ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সন্তানের উপর প্রত্যাশার চাপ

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সন্তানের উপর প্রত্যাশার চাপ

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : স্কুলের ফলাফল বের হওয়ার পর আরিশের বাসায় শুরু হয়ে গেল তুলকালাম কান্ড। সব বিষয়ে সে ভালো নম্বর পেয়েছে কিন্তু ক্লাসে হয়েছে চতুর্থ। আর তাই নিয়ে বাবা-মা খুব অখুশি। সারাক্ষণ বকেই চলেছেন আরিশকে। টিভি দেখা বন্ধের হুকুম জারি হয়েছে। বেচারা বুঝতেই পারছে না ওর দোষটা কোথায়।

জারিফের বাসায়ও একইরকম ঘটনা। সে খুব ভালো গান গায়। বরাবরই বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। কিন্তু এবার হয়ে গেছে দ্বিতীয়। আর সেটা নিয়ে বাবা-মায়ের আক্ষেপের শেষ নেই। তাদের কথা, সে খুব ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে, ঠিকঠাক রেওয়াজ করে না। জারিফ কিছুতেই বাবা-মাকে বোঝাতে পারে না, ও গানটা ভালোই করেছিল কিন্তু আবির ওর থেকে আরো ভালো গেয়েছে। তাই ও প্রথম হতে পারেনি।

বেশিরভাগ পরিবারেই ছবিটা অনেকটা এরকম। বাবা-মায়ের প্রত্যাশার এই চাপ শিশুমনে যে কতটা প্রভাব ফেলে তা অনেকেই বোঝেন না। প্রতিযোগিতার দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে তাদের শৈশব, কৈশোরের আনন্দই হারিয়ে যায়।

আবার এটাও সত্যি যে, প্রতিযোগিতা শিশুদের লড়াই করার শিক্ষা দেয়। সন্তানের সাফল্য এবং উন্নতি সব বা-মা চান। কিন্তু সবার আগে বুঝতে হবে নিজের সন্তানকেই। সব শিশুর মানসিকতা একরকম হয় না। সবাই এই চাপ সমানভাবে সামলাতেও পারে না। সন্তানকে অলরাউন্ডার বানানোর তাগিদে, বাবা-মায়েরা এমন চাপ সৃষ্টি করে ফেলেন যে শিশুরা ভুগতে থাকে মানসিক অবসাদে। নিজের উপর হারিয়ে ফেলে আস্থা। শিশুর উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করেও তাকে লড়াই করার জন্য তৈরি করা যায়। শুধু প্রয়োজন হয় সঠিক সমন্বয়ের।

* সন্তানকে বোঝান প্রতিযোগিতা মানেই শুধু জিতে যাওয়া নয়। আসল উদ্দেশ্য কিছু শিখতে পারা। তাই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সন্তানকে উৎসাহ দিন কিন্তু ফলাফলের জন্য উতলা হবেন না। ওর চেষ্টায় যেন কোনো ত্রুটি না থাকে। ও যেটুকু পারে, যতটা পারে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট হতে শেখান। না পারাটাও যে জীবনের অঙ্গ তা সন্তানকে বুঝতে সাহায্য করুন।

* সন্তানের যে কাজটা করতে ভালো লাগে, তাই করতে দিন। সবাই ক্লাসে প্রথম হতে পারে না। ওর প্রতিভা থাকতে পারে অন্য কিছুতে। ও যদি ভালো ফুটবল খেলে তো ওকে অযথা ক্রিকেট খেলতে চাপ দেবেন না। বরং যা সে ভালো পারে তাতে উৎসাহ দিন।

* প্রত্যেক শিশুর সহজাত কিছু গুণ থাকে, তা চেনার চেষ্টা করুন। সন্তানের পজেটিভ এনার্জি যাতে ঠিকভাবে চালিত হয় তা দেখার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। আর সেইজন্য শিশুর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান।

* কথায় কথায় সন্তানকে তার সমবয়সীদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। ওকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিন। পাশের বাসার ছেলেটি আঁকা শিখতে যায় কিংবা সন্তানের কাছের বন্ধু গান শেখে বলে আপনার সন্তানকেও যে তাই করতে হবে, এমন চিন্তা করবেন না। বরং ওর পছন্দের বিষয় জানার চেষ্টা করুন। আর সেটার চর্চা করতে ওকে সাহায্য করুন।

* শিশুকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের গুরুত্ব অবশ্যই বোঝাবেন। কিন্তু সে যদি অংশ নিতে না চায়, তাহলে তাকে জোর করবেন না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়