‘সন্তানরা যেন অফিসার হতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই তহবিল’
ছবি : আসাদ আল মাহমুদ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য সরকার উদ্যোগী হয়ে কল্যাণ ফান্ড গঠন করেছে। শ্রমজীবী মানুষের সন্তানরা যেন শ্রমিক না হয়, তারা যেন অফিসার হতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই তহবিল।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে পোশাকখাতে কর্মরত শ্রমিকদের চিকিৎসা ভাতা ও তাদের সন্তানদের মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে এটা গঠিত। মালিকদের আয়ের উপর নির্ভর করে এটা বাড়তে থাকবে। শ্রমিক সঠিকভাবে শ্রম দিলে মালিকরা উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে লাভ করতে পারলে এই তহবিল আরো বড় হবে।’
পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা বিভিন্ন বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা মালিকের কল্যাণ চায় না শ্রমিকেরও কল্যাণও চায় না। তারা শুধু শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে তাদের মাঝে সংঘাত বাড়ায়। কোনো কারখানা বন্ধ থাকলে কিংবা ভাংচুর করা হলে মূল ক্ষতি হয় শ্রমিকদের, মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন পরে।’
অনুষ্ঠানে পোশাক কারখানায় শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সংকট কাটাতে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ২৮০টি সিক (খারাপ অবস্থানে) ফ্যাক্টরি আছে তাদের জন্য যেন একজিট পলিসি দেওয়া হয়। ৪৪ লাখ শ্রমিক আমাদের ডাটাবেইজে আছে। তাদের স্বার্থে আমরা কাজ করছি।’
অনুষ্ঠানে মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রানী খান অভিযোগ করেন, ‘শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড গঠন করা হলেও তা শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে অনেক দেরিতে। ফলে তা সঠিকভাবে শ্রমিকের কল্যাণে আসে না।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চা পেটে নিয়ে আবেদন করেন শ্রমিকরা, সেই বাচ্চা অনেক বড় হয়ে গেলেও টাকা হাতে আসে না। অনেকে অসুস্থ্য হয়ে আবার সুস্থ্য হয়ে উঠেন। কিন্তু টাকা পান তার পরে।’
শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনী ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, ‘যে শ্রমিকরা নানা রোগে ভুগছে তাদের যেন দেখা হয়। এ ফান্ডের মাধ্যমে শ্রমিদের ভাগ্য উন্নয়েনে চিকিৎসা ভাতা, মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। তবে ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল- এটা যেন না হয়। দ্রুত সময়ে শ্রমিকদের আবেদনে যেন সারা দেওয়া হয়।’
বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিকেএমইএ’র সহ সভাপতি মনসুর আহমেদ, বিজেএমইএ’র সহ সভাপতি মোহাম্মদ নাসির, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম উম্মুল হাছনা।
অনুষ্ঠানে ৯৭ জন শ্রমিককে চিকিৎসা বাবদ ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ৮২ জন মেধাবী সন্তানকে ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে। পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় থেকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হারে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে এই তহবিল কার্যকর হয়ে আসছে।
ইতোমধ্যে দুই হাজার ১৯৯ জনকে বীমাদাবি বাবদ ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে গত বছর নভেম্বরে চিকিৎসা বাবদ ৫৭ জনকে ২৬ লাখ ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। শিক্ষাবৃত্তি বাবাদ ৫৮ জনকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ এপ্রিল ২০১৯/নাসির/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন