্রমিক আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেক বৈধ শ্রমিকও রয়েছেন। চাকরিদাতারা এখন আশঙ্কা করছেন, আত্মগোপনে যাওয়া এসব শ্রমিক হয়তো অভিযান চলা অবস্থায় আর কাজে ফিরবেন না। এতে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে মালয়েশিয়ার নির্মাণশিল্প। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সংকটে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে ধরপাকড় চলছে তাতে কাগজপত্র না থাকা শ্রমিকরা এ যাত্রায় আর পার পাবেন না। নিজ দেশে তাদের ফিরতেই হবে। তবে এ ব্যাপারে সময় বাড়াতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরামর্শ দেন তারা।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা তাকিয়ে আছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের দিকে। আমরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছি গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের সুযোগ দিতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সরকার।

মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযানে গ্রেপ্তার  হওয়া বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিতে আমরা মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি, গত মাসে রোজা ছিল এবং বৈধ হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় অর্থ লাগে, সেটি অনেকের কাছে নেই। সে কারণে তাদের বৈধ হওয়ার মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানোর কথা বলেছি আমরা। এখানে বাংলাদেশি ছাড়াও অন্য দেশের নাগরিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস সেসব দেশের দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে।’ [সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন, জুলাই ০৪, ২০১৭]

আমরা আশা করবো এ উদ্যোগ দ্রুত সফল হোক। কারণ প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বিদেশে কোনো প্রবাসী শ্রমিক বিপাকে পড়লে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দূতাবাসের কর্তব্য। এটা ঠিক, কারও ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তা সময়মতো নবায়নের দায়িত্ব প্রথমত ওই ব্যক্তির নিজের। কেউ বিদেশে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থান করলে সেদেশে তিনি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত হবেন, এটি সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিদেশে অবস্থানকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকেই বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের সমস্যার রেশ কাটতে না কাটতেই গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে- তুরস্কে বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি আটকা পড়েছে। তাদের নিয়ে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

অবৈধভাবে যেসব বাংলাদেশি তুরস্ক হয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, এ ধরনের কাজ না করতে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। তিনি জানিয়েছেন, তুরস্ক থেকে এভাবে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন প্রায় দু হাজার বাংলাদেশি। এদের নিয়ে সেখানে একটি মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ইরান, লেবানন এবং জর্ডানে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশিদের অনেকে ইউরোপে অনুপ্রবেশের আশায় তুরস্কে আসছেন। এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এদের অনেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার সময় মারা যাচ্ছেন। অনেকে তুরস্কে মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। [সূত্র : বিবিসি বাংলা, ৪-৬-২০১৭]

দেশের অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করছে প্রবাসী আয়। দেশের আর্থ-সামাজিক বা সামগ্রিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায়সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত। আমরা চাইব এ সংকটে আমাদের দূতাবাসগুলো অবিলম্বে শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়াবে।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৭/সাইফ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়